ইউটিউবে দেখে ড্রাগন চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন দুলাল

কুমিল্লা কৃষি চট্টগ্রাম সারাদেশ
শেয়ার করুন...

এম,এ মান্নান লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
বহুমুখী পুষ্টি গুণে সমৃদ্ধ বিদেশী ফল ড্রাগন চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কুমিল্লার লাকসামে আনিছুর রহমান দুলাল। দক্ষিণ আমেরিকার গভীর অরণ্যে এই ফলের জন্ম হলেও বর্তমানে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, চীন ও ভারতসহ দিন দিন পৃথিবীজুড়ে এই ফলের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানেও এই পুষ্টিকর ফল ড্রাগনের চাষ দিন দিন বেড়েই চলছে। এবং সফলতাও পেয়েছে বিভিন্ন এলাকার ড্রাগন চাষিরা। ইউটিউবে ড্রাগন চাষে বিভিন্ন এলাকার চাষিদের সফলতার ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ড্রাগন চাষ করেছেন লাকসাম উপজেলার আনিছুর রহমান দুলাল । আর এই ড্রাগন চাষেই নিজে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নিজের উপজেলায় ড্রাগন চাষের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখার স্বপ্ন দেখছেন এই আনিছুর রহমান দুলাল ।
জানা যায়,উপজেলার মুদাফরগুন্জ উত্তর ইউনিয়নের পাশাপুর গ্রামের অপসরপ্রাপ্ত সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা মফিজুর রহমানের ছেলে আনিছুর রহমান দুলাল।তিনি ১৯৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় এক কলেজ থেকে ২০০০ সালে এইচএসসি পাস করার পর আর লেখাপড়া করা হয়নি তার। ২০১৩ সালে প্রবাসে পাড়ি জমান ৫ বছর পর দেশে এসে মুদাফরগুন্জ বাজারে একটি ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন তিনি। প্রতিষ্ঠানে খাটুনি অনুযায়ী পারিশ্রমিক কম থাকায় সেখানে নিজেকে খুব বেশি আবদ্ধ রাখতে চাননি নিজেকে। মানসিক অস্বস্তির সেই জায়গা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চাতক পাখির মতো ছটফট করতে থাকে। এরই মাঝে ইউটিউব থেকে অত্যন্ত লাভজনক ফল ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখে ড্রাগন চাষের প্রতি তার আগ্রহ বাড়ে। এবং ইউটিউব থেকেই ড্রাগন চাষের ব্যাপারে তথ্য নিতে থাকেন। এবং দোকানের প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে গ্রামের বাড়িতে ৬০ শতাংশ জায়গার মধ্যে ড্রাগন বাগান গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। সরেজমিন বাগানটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, ক্যাকটাস গাছের মতো দেখতে ড্রাগনের সবুজ গাছগুলো বেড়ে ইতোমধ্যে ফল দেওয়া শুরু করেছে। ড্রাগন চাষের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে ইতোমধ্যে ড্রাগনের চারাগুলো বেশ পরিপক্বও হয়ে উঠেছে।
আনিছুর রহমান দুলাল জানান, ব্যবসার পাশাপাশি আমি ইউটিউব থেকেই ড্রাগন চাষের ব্যাপারে তথ্য নিই। এরপর পাশের অন্য উপজেলার আরেক সফল ড্রাগন চাষির পরামর্শক্রমে তিনি জমি প্রস্তুত করেন। বাগানের বয়স প্রায় তিন বছর ওই বাগানে ১ হাজার ৩০০শত গাছ রয়েছে । এ পর্যন্ত প্রায় দশ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান দুলাল ।
আনিছুর রহমান দুলাল আরও জানান, ড্রাগন চারা রোপণের এক থেকে দেড় বছরের মধ্য গাছ ফুল আসে। ফুল আসার পর বিশ-পঁচিশ দিনের মধ্যে ফল হয়। বারো থেকে আঠারো মাস বয়সী গাছ হতে পাঁচ-বিশটি ফল উঠানো যায়। তবে প্রাপ্তবয়স্ক একটি গাছ থেকে ১০০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি ড্রাগন গাছ মোট বিশ বছর পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। প্রতিটি ফলের ওজন হয় ২০০ গ্রাম থেকে শুরু করে এক কেজি পর্যন্ত হয়। বর্তমান বাজারের আলোকে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি কারা যায়। সেই পরিসংখ্যানের আলোকে ফলন ধরলেই এই বাগান থেকে প্রথমবার তিনি দশ থেকে পনেরো লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। ড্রাগন গাছে তেমন রোগবালাই না থাকার কারণে বাগানে খরচও কম। অল্প কিছু দিনের ভেতরে এই বাগানে সাথে আরও জমি সংযুক্ত করে বাগান বৃদ্ধি করা হবে বলে জানান তিনি।
লাকসাম উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা সৈয়দ শাহিনুর ইসলাম জানান, এই এলাকার মাটি এবং আবহাওয়া ড্রাগন চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আমরা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের পক্ষ থেকে সর্বদা বাগানটি পরিদর্শন করে চাষিকে উপযুক্ত পরামর্শও দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি আনিছুর রহমান ও উপজেলার অন্য চাষিসহ কৃষিতে ড্রাগন দিয়ে নতুন সম্ভাবনার সূর্য উদয় হবে।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.