কালের বিবর্তনে প্রায় বিলুপ্তীর পথে ছৈলাগাছ

আরো পরিবেশ বরিশাল সারাদেশ
শেয়ার করুন...

মোঃ শাকিল আহমেদ, বামনা ( বরগুনা) প্রতিনিধিঃ
উপকূলীয় অঞ্চলের বন ও পরিবেশের সৌন্দর্য ছৈলা গাছ, কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়ার পথে। সাধারনত নদীর তীরেই এই গাছ জন্মায়। বন উজারের পাশাপাশি ধংশ করা হয়েছে অজস্র ছৈলাগাছ। কোথাও কোথাও আবার দেখা মেলে পরিবেশ বান্ধব এই গাছের।

ছৈলা একটি লবন সহিষ্ণু বন্য প্রজাতির বৃক্ষ। উপকূলীয় নদী তীরবর্তী চর, জোয়ার ভাটার প্রবহমান খালের চর ও প্লাবনভূমি জুড়ে প্রকৃতিগতভাবে জন্মে। ছৈলা গাছের শেকড় মাটির অনেক গভীর অবধি যায় তাই ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে কিংবা উপড়ে পড়েনা। ফলে উপকূলীয় এলাকায় প্রকৃতি ও পরিবেশ বান্ধব গাছ হিসেবে ছৈলা বনবিভাগের সংরক্ষিত বৃক্ষ। কেবল কাঠের মূল্য বিবেচনায় নয়; মাটির সুদৃঢ় গঠনে পর্যায়ক্রমিক একটি দরকারি বৃক্ষ প্রজাতি হিসেবে ছৈলাকে বিবেচনা করা হয়। তাই দূর্যোগ প্রবণ উপকূলে প্রকৃতিবান্ধব ছৈলা গাছ কাটা নিষেধ।

ছৈলাগাছের ফুল সুনন্দ শোভন আর নয়ণাভিরাম। নদীর তীরের ছৈলা বনে যখন ছৈলা ফুল ফোটে তখন অপরূপ নিসর্গের মুগ্ধতা ছড়িয়ে যায় । ছৈলা ফুলের কলি বেশ শক্ত ও মোটা। আর ফোঁটা ফুলে পাঁপড়ির বদলে ধরে ব্রাশের মত অগণিত লোমশ কলি। সাদা আর গোলাপীর আবহে ফুটে থাকে কেশ গুচ্ছের মতো। আর ফুলের মাঝখান দিয়ে বেশ বড় কেশর দন্ড ফুলের বাইরে দৃশ্যমান। মধুসংগ্রহী পাখিরা আকৃষ্ট হয়ে ফুলের ওপর নাচে। তখন অপূর্ব লাগে ছৈলা বনের এ নিসর্গ।

ছৈলা ফল দেখতে অনেকটা কেওড়ার মতোন। কেওড়া আকারে ছোট ছৈলা আকারে বড়। তবে দুটো বৃক্ষই একই গোত্রের।

ছৈলা ফল টক স্বাদের। যা নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ খায়। ছৈলা ফলে আবার জেলিও তৈরী হয়। ছৈলা ফুল সারারাত ভিজিয়ে অনেকে সুস্বাদু মধুও সংগ্রহ করে। আবার ছৈলা গাছের পাতা বন্যপ্রাণীর আহার। বিশেষ করে হরিণের প্রিয় খাবার ছৈলা পাতা। আর ছৈলা ফল বোয়াল মাছের প্রিয় খাদ্য। জোয়ারে জলাবদ্ধ ছৈলা গাছের নিচে বোয়াল মাছ আসে।

ছৈলা গাছ ম্যানগ্রোভ বনের বৈশিষ্ট্য মন্ডিত; তাই শ্বাসমূল হয়। ছৈলা গাছ উপকূলে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ঠেকায়। মাটির ক্ষয় রোধে কার্যকর ছৈলা বৃক্ষ। প্রকৃতি বান্ধব ছৈলা বনে পাখির অভয়াশ্রম। আর রাতের ছৈলা বনে জোনাকি পোঁকারা দলবেঁধে আলো ছড়ায়।

তাই এমন প্রকৃতি বান্ধব ছৈলা বৃক্ষকে সংরক্ষণ এবং এর ব্যবহার বৃদ্ধিতে আমাদের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী। তবে এই গাছও একশ্রেণীর অসাধু চোরাকারবারীর হাত থেকে রক্ষা পায় না। তারা এই গাছ কেটে বাজারে বিক্রি করছে। তাই বন বিভাগ সহ সকলকে উদ্যোগী হবে উপকূলীয় পরিবেশের জন্য সহায়ক এই গাছ টিকিয়ে রাখা এবং এর বিস্তার ঘটানোর জন্য।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.