পাবনা সংবাদদাতাঃ
শ্রাবণ মাস শুরু হলেও পাবনায় বর্ষার লেশমাত্র নেই। তেমন বৃষ্টিও নেই বেশ কিছু দিন। দিনের মধ্য ভাগে প্রায়শই তাপমাত্রা থাকছে ৩৬ ডিগ্রীর কাছাকাছি। বিল খালে পানি নেই। বিঘ্নিত হচ্ছে কৃষি কাজ। খেতের ফসল পোড়ার উপক্রম।
তীব্র তাপ দাহের ভয়ে দিনের বেলা খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ভয় পাচ্ছে রাস্তায় বোরোতে। সব মিলিয়ে গরমে পাবনার জনজীবনে স্বস্তি নেই। অতিষ্ঠ হয়ে পরেছেন মানুষ। কৃষি নির্ভর এ এলাকায় প্রয়োজনীয় পানির অভাবে কৃষক হাহাকার করছেন।
বর্ষা মৌসুমে এ এলাকার অন্যতম প্রধান ফসল ধান ও পাট। এবার বর্ষার শুরুর দিকে নদ নদীর পানি বাড়ায় এবং উজানের ঢলে পাবনার নিম্নাঞ্চলে আংশিক এলাকার ধান, পাট প্রথম দফায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
কৃষকরা তখন পানির মধ্যে অতিদ্রুত অপরিণত পাট কাটতে শুরু করেন। পাট কেটে পানিতে জাগ দেওয়ার পর ক্রমাগত পানি কমতে থাকায় বিলের অধিকাংশ স্থান শুকিয়ে যায়। মানুষের পাটের জাগ শুকনোয় পরে যায়। পাটের আঁশের গুনগত মান নষ্ট হয়ে যায়।
পাশাপাশি পাট এখন পরিণত বয়স্ক হওয়ায় কৃষকরা এখন পাট কাটছেন কিন্তু পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না। অনেককে ভ্যান, লসিমন, করিমন গাড়ি যোগে দূর দূরান্তে পাট পরিবহন করে নিয়ে গিয়ে জাগ দিতে দেখা যাচ্ছে।
পাবনার বিভিন্ন উপজেলায় যে সকল জাতের আমন ধান চাষ হয় সেসব ধানের চাষের জন্য পানি অপরিহার্য। কিন্তু ধান খেতে পানি না থাকায় ধান গাছ গুলো বিবর্ণ হয়ে মরার উপক্রম হয়েছে। উঁচু এলাকার কৃষকেরা পাট কেটে অনেক জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করেন। বৃষ্টি না হওয়ায় তারা রোপা আমন ধানের চাষ করতে পারছেন না। যারা ইতিমধ্যে সেঁচ দিয়ে আমন চাষ করেছেন সেসব জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের সুইগ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ জানান, এ এলাকার বিলগুলোতে এখনো বর্ষার পানি প্রবেশ করেনি। বোরো ধান কাটার পর কিছু কৃষক আমন ধানের চারা রোপণ করলেও তীব্র তাপদাহে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বৃষ্টি না হওয়ায় রোপা আমন ধান রোপণ করতে পারছেন না এ এলাকার কৃষক।
উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের চরসেনগ্রামের কৃষক বুরুজ হোসেন জানান, কয়েকদিন পূর্বে পাট কেটে পঁচানোর জন্য পানিতে কয়েকটি পাটের জাগ দিয়েছিলাম। বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় শুকনোয় পরে যায় পাটের জাগ গুলো। পাটের আশ যেন ভাল থাকে সেজন্য বাধ্য হয়ে পাটের জাগ গুলোর চারপাশে মাটির বাঁধ দিয়ে অগভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করি। এমন বিড়ম্বনায় আগে কখনো পরিনি।
দোদারিয়া গ্রামের সাজেদুর রহমান জানান, এবার দশ কাঠা জমিতে পাট বুনেছিলাম। পাট কেটে জাগ দেওয়ার জন্য ভ্যানে করে চার কিলোমিটার দূরে ওয়াপদা বাঁধের পাশের সাইট খালে নিয়ে যাচ্ছি। পানির অভাবে কষ্টের শেষ নেই।
বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও ঘটছে উল্টোটা। বেশ কিছু দিন যাবত কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় এবং অতিরিক্ত গরমের কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে। অনেকে অসুস্থ্য হয়ে পরছেন।
কৃষি খাতে পানি স্বল্পতার বিরুপ প্রভাব প্রসঙ্গে চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এ মাসুম বিল্লাহ জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৮ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। পাটের দাম ও ফলন বেশ ভাল।
পাট পঁচিয়ে আশ ছড়ানোর জন্য যে পরিমান পানির দরকার তা নেই। বেশ কিছু দিন যাবত অনাবৃষ্টি ও নদী নালা খাল বিলসহ অন্যান্য জলাশয়ের পানি কমে যাওয়ায় পাট চাষীরা সমস্যায় পরেছেন। এর ফলে আমন আবাদও বিঘ্নিত হচ্ছে।