নিজেস্ব প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লা নগরীর আওয়ার লেডি অব ফাতেমা স্কুল এর সামনে কিশোর গ্যাং ‘রতন গ্রুপ’ প্রকাশ্য দিবালোকে শাহাদাৎ হোসেন (১৭) নামের এক কিশোরকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এ হত্যাকান্ডের মূল হোতা মোঃ রতনসহ (২০) প্রধান ৬ আসামীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১, সিপিসি-২ সদস্যরা। এ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
পরবর্তীতে গত ২০ আগস্ট রাতে কুমিল্লার দেবিদ্বার ও সদরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে কিশোর গ্যাং ‘রতন গ্রুপ’ এর লিডার রতনসহ ৬ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার হওয়া কিশোররা হলেন নগরীর ফৌজদারী মফিজাবাদ কলোনী এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে মোঃ রতন (২০), মো: জহির মিয়ার ছেলে মোঃ আকাশ হোসেন (২০),শাহালমের ছেলে মোঃ সিয়াম হোসেন (২০), ভাটপাড়া এলাকার মনিরুল ইসলামের ছেলে মোঃ তানজীদ (১৯), কালিয়াজুড়ি এলাকার মৃত. মো: ফয়েজের ছেলে মোঃ ইয়াসিন আরাফাত@রাসেল (২১) এবং বাঘমারা গ্রামের মোহন মিয়ার ছেলে আসিফ হোসেন রিফাত (১৯)। গ্রেফতার অভিযান চলার সময় তাদের কাছ থেকে ২ টি সুইচ গিয়ার, ৪ টি বড় ছোরা ও একটি এন্টি কাটার উদ্ধার করা হয়।
গত ১৯ আগস্ট বিকেলে শাহাদাৎ হোসেনকে প্রকাশ্য দিবালোকে জনবহুল রাস্তায় নৃশংসভাবে হত্যা করে। নিহত শাহাদাৎ হোসেন নগরীর পুরাতন চৌধুরী পাড়া এলাকার বশু মিয়ার বাড়ির মোঃ শাহ আলম ভূইয়ার ছেলে।
উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ২০ আগস্ট রাতে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নিহত শাহাদাৎ নগর উদ্যানের একটি রাইডের সাবেক কর্মচারী। ভিকটিম বেশ কয়েকদিন সেখানে চাকরি করেছে এবং গত ১৫ দিন আগে উক্ত চাকরি সে ছেড়ে দিয়েছে। নৃশংস হত্যাকান্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতি দ্রুত ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিষয়টি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও স্পর্শকাতর হওয়ায় তাৎক্ষনিকভাবে র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর একাধিক টিম মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শুরু করে। সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ ও তদন্ত সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এ নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরিভাবে জড়িত ব্যক্তিবর্গকে চিহ্নিত করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, নিহত ভিকটিম শাহাদাৎ হোসেন (১৭) ‘ঈগল গ্রুপ’ এর সদস্য। ‘ঈগল গ্রুপ’ এর সদস্যরা গত ৬/৭ মাস আগে ‘রতন গ্রুপ’ এর একজন সদস্যকে মারধর করে। উক্ত ঘটনার জের ধরে উভয় গ্রুপের মধ্যে শত্রুতা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। উল্লেখ্য, ‘রতন গ্রুপ’ এর সদস্যরা ০২ নং ওয়ার্ড এলাকায় এবং ‘ঈগল গ্রুপ’ এর সদস্যরা ০৪ ও ০৫ নং ওয়ার্ড এলাকায় অবস্থান করে। উক্ত ০২ ও ০৪,০৫ নং ওয়ার্ডের মাঝখানে ‘ধর্মসাগর পার্ক’ অবস্থিত যা ১০ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে যখনই ‘রতন গ্রুপ’ এর সদস্যরা ঐ পার্কে যায় তখনই ‘ঈগল গ্রুপ’ এর সদস্যরা তাদেরকে ধাওয়া দেয়, একইভাবে ‘ঈগল গ্রুপ’ এর সদস্যরা ঐ পার্কে গেলে ‘রতন গ্রুপ’ এর সদস্যরা তাদেরকে ধাওয়া দেয়। ঘটনার দিন গত ১৯ আগস্ট আনুমানিক বিকাল ৪ টার সময় ‘ঈগল গ্রুপ’ এর সদস্যরা ‘রতন গ্রুপ’ এর সদস্য তানজীদের পরিচিত এক ছোট ভাইকে মারধর করে আহত করে। ফলস্বরূপ ‘রতন গ্রুপ’ এর সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেয় যে, ‘ঈগল গ্রুপ’ এর সদস্যদের যেখানেই পাবে সেখানেই প্রতিহত করবে। এমন সময় ‘রতন গ্রুপ’ এর সদস্য তানজীদ এসে উপস্থিত অন্যান্য সদস্যদেরকে ‘ঈগল গ্রুপ’ এর সদস্যরা পার্কে অবস্থান করছে মর্মে তথ্য প্রদান করে। পরবর্তীতে, রতনের নেতৃত্বে ‘রতন গ্রুপ’ এর অন্যান্য সদস্যরা ফৌজদারী মফিজাবাদ কলোনী মাঠে একত্রিত হয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ ‘ঈগল গ্রুপ’ এর সদস্যদের আওয়ার লেডি অব ফাতেমা স্কুল এর সামনে ধাওয়া করে। ধাওয়ার এক পর্যায়ে ভিকটিম শাহাদাৎ দৌড়ে পালাতে না পারলে রাব্বিল তাকে ধরে ফেলে ও তাৎক্ষণিক গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা শাহাদাৎকে কিল-ঘুষি, লাথি ও এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে, স্থানীয় লোকজন শাহাদাৎকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
আসামীদের দেওয়া তথ্য ও প্রাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ‘রতন গ্রুপ’ এর সদস্য রাব্বিল ভিকটিম শাহাদাৎ কে ধরে থাকা অবস্থায় তানজীদ সুইচ গিয়ার দিয়ে প্রথমে ভিকটিমকে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে। গ্রুপের অন্য সদস্য রানা ভিকটিম শাহাদাৎ কে কিল-ঘুষি মারতে থাকা অবস্থায় অন্য সদস্য আকাশ সুইচ গিয়ার দিয়ে শাহাদাৎ এর পেটের বাম পাশে বারংবার আঘাত করতে থাকে। অন্য সদস্য রতন, হাসিব, রিয়াজ, সানি, সাব্বির ও আরো কতিপয় সদস্য ভিকটিম শাহাদাৎ কে লাথি ও ঘুষি মারতে থাকে এবং রাসেল, সিয়াম, আসিফ বড় ছুরি নিয়ে ভিকটিম শাহাদাৎ কে চারপাশ থেকে ঘেরাও করে রাখে এবং নবী ভিকটিমের পিঠে বড় ছুরি দ্বারা আঘাত করলে ভিকটিম শাহাদাৎ ঘটনাস্থলে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ‘রতন গ্রুপ’ এর সদস্যরা দ্রুত ঐ স্থান থেকে পালিয়ে আত্নগোপনে চলে যায়।
র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর কোম্পানী অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।