নওগাঁর বাক প্রতিবন্ধী রাব্বানী এখন আর্ট কলেজের মেধাবী ছাত্র

আরো বিশেষ প্রতিবেদন বিশেষ রচনা বলি রাজশাহী সারাদেশ
শেয়ার করুন...

আব্দুল মজিদ মল্লিক, নওগাঁ থেকেঃ
জন্ম থেকেই কথা বলতে ও শুনতে না পারা গোলাম রব্বানী ইশারা অঙ্গি ভঙ্গিতে চলে তার খাওয়া দাওয়া, চলাফেরা ও লেখাপড়া। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বাক প্রতিবন্ধী রাব্বানী এখন আর্ট কলেজের মেধাবী ছাত্র পরিবারের বোঝা না হয়ে নিজেই কিছু করতে চান। অন্তরে অদম্য ইচ্ছে শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রাব্বানী, সমাজের বোঝা নয় বরং সমাজের জন্য মানুষের জন্য কিছু করতে চান সে।

চিত্রশিল্পী গোলাম রাব্বানী, কখনো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কখনো মা-ছেলে আবার কখনো বা খেয়াপারাপার দেওয়ার দৃশ্য, আবহমান গ্রাম বাংলার দৃশ্য ফুটিয়ে তুলছেন তার রংতুলির আঁচড়ে। রং তুলির মাধ্যমই যেন তার মনের ভাষার বহি প্রকাশ পড়াশোনা করছেন রাজশাহী আর্ট কলেজের ড্রয়িং এন্ড পেইন্টিং ডিপার্টমেন্টে। তার সহপাঠিরা শিক্ষকদের কথা শুনে এবং দেখে আয়ত্ব করলেও গোলাম রাব্বানী শুধুমাত্র দেখেই আয়ত্ব করেন। কারণ এই চিত্রশিল্পী বাকপ্রতিবন্ধী। জন্ম থেকেই শুনতে এবং বলতে পারেন না তিনি। ইতোমধ্যে তিনি ছবি আঁকিয়ে উপজেলা জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে পেয়েছে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা স্মারক ও সনদ পত্র।

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার মহেশপুর গ্রামের সাইদুর রহমান ও সেলিনা বেগমের ৩য় সন্তান রাব্বানী। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হওয়ায় গোলাম রাব্বানীকে তার বাবা-মা ছোটবেলাতে ভর্তি করেছিলেন রাজশাহীর হাইকেয়ার স্কুলে। অক্ষর চেনা, লেখা, কথাবলা চেষ্টার দুইবছরের এই কোর্সটি একবছরেই আয়ত্ব করে ফেলেছিলেন তিনি। এর পর পিতা ছাইদুর রহমান খান আবারো জন্মস্থান নওগাঁতে চলে যান। মহেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫, বামইল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫ এবং মান্দা ভোকেশনাল থেকে এসএসসি পাস, করেন এই চিত্রশিল্পী। পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী আর্ট কলেজে ভর্তি হন। আর্ট কলেজে এইচএসসি ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে এখন আর্ট কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়া শুনা করছেন।
এইচ এসসি পাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন ছিল কিন্তু বয়সের কারনে সেই সপ্ন পুরোন হয়নি তার। প্রতিবন্ধী হলেও আর ১০ টি শিক্ষার্থীর চেয়ে বরাবরই তার রেজাল্ট ভাল।
শুধু একাডেমিক জ্ঞানই নয় সে একবার যেটা দেখেন তা আয়ত্ত করে ফেলেন মুহূর্তে। বাজার থেকে পার্টস নিয়ে মোটরসাইকেল সাজাতে পারেন, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিও সারাতে পারেন। মোটরসাইকেল চালাতে পারেন। ভাল বাইকার হিসাবে সে নজিপুর বাইক রাইডারস এর সদস্য্য পদ লাভ করেন।

গোলাম রাব্বানী ইশারা ভাষায় জানান দেশের কল্যানে কাজ করতে চাওয়ার ইচ্ছেপ্রকাশ করেন। তিনি পরিবারের বোঝা না হয়ে পরিবারের হাল ধরতে চান।

রাব্বানীর পিতা সাইদুর রহমান বলেন আমি কৃষক মানুষ বাড়ীভিট ছাড়া নিজের জমিজমা নেই ‘ ৪ ছেলে মেয়ে আমরা মরার পর সে যেন কারো কাছে অবহেলিত না হয়। ছোট থেকে তাকে অনেক কষ্টে বড় করেছি এখন তার সরকারি কোন কর্ম হলে আমরা নিশ্চিন্ত হতাম।
তার মা সেলিনা বেগম বলেন জন্মের পর হতে মানুষের অনেক কটু কথা শুনেছি , অনেক কষ্টে তাকে বড় করে তুলেছি। ছেলেটার কোন একটা গতি দেখে যেতে পারলে আমি মরেও শান্তি পেতাম।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *