জহুরুল ইসলাম হালিম, রাজবাড়ী থেকেঃ
মানুষিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে তৈয়ব আলী (৭০) কে হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো একই কায়দায় অজ্ঞাত দূর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছেন ৬৫বছর বয়সী আরেক ভবঘুরে ছিন্নমূল অজ্ঞাত এক ব্যাক্তি।
সোমবার (০৬ জুন) পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দ রাবেয়া ইদ্রিস মহিলা ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন ঢাকা-খুলনা মহাড়কের যাত্রী ছাউনির মধ্যে থেকে ওই অজ্ঞাত বৃদ্ধকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে।
এর আগে গত ৭মে গোয়ালন্দ পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের এফকে টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের বারান্দা হতে তৈয়ব আলী (৭০) নামের এক মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে বৃদ্ধকে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে হত্যা করে অজ্ঞাত দূর্বৃত্তরা। তিনি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার নাচন মহল ইউনিয়নের বাসিন্দা ছিলেন।
স্থানীয়দের ধারণা, এসকল মানুষিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে সারাদিন বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। অনেকেই এদের হাতে টাকা পয়সা দিয়ে থাকে। আবার অনেকেই তাদেরকে হাতে খাবারও দিয়ে থাকে। তাদের হাতে দেয়া টাকা তারা খরচও করতে পারে না। তাই ওই টাকাগুলো তাদের কাছেই থেকে যায়। সেই টাকা নেয়ার জন্য নেশাখোররা নেশার ঘোরে তাদের উপর হামলা চালিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।তারা আরও মনে করছে যে, তাদের তো কোন শত্রুই থাকার কথা না।
সোমবার হামলার শিকার বৃদ্ধ সম্পর্কে স্থানীয়রা জানান, এই অজ্ঞাত বৃদ্ধাকে বিগত ৫বছর যাবত গোয়ালন্দের বিভিন্ন এলাকায় থাকতে দেখেছি। কিন্তু বেশ কিছুদিন তাকে এ এলাকায় দেখা না গেলেও গত ৫দিন আগে তিনি এই যাত্রী ছাউনির নিচে থাকতে শুরু করে। কে বা কারা এই নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে সে সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই।
স্থানীয় আখেঁর রস বিক্রেতা রতন, অটোচালক সোহেল রানা, ইমরান ফকিরসহ স্থানীয়রা জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দেখতে পান যাত্রী ছাউনির মধ্যে ওই বৃদ্ধকে বিভৎস রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বিষয়টি দেখে তারা ভয় পেয়ে যান। সেখানে উপস্থিত হাইওয়ে পুলিশকে বিষয়টি জানালে পুলিশ বলে আমাদের গাড়ি আসছে তারপর নিব। গাড়ি আসতে দেরি হলে আমরা তাকে অটোতে নিয়ে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। প্রায় একঘন্টা পরে থাকে ওই বৃদ্ধের রক্তাক্ত দেহ। পরে পুলিশের নিষেধ না মেনেই বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিতে আমরা কয়েকজন ধরাধরি করে একটা ভ্যানে উঠিয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যাই এবং পুলিশও আমাদের সাথে যায়।
তারা আরো বলেন, লোকটি কারো বাড়ি গিয়ে ভাত চাইতো না। গাছের ফল পেরে খেতেন এবং অনেকের কাছ থেকে শুধু ফল চাইতেন। তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। তবে তিনি অন্যান্য পাগলের মত না। তিনি কোন পাগলামি করতেন না।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহ মোহাম্মদ শরিফ জানান, বৃদ্ধের মাথায়, কপালে ও হাতে ধারালো অস্ত্রের গভীর আঘাত রয়েছে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে কিছুদিন আগের মানুষিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যার সাথে আজকের এই ঘটনার অনেকটাই মিল রয়েছে। কে বা কাহারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হবে। সেই সাথে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।