মাসুদ হোসেন, চাঁদপুরঃ
বাংলাদেশের রেলপথ অনেকটা ‘নিরাপদ’ হলেও এর যাত্রীরা এখনো অনিরাপদ অবস্থায় চলাচল করছেন। কখন, কোথায় যাত্রীরা চোর, ছিনতাইকারী আর পাথর নিক্ষেপকারীদের রোষানলে পড়ে যান, তার কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছেন না। মাঝে মধ্যে চলন্ত ট্রেনে যাত্রী রক্তাক্তের ঘটনা ঘটছে। অথচ যেসব দুর্বৃত্তের হাতে প্রতিনিয়ত যাত্রী হয়রানি ও রক্তাক্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে তারা বরাবরের মতোই রয়ে যাচ্ছে নাগালের বাইরে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ গত শনিবার (২০ জুন) রাত ৯টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা চাঁদপুরগামী আন্তঃনগর ট্রেন মেঘনা এক্সপ্রেসের এক যাত্রী ছিনতাইয়ের শিকার হন। ট্রেনটি যখন মধুরোড রেল স্টেশন থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছাড়ার ১ মিনিট পর ঝমজমিয়া ব্রিজের পরে লোধেরগাঁও এলাকায় এক যাত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে লাফ দিয়ে নেমে যান এক ছিনতাইকারী। মধুরোড স্টেশন মাষ্টার মোঃ শাহাজান মিয়া উক্ত ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনাটা মূলত মধুরোড স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পর লোধেরগাঁও এলাকা নামক স্থানে ঘটেছে। ছিনতাইকারীদের কাউকেই আমরা ছিনি না।
এর আগে গত ১২ মার্চ চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের মেহের হাজীগঞ্জের মধ্যবর্তী স্থানে আসলে চলন্ত ট্রেনে বিক্ষিপ্ত পাথর নিক্ষেপে রক্তাক্ত জখম হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ ও চাঁদপুর জেলা আওয়ামী মহিলা যুবলীগের সভাপতি ফরিদা ইলিয়াস।
এছাড়াও এই রুটের বিভিন্ন নির্জন স্থানে সন্ধ্যার পর জমে উঠে মাদকের জমজমাট আসর। যেখানে প্রশাসনের লোকজন যেতেও দ্বিধাবোধ করার কথা। সে স্থানটিতেই নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন মাদকসেবিরা। সুশীল সমাজ বলছেন, মাদক সেবন করতে আসা ব্যক্তিরাই ট্রেনে পাথর নিক্ষেপসহ অন্যান্য অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকছেন। এতে এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা আতংকিত হয়ে পড়ছেন। এদিকে চলন্ত ট্রেনে বড় বড় পাথর ছুড়ে মারার ঘটনায় ট্রেনে বিভিন্ন গন্তব্যে পাড়ি জমানো নানা পেশার যাত্রীদের (জানালার পাশে বসা) প্রতিনিয়ত ‘পাথর’ আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। সাধারণ যাত্রীদের দাবি যেকোনো উপায়েই হোক তারা এর থেকে দ্রুত পরিত্রাণ চান।
চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়ে শনিবার (২৬ জুন) সন্ধ্যার পর চাঁদপুর জিআরপি থানার ওসি মোঃ মুরাদ উল্যাহ বাহারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চলন্ত ট্রেনে ছিনতাই হওয়ার ঘটনার পরদিন আমরা ওই এলাকায় অভিযান চালিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ধরতে পারিনি। তবে চেষ্টা অব্যাহত আছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যেসব স্থানগুলোতে পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছে সেসব স্থানগুলোতে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। এছাড়াও এ বিষয়ে আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে মাদকসেবিদের বিরুদ্ধে লোকাল থানা ও বিট পুলিশিং নেতৃবৃন্দের সাথে এক হয়ে জিআরপি থানার পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। তবে আমরা এ রুটে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। সূত্রঃ আজকের কুমিল্লামা