তারুণ্যের ভাবনায় ঈদুল আজহা

আরো ইসলামিক বিশেষ প্রতিবেদন বিশেষ রচনা বলি ময়মনসিংহ শিক্ষা শিক্ষা সাহিত্য সারাদেশ
শেয়ার করুন...

মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। আত্মত্যাগ, উৎসর্গ, দান এবং মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটানো এই পবিত্র ঈদ সবার মাঝেই আনন্দের জোয়ার বয়ে নিয়ে আসে। প্রথমবারের মতো ক্যাম্পাসে এসে ঈদকে ঘিরে তারুণ্যের মাঝে বিরাজ করছে নানা আয়োজন, পরিকল্পনা । ঈদুল আজহায় তারুণ্যের ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্রথম বর্ষের কয়েকজন নবীন শিক্ষার্থী। লিখছেন মো আমান উল্লাহ-

করোনা মহামারী কালীন ঘরবন্দী ঈদের পর স্বাভাবিকভাবে এবারের ঈদ নিয়ে আগ্ৰহ ছিল বেশি। আর এই আগ্ৰহে বাড়তি টান যুক্ত হয়েছে বাড়ি যাওয়ার উৎকণ্ঠা থেকে। ক্যাম্পাস জীবন শুরু হওয়ার পর প্রথম ঈদ। দীর্ঘদিন পর বাড়ি যাওয়া, পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা হওয়া আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না । আপন‌ নীড় সবার জন্যই পরম শান্তির জায়গা। এতদিন ক্যাম্পাসে কাটানোর পর ঐ জায়গাটা ফিরে পাওয়া এখন আরো বেশি আকাঙ্ক্ষার। ক্যাম্পাসে থাকতে প্রতিদিন বাড়িতে যাওয়ার জন্য দিন গুনতে হতো । ঈদের ছুটিতে হল আর ক্যাম্পাসের এই বন্ধুদেরও মনে পড়বে। একসাথে ক্লাস করা,প্র্যাকটিকাল ক্লাসে হাতে কলমে কাজ করা,ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ানো আর আড্ডা এই সময়গুলো ও মিস করবো। ঈদের আনন্দের পাশাপাশি ছুটির সময় পরীক্ষা টেনশনও থাকবে।

যাহরা তাসনীম আদিবা
কৃষি অনুষদ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ।

ঈদ মানে আনন্দ আর ফুল ঝরা খুশির অনুভূতি। তারপর এটি যদি হয় ঈদুল-আজহা তাহলে তো কথাই নেই হয়ে যাবো এক দিনের কসাই।এ যেন বাধভাঙা আনন্দ উল্লাস। নতুন পাঞ্জাবিটা পড়ে বাবার হাত ধরে ঈদের নামাজ পরতে যাবো এটা ভাবলেই অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করে। যেন স্বর্গসুখ এখানেই নিহিত।নামাজ শেষে আপ্লুত হৃদয়ে কোলাকুলি করা সব কিছুতেই যেন আনন্দের ছোঁয়া। ছোট, বড় সকলেই যেন আনন্দ উল্লাসে হারিয়ে যায় একে অপরের মাঝে। সারাদিন টো টো করে ঘুরা ফেরা করা সিনিয়রদের কাছ থেকে সালামি নিয়ে ভাগ বাটোয়ারা করা সত্যিই আনন্দের। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটানা ক্লাস করে, পরীক্ষা দিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছি। যখন মনে হয় বাড়ি যাবো ঈদ কাটাবো পরিবার পরিজন নিয়ে সব ক্লান্তি যেন নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। এখন শুধুই অপেক্ষা পুরনো সেই নীড়ে ফেরার, ঈদ আনন্দে মেতে উঠার।

আরিফুল ইসলাম বাবন
মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রায় দুই মাস পর বাড়ি যাওয়া যেন ঈদের আনন্দকে দিগুণ করে তুলেছে। এই প্রথম পরিবার থেকে আলাদা হয়ে ক্যাম্পাসে একা থাকার এক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করা। ক্যাম্পাসে ক্লাস, প্রাকটিক্যাল, পরীক্ষার বেড়াজাল থেকে সাময়িক অবসর পাওয়ায় আত্নিক প্রশান্তি যুক্ত হয়েছে ঈদ আনন্দের সাথে। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। মুসলিম জাহানের প্রধান দুইটি উৎসবের মধ্যে একটি হলো ঈদুল আযহা। ঈদ পরিবার, আত্নীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি, বন্ধু-বান্ধব সকলের মাঝে এক মিলবন্ধন নিয়ে আসে। কিন্তু পথশিশু এবং হতদরিদ্র মানুষের ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে না। তাই সমাজে এসব মানুষদের সহায়তায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে আমাদের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের সকলের উচিত কোরবানির আবর্জনা যথাস্থানে ফেলা এবং চারপাশ যথাসম্ভব পরিষ্কার রাখা।

খাইরুন নাহার
কৃষি অনুষদ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বহুদূরে আমার স্বপ্ন, চিরাচরিত আমার বাড়ি, আমার কাছের মানুষ গুলোকে সামনাসামনি দেখার অনুভূতি যেন অন্যরকম । বাকৃবিতে ভর্তির পর প্রথমে বাড়িতে বসে অনলাইনে ক্লাস করতে হয়েছিলো। বাড়িতে একঘেয়ামি জীবন থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বশরীরে ক্লাসের মাধ্যমে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় আসার সময় মনের ভিতর এক চাপা কষ্ট যেন উত্থালপাতাল শুরু করে । প্রায় দেড় মাসের মতো আমার বাড়িতে যাওয়া হয় না। কাছের মানুষগুলোকে দেখা হয় না। এবার ঈদে বাড়িতে যাওয়ার পর আম্মুর হাতের রান্না, আব্বুর সাথে খুনসুটি করতে পারবো। একদিকে আমার নিজের পরিবারের সাথে দেখা করা, তাদের সাথে ঈদ উদযাপনের আনন্দ। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আমার নতুন এক পরিবার কে রেখে যাওয়ার কষ্ট। অনুভূতিটা মিশ্র তবে এত টুকু বিশ্বাস রাখি যে, ঈদের দিন ক্যাম্পাসের বন্ধুদের সাথে না থাকলেও তাদের কথা স্মরণ থাকবে ।

আরিফা সুলতানা ইভা
কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীন সমাজবিজ্ঞান অনুষদ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

করোনা তে ঈদ। এই কথা শুনতে শুনতেই যেন চলে এলো ঈদুল আজহা। ক্লাস,প্রাকটিক্যাল এর বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে ,অনেক দিন পর বাসায় যাওয়ার উৎসাহ যেন একদম বাঁধভাঙ্গা। ক্যাম্পাস থেকে অনুষদের সবাই একসাথে বাড়িতে যাওয়া অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছে। ক্যাম্পাসে থাকার সময় বাসায় কয় দিন পর যাবো সেইটা গণনা করা প্রাত্যহিক রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। পরিবারের সবাই বসে একসাথে আবার ভাত খাওয়া-আড্ডা দেওয়া এসব ভাবতেই ভাবতেই কখন যেন চোখে পানি চলে আসে। তবে এই কান্না টা খুশির । বন্ধুদের সাথে কাটানো সময় একসাথে গ্রুপস্টাডি, আড্ডা, ঘুরতে যাওয়া এসব মিস করবো অনেক। তবেই এইটুকুই আশা ব্যক্ত করছি যেন সবাই সুস্থ ভাবে প্রকৃতি কন্যা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ আবারও ফিরতে পারি এবং জীবনের পথে সুন্দর ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।

ইফরান ইউসুফ শিহাব
শিক্ষার্থী, কৃষি অনুষদ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

image_pdfimage_print

শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.