মোঃ শাকিল আহমেদ, বামনা(বরগুনা) প্রতিনিধিঃ
বরগুনার বামনা উপজেলার ঘোপখালী গ্রামে গর্ভধারণ ছাড়াই একটি বাছুরের দুধ দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অনেকেই বিষয়টি অলৌকিক ভেবে প্রতিদিন ভীড় করছেন বাছুরটিকে একনজর দেখতে ও এর দুধ নিতে। বর্তমানে ঘটনাটি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানিয়েছেন এটা কোন অলৌকিক ঘটনা নয় এটা হরমোন জনিত বিষয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুধ দেওয়া বকনা বাছুরটি ওই গ্রামের চিশতীয়া নিজামিয়া রাশিদিয়া দরবার শরীফের গদীনিশিন পীর হযরত মো. মজিবুল হক মন্টু’র। ২০১৯ সালে পাবনা থেকে অট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের একটি গাভী ক্রয় করে নিয়ে আসেন তিনি। এরপর গাভীটি পর্যায়ক্রমে ৬টি বাচ্চা প্রসব করে। ওই গাভীর ৩য় নম্বর বাচ্চাটি গত বছর ডিসেম্বর মাসে একটি বকনা বাছুর প্রসব করে। গত মাসে ওই বাছুরটি গর্ভধারণ ছাড়াই দুধ ধারনের বাট হঠাৎ ফুলে যায়। এরপর থেকে নিয়মিত সেই বাছুরটির স্তন থেকে দুধ সংগ্রহ করেন গরুটির মালিক মজিবুল হক। প্রথম মাসে অল্প পরিমাণে দুধ হলেও বর্তমানে গাভীটি প্রতিদিন ২ লিটার করে দুধ দেয়।
তবে ওই বাছুর থেকে সংগ্রহ করা দুধ গরুর মালিক বিক্রি কিংবা নিজেরা পান করেন না বলে জানায় মালিকের ছেলে সেনাবাহিনী সদস্য মো. রিয়াজুল হক রাজু।
তিনি জানান, তার বাবা একটি দরবার শরীফের গদীনিশি। বাছুরটির দুধ হওয়ার পরে তার বাবা স্বপ্নযোগে একটি কুরআনের আয়াত জানতে পারেন এবং ওই গরুর দুধ মানুষের মাঝে বিতরন করার আদেশ প্রাপ্ত হন। এর পর থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার ওই বাছুরটির দুধ দিয়ে মিষ্টান্ন প্রস্তুত করে মানুষের মাঝে বিতরন করেন পরিবারটি।
স্থানীয়দের ধারণা বিষয়টি অলৌকিক এবং এই দুধ খেলে মিলবে সব সমস্যার সমাধান। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়লে দলে দলে সেই দুধ নিতে ও দুধের তৈরী মিষ্টান্ন গ্রহন করতে ভিড় করছেন দূর-দূরান্তের লোকজন। প্রতি বৃহস্পতিবার শতাধিক লোকের মাঝে বিতরণ করা হয় সেই দুধের তৈরী মিষ্টান্ন।
ঘোপখালী গ্রামের বাসিন্দা প্রতিবেশী মিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন অনেক দূর থেকে মানুষ আসে দুধ নিতে। তারা উপকার পেয়ে অন্যকে বলার পরে তারাও এই বাছুরের দুধ নিতে ছুটে আসছে। আমি নিজেও এই দুধ খেয়েছি। খেতে খুবই মিষ্টি।
গরুটির পরিচর্যাকারী মো. জাকির হোসেন জানান, বাছুরটির বয়স মাত্র ৭ মাস এখনো সে তার মায়ের দুধ পান করে আবার নিজেও দুধ দেয়। গর্ভধারণ ছাড়া বাছুরের দুধ দেওয়া এটা সত্যি বিরল ঘটনা। একদিন বাছুটির দুধ সংগ্রহ না করলেই দুধের বাট থেকে রক্ত বের হয়। বাছুরটি বর্তমানে ২ লিটার দুধ দেয়।
স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মী রাসেল চৌধূরী বলেন, আমি খবর পাই ঘোপখালী গ্রামে আমার বন্ধু রিয়াজুল হক রাজুদের খামারে একটি বাছুর দুধ দেয়। বিষয়টি আমার কাছে অলৌকিক মনে হয়েছে। তাই আমি দেখতে গেলে দেখি বাছুরটি থেকে সত্যিই দুধ দোহন করা হচ্ছে। এটি আসলেই বিরল ঘটনা, যা আমি আমার বয়সে দেখিনি। পরে আমিও সেই দুধ খেয়েছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, কয়েকদিন আগেও দেখেছি বাছুরটি অনেক ছোট। হঠাৎ দেখতে পাই সেই বাছুরটি দুধ দিচ্ছে। তবে এটি এখনো গর্ভধারণ করেনি। স্থানীয় একজন এই দুধ খেয়ে উপকার পাওয়ার পর এখন দলে দলে লোকজন এই দুধ নিতে ভিড় জমাচ্ছে। এটি আল্লাহর রহমত ছাড়া সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে বামনা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অরবিন্দু কুমার বলেন, ঘোপখালী গ্রামে ৭ মাসের বাছুর দুধ দিচ্ছে বিষয়টি আমার জানা নেই। আর এটি কোন অলৌকিক ঘটনাও নয় এটি মুলত অক্সিটজি হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে হচ্ছে। এ ঘটনা ইতোপূর্বেও আমরা বেশ কয়েকটি জায়গায় দেখেছি।