গোলাম রাব্বানী, নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁয় গত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আক্রান্তদের মধ্য শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি। আর্দ্রতাপূর্ণ বাতাস বিরাজ, জলবায়ু পরিবর্তন ও অতিরিক্ত উষ্ণতায় ডায়রিয়া বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারন বলছেন চিসিৎকরা। নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য মতে ধারণক্ষমতার চার পাঁচ গুণেরও বেশি রোগী ভর্তি আছেন। বেড খালি না থাকায় অনেক রোগী মেঝেতেই সেবা নিচ্ছেন।
জানা যায়, নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশু, মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ড মিলে মোট ৯১ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্য শিশু ওয়ার্ডে ২৪ জন, মহিলা ওয়ার্ডে ২৬ জন এবং পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ৪০ জন। গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে ডেঙ্গু ৮ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হয়ে নতুন করে ভর্তি ৩৮ জন। শিশু ও পুরুষ ওয়ার্ডের ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পুরুষ ওয়ার্ড ভর্তি হয়েছেন সদর উপজলা খাস নওগাঁর মুরাদ হোসেন (৪০), তার মা মমেনা জানান, আমার ছেলে বিশেষ কাছে ঢাকায় যান, কাজ বিষয়ে সেখানে বেশকিছু দিন থাকার পর নওগাঁয় ফিরে আসেন তারপর থেকে গায়ে জ্বর গাঁ কাঁপনি বমি বমি ভাব।পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বেলা ১২ টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। গত কয়েকদিন থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। তবে আগের চেয়ে এখন একটু সুস্থ।
মহিলা ওয়ার্ড ভর্তি হয়েছেন সদর উপজলা মোকরামপুর এলাকার বাসিন্দা সাবিনা ইয়াসমিন (৩৫) তার স্বামী মোশাররফ হোসেন জানান, হঠাৎ করে গত রোববার সকাল থেকে আমার স্ত্রী’র পাতলা পায়খানা হচ্ছিলো। পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সকালে দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। গত দু’দিন থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। বেডে না পেয়ে মেঝেতে স্ত্রী নিয়ে আছি। তবে আগের চেয়ে এখন একটু সুস্থ।
মহাদেবপুর উপজেলার উত্তর গ্রামের বাসিন্দা করিম ইসলাম ( ৫২) বলেন, সোমবার দুপুরে খাবার খাওয়ার পর থেকেই পাতলাপায়খানা আর বামি হচ্ছিলো পরে সন্ধ্যা ৬টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখন কিছুটা সুস্থতা অনুভব করছি।
শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া ৭বছরের শিশু আফরিন বাবা আয়নাল হোসেন , রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে আমার ছেলের পেটে সমস্যা হয়। বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। তার পর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করায়। হাসপাতালে এতো রোগী যার কারনে কোন বেড না পাওয়ায় মেঝেতেই চিকিৎসা নিত হচ্ছে।
হাসপাতালের দায়িত্বরত নার্স ইনচার্জ ফরহানা আক্তার বলেন, গত দুই-তিন দিন ধরে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বড়েছে। রোগীদের সামলাতে গিয়ে নিজেদের অবস্থ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে যে সব শিশু ভর্তি হয়েছে তাদের বেশির ভাগই খাবার এর সমস্যার কারণে অসুস্থ হয়েছে বলে স্বজনরা বলছেন।
তিনি আরোও বলেন, ডেঙ্গু ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশু, মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ড মিলে মোট ৯১ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্য শিশু ওয়ার্ডে ২৪জন, মহিলা ওয়ার্ডে ২১জন এবং পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ৫৬জন।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. আশিষ কুমার সরকার বলেন, নওগাঁয় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। ডায়রিয়া হলে প্যাকেট স্যালাইন ও অন্যান্য তরল খাবার যেমন ডাবের পানি, চিড়ার পানি ও ডালের পানি, ভাতর মাড়, চালের গুঁড়ার জাউ খাবার খাওয়ান যতটা পারেন। এছাড়া ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুকে মায়ের দুধসহ অন্যান্য খাবার বারবার খেতে দিতে হবে। ডায়রিয়ার মাত্রা বেশি হলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতাল নিতে হবে অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।