দেশে অকালমৃত্যুর অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ

জাতীয় স্বাস্থ্য
শেয়ার করুন...

বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস আজ

দেশে শতকরা ২২ শতাংশ জনগোষ্ঠীর অকালমৃতু্য হচ্ছে। এ সব মৃতু্যর সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ ওতোপ্রতভাবে সম্পৃক্ত। কিন্তু অসচেতনতার কারণে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও অর্ধেক মানুষ এ সম্পর্কে জানে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে অকাল এই মৃতু্য দ্রুত কমানো সম্ভব।

দেশে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি বিকলসহ বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে যত মানুষের অকাল মৃতু্য হচ্ছে, উচ্চ রক্তচাপ তার মধ্যে অন্যতম— এমন পরিস্থিতিতে রোগটি সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সারা বিশ্বের মতো আজ ১৭ মে দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস-২০২২।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তত্ত্বাবধানে ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন লীগ ও ইন্টারন্যাশনাল হাইপারটেনশন সোসাইটি এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- ‘মেজার ইয়োর ব্লাড প্রেশার অ্যাকিউরেটলি, কন্ট্রোল ইট, লিভ লঙ্গার।’ অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ: সঠিকভাবে পরিমাপ করুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন, দীর্ঘদিন বাঁচুন।’ আজ দেশেও রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৭-১৮’ অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৭-১৮ সাল সময়ে ৩৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এটি পুরুষের মধ্যে ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৪ শতাংশে এবং নারীর ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
জরিপে জানানো হয়, অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা রয়েছে এমন নারী এবং পুরুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার হার যথাক্রমে ৪৯ শতাংশ এবং ৪২ শতাংশ, যেখানে স্বাভাবিক ওজনের নারী এবং পুরুষের মধ্যে এই হার যথাক্রমে ২৫ শতাংশ এবং ২৪ শতাংশ। তবে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত অর্ধেক নারী (৫১ শতাংশ) এবং দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষই (৬৭ শতাংশ) জানে না যে তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই (৬৪ শতাংশ) কোনো ওষুধ সেবন করে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ রক্তচাপের কারণে হূদরোগ এবং হূদরোগজনিত মৃতু্যঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। স্ট্রোক এবং কিডনির ক্ষতি হয়। তবে সরকার অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ২০২৫ সালের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রাদুর্ভাব তুলনামূলকভাবে ২৫ শতাংশ কমানোর (রিলেটিভ রিডাকশন) জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি সব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসা এবং ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে রক্তচাপের ওষুধ সারা জীবন সেবন করতে হয়। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষের পক্ষে তা সম্ভব হয় না। অনেকে রক্তচাপ স্বাভাবিক হওয়ার পর সেবন ছেড়ে দেন। এতে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। মূলত ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্রয়ক্ষমতা না থাকা এবং সুস্থ মনে করে মাঝপথে সেবন ছেড়ে দেওয়ায় অকাল মৃতু্য বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডি) প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, সরকারে ট্রিটমেন্ট প্রটোকল অনুযায়ী ৮০টি উপজেলার এনসিডি কর্নারে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এ বছরে ২০০টি এবং ২০২৪ সালের মধ্যে ৪০০ উপজেলায় ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। সেখানে যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তার একটা ট্যাবলেটের সর্বনিম্ন দাম ৮ থেকে ১০ টাকা করে। তবে বাজারে এর চেয়ে কমদামের ওষুধও আছে। এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডি) কর্মসূচি তেজগাঁওয়ে একটি গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আজ ন্যাশনাল হার্ট ফউন্ডেশনে ছাড়াও বিভাগীয় ও জেলা হাসপাতালে শোভাযাত্রা ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *