তেঁতুলিয়া সংবাদদাতাঃ
সারাদেশে ন্যায় তেঁতুলিয়ায় সারের দাম বৃদ্ধি চলছে আমন মৌসুম। মাঝখানে কদিনের খরার পর বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরেছে কৃষকদের। এ স্বস্তিতে ধুম পড়েছে আমন রোপনের ক্ষেত তৈরিতে। ব্যস্ত সময় পার করছে তেঁতুলিয়ার কৃষকরা। বৃষ্টির পানিতে কাঁদা মাটি তৈরি করে রোপন করছেন আমনের চারা। কিন্তু তৈরি হয়েছে সার সংকট। একটি সূত্রে জানা যায়, সারের অতিরিক্ত বরাদ্দ না দিলে এর মধ্যে সার সংকট তৈরি হতে পারে।
তেঁতুলিয়া মাঝিপাড়া এলাকার কৃষক আজাদ হোসেন জানান, যে হারে ক্ষেতে সার দিতে হয় আর এদিকে ৮০০ টাকা সারের বস্তা এখন ১২০০ টাকা দিয়ে কিন্তে হচ্ছে এরকম সারের দাম বাড়লে আমরা কার কাছে বলবো। এত টাকা কথায় পাবো।
ইতিমধ্যে হাট বাজারগুলোতে সার সংকট তৈরির খবর শোনা যাচ্ছে। আষাঢ় মাস থেকে আমন রোপন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এবার আষাঢ়-শ্রাবণের মাঝামাঝি সময়ে তাপদাহের কারণে সময় মতো ক্ষেত তৈরি করতে পারেননি কৃষকরা। অনেকেই আগাম ক্ষেত তৈরি করে সার প্রয়োগ করলেও বৃষ্টির অভাবে সে সার কাজে লাগেনি। আবার ক্ষেত তৈরি করে সার দিতে হচ্ছে। এভাবে একই জমিতে একাধিক সার প্রয়োগ করতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। এখন জমিতে পানি জমার কারণে আমন রোপন করছেন। কিন্তু এখনই বাজারের সারের ডিলার ও খুচরা দোকানদের কাছ থেকে সার মিলছে না। দোকানদাররা বলছে পটাশ, ইউরিয়া, এমওপি ও ডিএপি সার চাহিদা মতো সরবরাহ পাচ্ছেন না তারা। এর মধ্যে ইউরিয়া সারের নতুন করে দাম বাড়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে কৃষকরা।
অপরদিকে, বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে পঞ্চগড় জেলায় নিবন্ধিত ক্ষুদ্র চা বাগান রয়েছে ১ হাজার ১ শ ৬৮ টি। অনিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে ৬ হাজার। ৭ হাজার ২ শ ৮৩ একর জমিতে এই চায়ের আবাদ করা হয়েছে। জেলায় শুধুমাত্র চা চাষের জন্য বছরে ৪ হাজার মেট্রিকটন সারের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এই চা বাগানের বিপরিতে বিসিআইসি ইউরিয়া ৩শ মেট্রিক টন এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশান (বিএডিসি) এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিস কর্পোরেশান (বিসিআইসি) টিএসপি ১’শ মেট্রিক টন ও ডিএপি ২’শ মেট্রিক টন মোট ৬’শ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ দিয়েছে। তাই চা চাষিরা প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছেন না। ফলে অতিরিক্ত বরাদ্দ না হলে সার সংকট সৃষ্টি হলে চাষিরা বেকায়দায় পড়বে এরকম আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উপজেলায় প্রত্যাশামত সার পাচ্ছেন না কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, অনেক ডিলার বিভিন্ন হাটবাজারে গোপন গুদাম তৈরি করে সেখান থেকে চড়া দামে সার বিক্রি করছেন। ইউরিয়ার সরকার নির্ধারিত মূল্য বস্তা প্রতি ৮০০ টাকা, টিএসপি ১ হাজার ১০০ টাকা, এমওপি ৭৫০ টাকা, ডিএপি ৮০০ টাকা হলেও বিভিন্ন হাটবাজারের সার ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তারা ডিলারদের কাছ থেকে সার নেয়ার সময় রশিদ পাচ্ছেন না। একটু সার সংকটের খবর হলেই তারা দাম বাড়িয়ে দেন। আবার সার লুকিয়ে রেখে বেশি দামে বিক্রি করেন জানাচ্ছেন কৃষকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেঁতুলিয়ার একাধিক খুচরা সার বিক্রেতা বলেন, তেঁতুলিয়ার একজন সারের ডিলার আছে, কিন্তু সে ডিলারের কোন সার আমরা পাচ্ছি না। সে সার কোথায় যাচ্ছে, আপনারা সাংবাদিকরা একটু খোঁজ নিয়ে দেখেন।
এক ডিলার বলেন, চলতি আমন মৌসুমে চাহিদার অর্ধেকের সার মিলছে না। আমরা কৃষকদের সার দিতে পারছি না। বিষয় বিষয়টি কৃষি বিভাগ গোপন করছে। তারা সঠিক জায়গায় এই সংকটের কথা তুলে ধরছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ বছর আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে। চাষাবাদ হয়েছে অর্ধেকের বেশি জমিতে। বর্তমান পরিস্থিতি বুঝেই আমরা অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছি। বাজারে এই মুহুর্তে কোন সারের সংকট নেই। কেউ অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।