নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামীলীগ নিয়ে ভাঙ্গা গড়ার খেলা চলছেই । এক বছরে চার কমিটি অনুমোদন করেছে কুমিল্লা ( দঃ) আওয়ামীলীগ । জানা যায়, আহবায়ক প্রফেসর জয়নাল আবেদীন নেতৃত্বাধীন কমিটির আয়োজনে ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর নাঙ্গলকোট এ আর হাইস্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মুজিবুল হক এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা সুজিত রায় নন্দী,ইঞ্জিনিয়ার সবুর খাঁন প্রমূখ । আর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব থেকে সম্মেলনে ভার্চুয়ালে যোগ দেন আহমমুস্তফা কামাল । তিনি ভার্চুয়াল বক্তব্যে বলেছেন স্থানীয় নেতাদের সাথে পরামর্শ করে কমিটি করবেন। নেতাকর্মীদের অভিযোগ তিনি কারো সাথে পরামর্শ না করে যুদ্ধাপরাধীর সন্তান উপজেলা চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন কালু’কে সভাপতি ও উপজেলা যুবলীগ সেক্রেটারী ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ ইউসুফ ভূঁইয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে ১২৭ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা আওয়ামীলীগ কমিটি গঠন করে । কমিটির মেয়াদ
চার মাস না যেতেই চলতি বছরের ২৬মার্চ কমিটি বিলুপ্ত করে অধ্যক্ষ আবু ইউসুফকে সভাপতি ও আবু বকর ছিদ্দিক আবুকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটির অনুমোদন দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক মুজিব।
কমিটি পাবার পর বঙ্গবন্ধু ‘র মাজার জেয়ারত করে তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু নতুন কমিট ‘র কার্যক্রমের সাথে বাতিল হওয়া কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন কালু ও সাধারণ সম্পাদক ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ ভূঁইয়া অংশ গ্রহণ করে না। বরং কমিটির কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি আবারো আলোচনায়। ২ নভেম্বর উভয় পক্ষকে নিয়ে চট্রগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি,সংসদ ভবনে তাঁর কার্যালয়ে আলোচনায় বসেন। উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লা দক্ষিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক।
আলোচনায় বসলেও উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে পূর্বের কমিটি বাতিল ও নতুন কোন কমিটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু এরইমধ্যে রফিকুল হোসেনকে আহবায়ক ও অধ্যক্ষ সাদেক হোসেন ভূইয়া সহ ছয়জনকে যুগ্ম-আহবায়ক করে ১০১ সদস্যের নতুন একটি কমিটির তালিকা ৫নভেম্বর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ভূইয়ার ফেসবুক আইডিতে থেকে প্রকাশ করা হয়। তালিকায় উল্লেখ আছে বিগত ১১ ডিসেম্বর ২০২২ ও ২৬ মার্চ ২০২৩ এর উভয় কমিটি এবং তাদের গঠিত ইউনিয়ন কমিটিগুলো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
এ বিষয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ মোঃ শহীদুল আলম পাটোয়ারী বলেন, জাতীয় সংসদের হুইপ জনাব আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, মহোদয়ের নেতৃত্বে যে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে,সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে যদিকোনো সমস্যা থাকেসেটা নিরসনের উপায় বের করার জন্য ৭ (সাত) সদস্যের একটি পর্যালোচনা কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন বর্তমান সভাপতি অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবু বকর ছিদ্দিক আবু,,সাবেক সভাপতি রফিকুল হোসেন, সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, উপজেলা চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন কালু,ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ ভূঁইয়া ও প্রফেসর সাদেক হোসেন ভূঁইয়া । সদস্যরা পর্যালোচনা করে সূরাহার একটি রিপোর্ট তৈরী করে হুইপ জনাব আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি মহোদয়ের নিকট পেশ করবেন। পরে তিনি তাহা সাংবিধনিক নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দেখিয়ে গাইড লাইন নিয়ে সূরাহা করে দিবেন।তিনি আরো বলেন, আমি ফেস বুকে আহবায়ক কমিটির তালিকা দেখে জনাব হুইপ স্বপন ভাইকেতার হোয়াটস আ্যপ নাম্বারে ম্যাসেজ পাঠালে তিনি ফিরতে ম্যাসেজে জানানকমিটি ভাঙ্গা বা আহবায়ক কমিটি করার বিষয়ে তিনি কিছুই বলেন নি। তিনি সভাকে যাহা বলেছেন তাহাই সত্য। এখন কেহ যদি আমার দোহাই দিয়ে কমিটি বাতিল করে আহবায়ক কমিটি করে সেটা প্রতারণা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, আমরা কমিটির জন্য মাননীয় অর্থ মন্ত্রীআহমমুস্তফা কামালের কাছে যাই নি। তিনি আমাদের ডেকে বলেছেন, সামসুদ্দিনকালু উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউসুফ যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। সকল ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দু এক জায়গায় হয়ে যায় । এছাড়া কালু ইউপি চেয়ারম্যান মনোনয়ন বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। ইউসুফ যুবলীগে থাকবে । আমি তাদের সভাপতি ও সেক্রেটারী করে ভুল করেছি । তিনি আরো বলেন, আমার অসুস্থতার দরুন তারা প্রতারণা করে আমার স্বাক্ষর নিয়ে গেছেন। তাই তিনি এ কমিটি রাখবেন না । সিনিয়র নেতাদেরকে গঠনতন্ত্র মোতাবেক একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন । সিনিয়র নেতারা সকল নেতাকর্মীদের উপস্থিত করে সর্বত্র গ্রহণযোগ্য একটি কমিটি গঠন করে । দীর্ঘ পর্যালোচনা শেষে আমাদের কমিটি সভাপতির দায়িত্ব থেকে তিনি এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে মজিবুল হক এমপি স্বাক্ষর করে অনুমোদন করেন। এখন কোনও কারণ ছাড়া কমিটি বাতিল যদি আহবায়ক করে থাকেন তা হবে দুঃখজনক ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ বলেন, নতুন কমিটি সম্পর্কে আমার কোন তথ্য জানা নেই। তবে পূর্বের কমিটি বাতিলের কোন চিঠি আমি পাই নি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক মুজিবকে মুঠোফোনে কল করলে তিনি এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয় নি। বিষয়টি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জানে,উনাকে জিজ্ঞেস করুন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
উল্লেখ্য, এ জেলাধীন ৯টি উপজেলা শাখা রয়েছে । এরমধ্যে নাঙ্গলকোট উপজেলা শাখা নিয়ে এই ভাঙ্গা গড়ার খেলা চলছেই চলছে । উপজেলাটি অর্থমন্ত্রীআ হ ম মুস্তফা কামালের নির্বাচনি এলাকার অংশ। নেতাকর্মীদের অভিযোগ তিনি এলাকায় আসেন না এবং নেতাকর্মীদের সাথে সাক্ষাতও দেন না। তিনি ডাইমেনসিয়া রোগে ভোগছেন কোনও কিছুই মনে রাখতে পারেন না। সম্প্রতি কমিটি ভাঙ্গা গড়া এনিয়ে সর্ব মহলে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা।