অনলাইন ডেস্কঃ নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। তার নাম নাহিদ হাসান (১৮)। তিনি একজন কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা কলেজের সামনে সংঘর্ষ চলাকালে তিনি আহত হন।
আজ রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া।
তিনি জানান, নাহিদ হাসানের মাথায় ও পায়ে আঘাতের গুরুতর চিহ্ন রয়েছে। তার বাসা রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে। তিনি এলিফ্যান্ট রোডের একটি কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি করতেন। অফিসে যাওয়ার পথে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে তিনি আহত হন।
ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তৌফিক এলাহী সমকালকে জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় এক শিক্ষার্থীসহ চারজন ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে নাহিদ মারা গেছেন। মোরসালিন নামে একজন দোকান কর্মচারীর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। বাকি দুইজন ভালো আছেন। তারা হলেন- ইয়াসিন (২০) এবং ঢাকা কলেজের দর্শন বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র কানন চৌধুরী (২৩)।
নিহতের নাহিদের বাবা নাদিম হাসান জানান, নাহিদ সকালে কামরাঙ্গীরচর দেওয়ান বাড়ি এলাকার বাসা থেকে বাটা সিগনাল তার কুরিয়ার সার্ভিস অফিসের যাওয়ার জন্য বের হন। পরে নাহিদ হাসপাতালে ভর্তি বলে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারেন।
শুভ নামে একজন দুপুরের দিকে আহত অবস্থায় নাহিদকে হাসপাতালে আনেন। তিনি জানান, নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের সময় আহত অবস্থায় নাহিদ রাস্তায় পড়েছিলেন।
আইসিইউতে মুমূর্ষ অবস্থায় চিকিৎসাধীন মোরসালিলেন বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায়। বর্তমানে তিনি কামরাঙ্গীরচর পশ্চিম রসুলপুর এলাকায় থাকেন। তার ভাই নূর মোহাম্মদ জানান, নিউমার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেটের একটি দোকানে মোরসালিন কাজ করেন।
নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো ঢাকা কলেজ এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অবস্থান নিয়ে আছেন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা।
এ রিপোর্ট লেখার সময় (রাত ১০টা ১৫ মিনিট) ঘটনাস্থল থেকে সমকালের প্রতিবেদক জাকারিয়া ইবনে ইউসূফ জানান, সন্ধ্যার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থান নিয়ে আছেন। অপরদিকে ব্যবসায়ীরা অবস্থান নিয়েছেন নিউমার্কেট এলাকার ওভারব্রিজের নিচে।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি, বিভিন্ন সময় কেনাকাটাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়েছে। অনেক সময় দোকানের কর্মচারীরা ইডেন বা অন্য কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করেন। এ ছাড়া সন্ধ্যায় ইডেনের ছাত্রীদের মিছিলেও কটূক্তি করা হয়েছে।
অপরদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর চালাচ্ছেন বলে আমরা অবস্থান নিয়েছি। দুই পক্ষ সড়কে অবস্থান নেওয়ার কারণে বন্ধ হয়েছে যান চলাচল।
এর আগে সোমবার রাত ১২টার দিকে নিউমার্কেট এলাকায় কথা কাটাকাটির জেরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় তখন দুই শিক্ষার্থী ও দুই ব্যবসায়ী আহত হন। আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও।
এরপর আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে আবারও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের কর্মীরা সংঘর্ষে জড়ান।
সংঘর্ষের কারণে ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাস বন্ধের ঘোষণা দেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ টি এম মইনুল হোসেন। ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা অধ্যক্ষকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে ছাত্রাবাস বন্ধে প্রশাসনের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন শিক্ষার্থীরা।
সূত্রঃ সমকাল