কঠোর লকডাউনেও খুলছে শেয়ারবাজার

অর্থনীতি সারাদেশ
শেয়ার করুন...

লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এবারের লকডাউনে জরুরি সেবা বাদে বন্ধ রয়েছে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস, কলকারখানা ও গণপরিবহন। আগামী দুই সপ্তাহ দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় স্থবির হয়ে থাকছে। এ অবস্থায় শেয়ারবাজার পরিস্থিতি কেমন হয়, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন বিনিয়োগকারীরা।

শেয়ারবাজার বিশ্নেষক ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, দর হারায় শেয়ার। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট আলাদা। এখানকার শেয়ারবাজার ব্যবসার মৌলিক ধারণার ওপর চলে না। প্রভাবশালীরা তো বটেই, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা হলো পরিস্থিতি যাই হোক, শেয়ারের দর বাড়ূক।

জানতে চাইলে আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারদর ওঠানামার মূলভিত্তি হলো কোম্পানির ব্যবসা ও মুনাফা। কাল যদি ঘোষণা আসে, একটি কোম্পানির কারখানা দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকবে, এর ফল কী হবে তা সবাই অনুমান করতে পারি। কী কারণে কারখানা বন্ধ হলো, কত দিন বন্ধ থাকবে, কেউ তা শুনতে যাবে না, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করবে। তবে লকডাউনে পরিস্থিতি ভিন্ন। একটি বা দুটি নয়, প্রায় সব কোম্পানির ব্যবসা বন্ধ থাকবে। আবার লকডাউন কঠোর হলেও নতুন নয়। বিনিয়োগকারীরা এ অবস্থার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারাও তাই মনে করেন। তারা বলেন, কঠোর লকডাউনে শেয়ারবাজার খোলা থাকছে, তাদের বিনিয়োগ আটকে থাকছে না, এটাই বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখবর। তা ছাড়া অতীতে দেখা গেছে, সীমিত আকারে লেনদেন চলার সময় শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে বেশি।

ইতিবাচক এই মনোভাব থাকলেও বিশ্নেষক ও শেয়ারবাজার সংশ্নিষ্টদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে। আবু আহমেদ বলেন, গত কয়েক মাসে কারণ ছাড়া অনেক শেয়ারের দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়েছে। হাওয়ার ওপর ভর করে বাড়ছে শেয়ারদর। এটা নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকা উচিত। গত ২০ জুন থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত এক মাসের শেয়ার লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৮১ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৯৩টির বা প্রায় ৭৭ শতাংশের বাজারদর বেড়েছে। কমেছে ৮৩টির বা পৌনে ২২ শতাংশের। এর মধ্যে নতুন তালিকাভুক্ত বীমা খাতের সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের বাজারদর আইপিও ইস্যু মূল্যের তুলনায় সাতগুণে উন্নীত হয়েছে। ওটিসি থেকে মূল শেয়ারবাজারে ফেরা পেপার প্রসেসিং, তমিজুদ্দিন টেক্সটাইল ও বিডি মনোস্পুল পেপারের বাজারদর গত এক মাসে দুই থেকে পাঁচগুণ হয়েছে।

পুরোনো কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৬০টির শেয়ারদর ১০ থেকে ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সর্বাধিক ৭৫ শতাংশের বেশি দর বেড়েছে জিলবাংলা, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, ফু-ওয়াং সিরামিক, অলিম্পিক এক্সেসরিজের। ৫০ থেকে ৬৫ শতাংশ দর বেড়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, জুট স্পিনার্স, ফ্যামিলিটেক্স, সিএনএটেক্স, মুন্নু ফেব্রিক্স ও আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের। গত এক মাসে দরবৃদ্ধির শীর্ষে থাকা এসব শেয়ারই রুগ্‌ণ বা দুর্বল মৌলভিত্তির। দরবৃদ্ধি তালিকার পরের ১০০ কোম্পানির মধ্যে হাতেগোনা দু-চারটি অপেক্ষাকৃত ভালো কোম্পানি। তাই শেয়ারদর বৃদ্ধি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলে মত সংশ্নিষ্ট সবার।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *