জহুরুল ইসলাম হালিম, রাজবাড়ী থেকেঃ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নার্গিস পারভীন ও তার স্বামী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কাইয়ুম মোল্লা এবং দৈনিক খোলা কাগজের গোয়ালন্দ উপজেলা প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
রোববার (২৯ মে) দুপুরে গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. কাইয়ুম মোল্লা ও তার পরিবারবর্গ দক্ষিণ দৌলতদিয়া তোরাপ শেখের পাড়া এলাকায় বিরোধকৃত জমির উপরে তার এবং তার পরিবারেরকে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অসত্য, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশ ও সিরাজুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম গংদের উদ্দেশ্যমূলক সাংবাদিক সম্মেলনের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মো. কাইয়ুম মোল্লা বলেন, আপনারা অবগত আছেন যে, গত ২৫-০৫-২০২২ ইং তারিখে আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ ও সংবাদ সম্মেলন করেছে মো. সিরাজুল ইসলাম ও তার ভাই শহিদুল ইসলাম। প্রকাশিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তিনি বলেন, ১৯৯১ ইং সনে মো. মাইনদ্দিন গংদের নিকট থেকে রেলওয়ের পরিত্যক্ত ডোবা ভূমির একাংশের পজিশন ক্রয় করে যৌথভাবে মৎসচাষ করতে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে উল্লেখিত রেলওয়ের ভূমির উভয়পার্শ্বের বিভিন্ন জনের নিকট থেকে প্রজাসম্পত্তি ক্রয় করে (যাহার বি.এস দাগ নং ২৭,২৮,৩০) পুকুর পুনঃখনন করে একপাশে চালা নির্মাণ ও ফলজ, বনজ গাছ রোপণ করে আজ প্রায় ৩০/৩১ বছর যাবৎ যৌথভাবে মৎস চাষ করে আসছি।
উল্লেখ্য যে রেলওয়ের জমিটি সরকারের বি.এস ১নং খতিয়ানভুক্ত হওয়ায় জমিতে অবস্থানরত দখলদারদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকারের সার্ভেয়ার দ্বারা পরিমাপ করে যে যতটুকু জমিতে অবস্থান করছে তাদেরকে সেই ভাবেই নীতিমালা অনুযায়ী বন্দোবস্ত দেয়। বন্দোবস্ত প্রাপ্ত (১) মাইনদ্দিন ও লিয়াকত গং ৪২ শতাংশ (২) শফিকুল ইসলাম গং ৬৮ শতাংশ (৩) পিয়াস মাহমুদ ৫৭ শতাংশ। আমাদের সন্তান পিয়াস মাহমুদের বর্তমান বয়স ৩৪ বছর, তার নেয়া বন্দোবস্তকৃত জমি বি.এস ৩০, ৩১ নং দাগে যাহা আমাদের যৌথখামারের মাঝখানে অবস্থিত। উল্লেখ্য আমার নামের ১১৬ শতাংশ জমি সরকারের ১ নং খতিয়ানভুক্ত হলেও উক্ত জমি আমি বন্দোবস্ত নেই নাই। যাহার আর.এস খতিয়ান – ১৩৮, ১৭, ২৭৪ গোয়ালন্দ দেবিপুর মৌজায় যাহার দলিল নং- ৯৩৪ তাং ২২-০১-১৯৭৯ ইং।
মো. শফিকুল ইসলাম আমার স্ত্রীর ছোট ভাই, সে ১২ বছর বয়স থেকে গোয়ালন্দে বসবাস করে এবং সে গোয়ালন্দ পৌর ০৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও ভোটার। সে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর গোয়ালন্দ হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখানে তার কর্মজীবন শুরু করে। গোয়ালন্দের বিভিন্ন মুরগির হ্যাচারীতে খোঁজ নিলে তার সত্যতার প্রমাণ মিলবে। সিরাজুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম গং আমাদের খামারের একাংশের কিছু জমি দাবী করলে আমরা গত ১৬মে ২০২২ ইং তারিখে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসি এবং বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য দাবীকৃত খতিয়ানের অন্যান্য প্রজাদের সাথে বসে সঠিক পরিমাপ ও সবার প্রমাণিত কাগজপত্রাদি নিয়ে পুনরায় কথা বললে সিরাজুল ইসলাম গংরা তাহা অমান্য করে এবং পরবর্তীতে জোর করে আমাদের খামারের সামনের একাংশের আমাদের ভরাটকৃত রেলওয়ের ভূমি দখল করার চেষ্টা করে আসছে এবং বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও টাকা দাবি করে। অন্যথায় বড় ধরনের ক্ষতি করে দেবে বলে হুমকি দেয়ার প্রেক্ষিতে গত ২২মে ২০২২ ইং তারিখে আমি গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি।
উল্লেখ্য যে মো. সিরাজুল ইসলামের পিতা. লতিফ মন্ডল ওরফে লালু গারিয়ান গত ১৯৯৯ ইং সনে আমার মা ও বোনের নামে ২৪ শতাংশ বায়নাপত্র করে দেয় কিন্তু রেজিস্ট্রি করতে গেলে জমিটি অন্যের নামে রেকর্ড হওয়ায় তাহা দলিল করে দিতে না পারায় রেকর্ড সংশোধণের জন্যে কোর্টে মামলা করি এবং মামলার সমস্ত খরচ আমি বহন করতে থাকি। ইতিমধ্যে আমি দুরারোগ্যব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ও সিরাজুল গংদের পিতা মৃত্যুবরণ করার পর বিষয়টি তাদেরকে বলি, আমি অসুস্থ থাকায় মামলাটি পরিচালনা করার জন্য তাদের সহযোগিতার কথা বলি এবং মামলার খরচপত্রাদি শহিদুল ইসলামের মাধ্যমে দিয়ে আসছিলাম কিন্তু গত ৭/৮ মাস যাবৎ সিরাজুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম আমার সাথে কোন যোগাযোগ না করে আমাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে কয়েকটি গণমাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে।
সিরাজুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম গং সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখ করেছে আমরা ভূমিহীন কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছি বিষয়টি একেবারেই মিথ্যা ও বানোয়াট বরং খামার সংলগ্ন অন্যান্যরাসহ আমরা সকলে সুষ্ঠভাবে মিলেমিশে বসবাস করে আসছি।
সিরাজুল ইসলাম গং আরও উল্লেখ করেছে তারা উল্লেখিত খামারে মাছ ছাড়া খাদ্য দেয়া সহ রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে বিষয়টি যে কতবড় মিথ্যা-তারা কাদের কাছ থেকে পোনা ক্রয়, খাদ্য ক্রয় এবং কোন জেলে দ্বারা মাছ ছাড়া বা উত্তোলন বা কাদের দ্বারা পুকুর খনন বা সংস্কার, চালা নির্মাণ করছে তাহা জানতে চাইলেই তাদের সমস্ত মিথ্যার প্রমাণ মিলবে।
সাংবাদিক পরিচয় দানকারী সিরাজুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম গংদের নামের আগে কিছু বিশেষণ যোগ না করলে তাদেরকে কেউ চেনে না যাহা অন্যান্য সাংবাদিকের ও সংবাদপত্রের জন্য বিব্রতকর।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি জাতীয় দৈনিক “আমাদের সময়” এর উপজেলা প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে গণ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করে, খোজ নিয়ে জানা যায় আসলে সে ঐ পত্রিকার কোন প্রতিনিধিই নয়।
সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয়রা উপস্থিত থেকে তাদের পক্ষে কথা বলেন।
এদিকে গোয়ালন্দ উপজেলায় সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও তার স্বামী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাংবাদিকের মাছের ঘের ও ঘর ভাঙচুর হুমকি ধামকির বিরুদ্ধে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রেসক্লাবে গত ২৫ মে সংবাদ সন্মেলন করেন সিরাজুল ইসলাম ও তার ভাই সহিদুল ইসলাম।
এতে সিরাজুল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ১০মে ২০২২ ইং তারিখে জাতীয় পত্রিকা সহ স্থানীয় বিভিন্ন অনলাইনে গোয়ালন্দ ভাইস চেয়ারম্যানের সন্তানকে ভূমিহীন কৃষক দেখিয়ে অসহায় ভূমিহীন কৃষকদের জমি দখল শিরোনামে একটি নিউজ প্রকাশিত হয়। এর জের ধরে দক্ষিণ দৌলতদিয়া তোরাপ শেখের পাড়ায় অবস্থিত সাংবাদিকদ্বয়ের মাছের ঘের ও ঘর ভাঙচুর করে দুর্বত্তরা।
তাদের জমির পাশেই মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের ভাইয়ের নামে আরেকটি জমি লীজ নেওয়া হয়েছে। যদিও তার ভাই সফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী বৃষ্টু বেগম পাবনায় বসবাস করেন এবং স্বচ্ছল। কিন্ত কৌশলে করে দক্ষিণ দৌলতদিয়ার বাসিন্দা হিসাবে দেখিয়ে জমি লীজ নেন। এবং তারা পৌর ছয় নম্বর ওয়ার্ডে আড়ৎ পট্রি এলাকায় বসবাস করলেও সন্তানকে দক্ষিন দৌলতদিয়ার বাসিন্দা দেখান। তার ভাইয়ের মাধ্যমে জালিয়াতি করে জমি লীজ এই সংবাদ সংগ্রহ করে নিউজ করা হবে এটা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বিভিন্ন সময় হুমকি ধামকি দেয়। এতে কোন কাজ না হওয়ায় দক্ষিণ দৌলতদিয়ার তোরাপ শেখের পাড়ায় অবস্থিত মাছের ঘের এর বেড়া এবং সেখানে নির্মিত বসার ঘর রাতের আধারে সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। কাইয়ুম মোল্লা ভাইস চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তার সন্তান পিয়াস মাহমুদ কে ভূমিহীন কৃষক দেখিয়ে গত ৩১/০৮/২০১০ তারিখে গোয়ালন্দ উপজেলার দক্ষিণ দৌলতদিয়ার ৪৭ নম্বর মৌজার বিএস ১ ক্ষতিয়ানের ৫৭ শতাংশ জমি লীজ নেন।