অনলাইন ডেস্কঃ দেশে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে দৈনিক মৃত্যুতে ফের রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৫৩ জন মারা গেছেন। মহামারি শুরুর পর এক দিনে এত মৃত্যু দেখেনি দেশ। এর আগে বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ ১৪৩ জন মারা যান। গত শনিবার ১৩৪ ও শুক্রবার ১৩২ জনের মৃত্যু হয়। ফলে টানা আট দিন ধরে শতকের উপরে আছে দৈনিক মৃত্যু। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই দেশে গতকাল রোববার করোনায় মোট প্রাণহানি ১৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল পর্যন্ত মারা গেছেন ১৫ হাজার ৬৫ জন।
গত ২৬ জুন করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা পেরিয়েছিল ১৪ হাজার। ভাইরাসটির ডেলটা ধরনের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে মাত্র আট দিনেই এক হাজার রোগী মারা গেছেন। এ ছাড়া এক দিনের ব্যবধানে ফের আট হাজার পেরিয়েছে দৈনিক শনাক্ত। গতকাল সারাদেশের সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা করে আট হাজার ৬৬১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর আগে টানা তিন দিন আট হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের পর গত শনিবার শনাক্ত নেমে এসেছিল ছয় হাজারের ঘরে। গত শনিবার ছয় হাজার ২১৪ জন, শুক্রবার আট হাজার ৪৮৩ এবং বৃহস্পতিবার আট হাজার ৩০১ জন শনাক্ত হয়েছিলেন। দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগী পাওয়া গেছে ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৯১৭ জন। এর বিপরীতে এক দিনে সুস্থ হয়ে উঠেছেন সাড়ে চার হাজারেরও বেশি রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় চার হাজার ৬৯৮ জন সুস্থতার তালিকায় এসেছেন। গত শনিবার তিন হাজার ৭৭৭ রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার খবর পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত আট লাখ ৩৩ হাজার ৮৯৭ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ঢাকা মহানগরে পাওয়া গেছে দেশের মোট শনাক্তের ৩৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। মহানগরীতে প্রায় ১৩ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে দুই হাজার ৯৪৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গত এক দিনে আগের মতোই বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন ঢাকায় চার হাজার ২০৭ জন। এই সংখ্যাটি আগের দিনের তুলনায় প্রায় এক হাজার বেশি। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ। গত শনিবার এই বিভাগে ২৮ শতাংশ হারে রোগী পাওয়া যায়। গতকাল সারাদেশে যতসংখ্যক রোগী পাওয়া গেছে, এর মধ্যে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ মিলেছে শুধু ঢাকা বিভাগেই। নমুনা পরীক্ষার দিক থেকেও এগিয়ে আছে এই বিভাগ। গতকালের মোট পরীক্ষার ৫৪ দশমিক ১০ শতাংশ পরীক্ষাই হয়েছে ঢাকায়।
চট্টগ্রাম ছাড়া অন্য সব বিভাগেই বেড়েছে আগের দিনের তুলনায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। খুলনা বিভাগে আগের দিনের ৫৩৯ থেকে বেড়ে ১৩০৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪২৬ থেকে বেড়ে ৯৯২ জন, রংপুর বিভাগে ৫৩২ থেকে বেড়ে ৫৫৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৪৮ থেকে বেড়ে ৩৫৮ জন, বরিশাল বিভাগে ১৬০ থেকে বেড়ে ৩৪৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ২০৩ থেকে বেড়ে ২২৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। একমাত্র চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৪৪ থেকে কমে ৬৭৩ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, দেশের বিভাগগুলোর মধ্যে বর্তমানে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার বরিশাল বিভাগে। এই বিভাগে নমুনা পরীক্ষা করে ৪৭ দশমিক ১২ শতাংশ হারে রোগী পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রংপুর বিভাগেও রোগী পাওয়া গেছে ৪৩ শতাংশ হারে। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে সিলেটে ৩৬ দশমিক ৮৯, খুলনায় ৩৬ দশমিক ২০, চট্টগ্রামে ২৯ দশমিক ৫৭, রাজশাহীতে ২৬ দশমিক ১১ এবং ময়মনসিংহে ২৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ হারে রোগী পাওয়া গেছে।
বিভাগওয়ারি তালিকায় মৃত্যুতে শীর্ষে রয়েছে খুলনা বিভাগ। এই বিভাগে দৈনিক মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৫০-এর কোঠা। গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার এই বিভাগে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ঢাকা বিভাগে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৬ জন। এরপর পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম ও রংপুরে ১৫ জন করে, রাজশাহীতে ১২, ময়মনসিংহে ৯, বরিশালে তিন এবং সিলেটে মারা গেছেন দু’জন। বয়সভিত্তিক মৃত্যু হিসাবে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ৭০, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪৫, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২৪, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১১ এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে রয়েছেন তিনজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গত শনিবারের তুলনায় প্রায় সাত হাজার বেড়েছে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের ৬০৩টি পরীক্ষাগারে ২৯ হাজার ৮৭৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময়ে ২৯ হাজার ৩১৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর আগে শনিবার ২২ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৭ লাখ ২৩ হাজার ৫৬০টি। আগের দিনের তুলনায় সংখ্যাগতভাবে দেড় শতাংশের বেশি বেড়েছে নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় ২৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ হারে রোগী শনাক্ত হয়েছেন। শনিবার ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ হারে রোগী শনাক্ত হয়েছিল। সবমিলিয়ে মোট শনাক্তের হার ১৪ শতাংশ পার করেছে। গতকালের নমুনা পরীক্ষাসহ এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ০৫ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক ২৫ শতাংশ।