আব্বাস উদ্দিন:জেলা প্রতিনিধি (ব্রাহ্মণ বাড়িয়া)
ব্রাহ্মণ বাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের গাজির বাজারে নৃশংসভাবে খুন করে, কোলে পিঠে করে বড় করা ঘাতক ফারহান ভূইয়া রনি।
ঘাতক ফারহান ভূইয়া রনি (৩০)কে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন শারমীন বেগম প্রকাশ হরলুজা বেগম (৪৭)। নিজের বাড়ি না থাকায় ফারহান ভূইয়ার ফুফুর জায়গাতেই পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। শারমীনের স্বামী নূরুল ইসলাম দিনমজুর। পারিবারিকভাবে ফারহান ভূইয়ার পরিবারের সাথে শারমীনের পরিবারের সর্ম্পক ভালো। এ অবস্থায় শারমীনকে এভাবে পৈশাচিকভাবে হত্যার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার। শারমীনের পরিবারে এখন শোকের মাতম।
ঘাতক ফারহানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন তারা। এদিকে এ ঘটনায় শারমীন বেগমের বড় মেয়ে রুমা আক্তার বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের গাজীর বাজারে ঘটে যাওয়া শারমীন বেগম ওরফে হরলুজা বেগম (৫০) হত্যাকাণ্ড যেন সব পৈশাচিকতাকে হার মানিয়েছে। মঙ্গলবার পুলিশ সেখানকার একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে ৫০ বছর বয়সি নারীর পুড়া মরদেহ (কয়লা) উদ্ধার করে। ওই নারীর দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা মাথা উদ্ধার করা হয় পাশের একটি পুকুরের কাছের জমি থেকে। মাথাটিও গর্তে পুঁতে রাখা হয়। ঘাতকের দেওয়া স্বীকারোক্তি মতে উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি। হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই নারী উপজেলার হীরাপুর গ্রামের কলোনি এলাকার মো. নুরুল ইসলাম বেপারীর স্ত্রী হরলুজা বেগম (৫০)। ভোরে ওই নারীকে ডেকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায় ঘাতক ওই যুবক।
গ্রেপ্তারকৃত ফারহান ভূইয়া পুলিশকে জানায়, মঙ্গলবার ভোরে বাবার (শাহনেওয়াজ ভূইয়ার) অসুস্থতার কথা বলে শারমীনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় ফারহান ভূইয়া। প্রথমে ছুরি দিয়ে গলা কেটে শারমীনকে হত্যা করা হয়। এরপর পাশের একটি জমিতে মাথা পুঁতে রাখা হয়। সবশেষে লাশটাকে একটি কম্বলে পেঁচিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। ফারহান ভূইয়া জানান শারমীন তার মেয়েকে বিয়ে দিতে তাকে তাবিজ করায় সে ক্ষিপ্ত ছিলো। সে মনে করতো বিয়ে দিয়ে তাদের সম্পত্তি নিয়ে যাওয়া হবে।
স্থানীয় লোকজন ও নিহতের পরিবার জানায়, পুলিশকে দেয়া ফারহানের বক্তব্য সঠিক নয়। বরং ফারহান চাইতো শারমীনের এক মেয়েকে বিয়ে করতে। কিন্তু ফারহান মাদকাসক্ত হওয়ায় শারমীনের পরিবার রাজি ছিলো না। এছাড়া চুরি করা হাঁস রান্না করে দিতে রাজি না হওয়ায় ফারহান এমন নৃশংস হত্যাকান্ড করতে পারে বলে ধারণা।
স্থানীয়রা আরো জানান, মাদকাসক্ত ফারহান চুরি, ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত। পরিবারও তার জ্বালায় অতিষ্ঠ। গত কয়দিন ধরে ফারহানের পিতা যুবলীগ নেতা শাহনেওয়াজ ভূইয়া বাড়ির বাইরে অবস্থান করছেন।
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফারহান অসংলগ্ন কথা বলছে। সে বলতে চাইছে শারমীন বেগম তাকে তাবিজ করেছে। তার এক মেয়েকে বিয়ে দিয়ে সম্পত্তি নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছিলো। এজন্য সে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
শারমীনের বড় মেয়ে রুমা বলেন, চুরি করা হাঁস রান্নার জন্য তার মাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। মা হয়তো এতে অপারগতা প্রকাশ করে। এ কারণে তাকে হত্যা করা হয়।
এ ব্যাপারে আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ছমিউদ্দিন জানান, বাবার অসুস্থতার কথা বলে শারমীন বেগমকে ডেকে নিয়ে যায় ফারহান। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘাতক ফারহান হত্যাকাণ্ডের কারণ নিয়ে অংসলগ্ন কথা বলছে। তবে সে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তাকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য, হত্যাকাণ্ডের শিকার শারমীন বেগম প্রকাশ হরমুজা বেগম (৪৯) উপজেলার হীরাপুর গ্রামের কলোনি এলাকার মোঃ. নুরুল ইসলামের স্ত্রী। মঙ্গলবার ভোরে ওই নারীকে ডেকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায় ঘাতক ওই ফারহান। চুরি হওয়া হাঁস খুঁজতে গিয়ে স্থানীয় লোকজন ওই নারীকে পুড়তে দেখেন। তাৎক্ষনিকভাবে যুবলীগ নেতা শাহনেওয়াজ ভূঁইয়ার ছেলে ফারহান ভূঁইয়াকে আটক করে পুলিশে খবর দেন তারা। পরে পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার করে।