জুলহাস উদ্দীন তেঁতুলিয়া
তেঁতুলিয়ায় জোরপূর্বক ভূমি দখলের প্রতিবাদে কাঞ্চনজঙ্ঘা টি কোম্পানীর বিরুদ্ধে। মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টায় উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের মাঝিপাড়ার জাতীয় মহাসড়কে এই প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অংশ নেয় দুই শতাধিক মানুষ।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র আইনজীবি আবু হানিফ, এডভোকেট রফিকুল ইসলাম, শালবাহান ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম, বাবুল হোসেন, হাবিবুর রহমান হবি, ভূমি সার্ভেয়ার জামাল বাদশা প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কাঞ্চজঙ্ঘা টি কোম্পানী এখানে ২০ একর জমি কিনে ৮০ একর জমি দখল করেছে। এটা এলাকার মানুষ মেনে নিবে না। প্রয়োজনে তারা জমি ফিরিয়ে নিতে রক্ত দিবে, কিন্তু কাগজের বাইরে এক শতক জমি কোম্পানীকে অবৈভাবে দখল করতে দিবে না। তারা যে ভূমিদস্যু হয়ে অত্র এলাকার গরীব-দু:খি মানুষদের জায়গা-জমি দখল করে গ্রাস করছে, এটা হতে দেয়া যাবে না। এ সময় মানববন্ধনে হুশিয়ারি দেয়া হয়, বিষয়টি এক সপ্তাহের মধ্যে যদি কোম্পানীর মালিক এখানকার জমির মালিকদের সাথে কাগজপত্র নিয়ে না বসেন, তাহলে যেকোন মূল্যে হোক আমরা আমাদের জমি দখল করে নিব।
ভুক্তভোগী তোফাজ্জল হোসেন, জালাল, হায়দার আলী, জাকারিয়া, হেলালসহ কয়েকজন জানায়, ডাহুক নদী সংলগ্ন এলাকার প্রায় ৮০ একর জমি এখানকার কিছু মালিকের কাছে জমি কিনেছে কাঞ্চনজঙ্ঘা টি কোম্পানী। এসব জমির মধ্যে এখানকার ১৭-১৮ জন মালিকের জমি রয়েছে। ১৯৯৪ সালে বনবিভাগ সামাজিক বনায়ন সৃজনের জন্য আমাদের নিকট হতে নয় বছরের জন্য জমি লিজ নেয়। বনবিভাগের ৯ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও বনবিভাগ গাছ না কাটায় আমরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষত্রিগ্রস্ত হই। এর মধ্যে কাঞ্চনজঙ্ঘা টি কোম্পানী আমাদের কিছু অংশীদারের কাছ থেকে নামেমাত্র জমি কিনে আমাদের ভোগদখলকৃত সম্পূর্ণ জমি জবরদখল করার চেষ্টা করে ও রাতের অন্ধকারে চা বাগান লাগিয়ে অবৈধভাবে সিসি ক্যামেরা, সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে আমাদের প্রবেশ করতে নিষেধ করছে। জমিতে আমাদেরকে এখন জমিতে যেতে দেয়া হচ্ছে না। গেলে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও প্রাননাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে তমা গ্রæপের ম্যানেজার লিটনেরও। তিনি জানান, এ এলাকার কারও সাথে আমাদের কোন বিরোধ ছিল না ও নেই। এখন কাঞ্চজঙ্ঘা টি কোম্পানীর সাথে বিরোধ তৈরি হয়েছে। তারা আমাদের ১ একর ৪২ শতক জমিতে যেতে দিচ্ছে না। বিষয়টি মীমাংসা না হলে আমাকে আইনের আশ্রয় নিতে হবে বলে তিনি জানান।
তবে কাঞ্চনজঙ্ঘা টি কোম্পানীটির দায়িত্বে থাকা হিসাবরক্ষক ফয়সাল আহমেদ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এ কোম্পানী এখানে ৫২ একর ১৯ শতক জমি ক্রয়সূত্রে মালিক। তবে বনবিভাগ জমির মালিকানা দাবি করে কোম্পানীর বিরুদ্ধে যে কটি মামলা করেছে, তার প্রতিটি মামলার রায় আমরা পেয়েছি। এ ক্রয়কৃত ৫২ একর ১৯ শতক জমির সব দলিলপত্রাদি রয়েছে। এখন স্থানীরা জমির মালিকানা দাবিতে মানববন্ধন করেছে। আমাদের কোম্পানীর মালিক দেশের বাইরে রয়েছে। তিনি আসলে বিষয়টি নিয়ে বসা হবে বলে তিনি জানান। আমরাও অভিযোগ করেছি।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, আমরা উভয় পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। আপাতত চা গাছ লাগানো বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত চলছে।
সহকারি বন সংরক্ষক মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, জমির লিজের কোন বিষয় নয়। সরকার যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংরক্ষিত বন ঘোষণা ও একশো বছরের ব্যবস্থাপনার জন্য চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। পঞ্চগড় জেলার বনবিভাগের জায়গা কেউ দখলের চেষ্টা করলে আমরা আমাদের শক্তি, সামর্থ ও প্রশাসনের সহযোগিতায় এই বনবিভাগের জমি রক্ষা করবো।