গোয়ালন্দে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

আরো খেলা ঢাকা বিনোদন শিক্ষা শিক্ষা সাহিত্য সারাদেশ
শেয়ার করুন...

জহুরুল ইসলাম হালিম, রাজবাড়ী থেকেঃ
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার কিশোর-কিশোরী ক্লাব পরিচালনার ক্ষেত্রে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সালমা বেগমের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কিশোর-কিশোরী ক্লাব পরিচালনায় কর্মরত শিক্ষকরা মঙ্গলবার (৩১ মে) উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও গোয়ালন্দ প্রেসক্লাব বরাবর লিখিতভাবে এ অভিযোগ করেন।

সরেজমিন অনুসন্ধান ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় একটি করে মোট ৫টি কিশোর-কিশোরী ক্লাব রয়েছে। প্রতিটি ক্লাবে ২০ জন মেয়ে ও ১০ জন করে ছেলে সহ মোট ৩০ জন তালিকাভুক্ত রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে রয়েছেন ২ জন করে শিক্ষক। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার দুইদিন বিকেলে ক্লাস চলে। ক্লাসে সঙ্গীত ও আবৃত্তি শিক্ষা সহ নানা ধরণের আনন্দ-বিনোদন এবং পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা থাকার কথা। কিন্তু ক্লাবগুলোতে এ ধরণের কোন সু-ব্যবস্থা নেই। ক্লাবের হারমোনিয়াম, ডুগি-তবলা দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। নেই বসার জন্য মাদুর, হোয়াইট বোর্ড, মার্কার, ডাস্টার, লুডু, কেরাম, দাবা, জগ-গ্লাস, খাতা-কলমসহ অন্যান্য উপকরণ। যে কারণে কিশোর-কিশোরীদের উপস্থিতিও একেবারে কম।

আলাপকালে কেন্দ্রের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলেন, কিশোর-কিশোরী ক্লাব শুধুমাত্র নামেই চলছে। এখানে কোন ধরণের কোন উপকরণ নেই। তাছাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা হিসেবে ৩০ জনের প্রতি ক্লাসে ৯শ টাকার পুষ্টিকর নাস্তা দেয়ার বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সালমা বেগম গত ফেব্রুয়ারি মাসে এখানে যোগদানের পর হতে আড়াই মাসের মতো কোন খাবার দেননি। এ নিয়ে কথা উঠলে তিনি গত দুই সপ্তাহ ধরে কেন্দ্র প্রতি ২শ টাকা করে দিচ্ছেন। যা দিয়ে নামমাত্র নাস্তা দেয়া সম্ভব হয়। যে কারণে ধীরে ধীরে প্রতিটি কেন্দ্রে কিশোর-কিশোরীদের উপস্থিতি কমে গেছে। অথচ ইতিপূর্বে প্রতিটি কেন্দ্রে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় হতে ভালমানের খাবার পৌছে দেয়া হতো।

মুজিব শতবর্ষ উদযাপনের জন্য কেন্দ্র প্রতি ১ হাজার টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও দেয়া হয়েছে ২ শত টাকা ও একটি ছোট ব্যানার। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেয়ার ক্ষেত্রেও তিনি গড়িমসি করেন বলে জান যায়।

এ বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্টরা তাকে অনেকবার বললেও তিনি কর্ণপাত করেননি। উপরোন্তু বেশী কথা বললে চাকরী চলে যাওয়ার হুমকি দেন এই কর্মকতা। বাস্তব পরিস্থিতি দেখতে তিনি অদ্যবধি কোন কেন্দ্র পরিদর্শনও করেননি। হৃদয় সূত্রধর নামে ছোটভাকলা ইউনিয়নের এক শিক্ষক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সকল দুর্নীতি ও অনিয়মে সহযোগিতা করেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সালমা বেগম মঙ্গলবার সকল শিক্ষকদের তার অফিসে জরুরী ভিত্তিতে ডাকেন। সেখানে তিনি প্রতিটি কিশোর-কিশোরী ক্লাব সুষ্ঠুভাবে চলছে এবং কারো কোন অভিযোগ নেই মর্মে একটি সাদা কাগজে শিক্ষকদের স্বাক্ষর দিতে বলেন। সেই সাথে এই প্রকল্পের জেন্ডার প্রমোটর অন্তরা নাজনিন’র বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে শিক্ষকদেরকে সুপারিশ করতে বলেন। কিন্তু শিক্ষকরা তার কোন কথাতেই রাজী না হলে তিনি প্রত্যেককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং সকলের চাকরী খেয়ে দেবারও হুমকি দেন। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে উপস্থিত ৭ জন শিক্ষক এর প্রতিকার চেয়ে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

এ সকল বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সালমা বেগম বলেন, কিশোর-কিশোরী ক্লাবের উপকরণগুলো আমি আসার অনেক আগে থেকে নষ্ট হয়ে আছে। সেগুলো মেরামতের জন্য কোন বরাদ্দ নেই। নাস্তায় টাকা কম দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ভ্যাট, আইটি ও এজি অফিসের খরচ বাদে জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২১ টাকা করে থাকে। ভাল মানের পুষ্টিকর খাদ্য দিয়ে পরে আমার থেকে টাকা নিয়ে যেতে আমি কেন্দ্রের শিক্ষকদের বলেছি। কিন্তু তারা সেটা ঠিকমত করছেন না। আমি কোন অনিয়ম-দুর্নীতি করি না।

এ প্রসঙ্গে রাজবাড়ী জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজমীর হোসেন বলেন, গোয়ালন্দ মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমার কাছে কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে আমি অন্য মারফত বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে জানতে পেরেছি। কিশোর-কিশোরী ক্লাব যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী চলবে। কোন শিশু যাতে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়ে আমি খেয়াল রাখব। নষ্ট উপকরণগুলো দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে। ২ মাস খাবার না দিলে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে সে টাকা ফেরত দিতে হবে। সাদা কাগজে শিক্ষকদের স্বাক্ষর নেয়াটাও চরম বোকামী। আমি সরেজমিন এসে সবগুলো বিষয় খতিয়ে দেখব।

গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা মুন্সি বলেন, লিখিত অভিযোগটি পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলবো এবং আগামী মাসিক সভায় বিষয়টি উত্থাপন করবো। তিনি অন্যায় করে থাকলে তার জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *