আন্তঃনগর মেঘনা ট্রেনে যাত্রীকে মারধরের অভিযোগ

আইন-অপরাধ আরো কুমিল্লা চট্টগ্রাম পরিবেশ সারাদেশ
শেয়ার করুন...

জাফর আহমেদ
২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর গামী আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রীকে মারধর করার খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত টিকিট কাটেন রবিউল আলম নামে এক যাত্রী। নিজের আইডি ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে তিনি ওই টিকেট কেটে ২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রবিউল আলম লাকসামের উদ্দেশ্যে আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেসে যাত্রা করেন। ক বগির ৪৫ নং সিটের ওই যাত্রী সিটে যাওয়ার সময় হাতে থাকা মালামালের ধাক্কা লাগে সিভিল পোশাক (গেঞ্জি)পরিহিত একজনের গায়ে। সাথে সাথে ওই ব্যক্তি যাত্রীকে বেদম মারধর করে বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়। পরে জানা গেল সিভিল পোশাক (গেঞ্জি) পরিহিত ব্যক্তি রেলের সহকারি বাণিজ্যিক কর্মকর্তা-২ শাহাদাত হোসেন। সুত্র মতে বৈধ টিকেটধারী যাত্রীকে বেদম মারধর করে সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন ক্যান্টিন ম্যানেজার আবুল হাসেমকে ফোন করে পুলিশ পাঠানোর নির্দেশ দেয়। খবর পেয়ে মেঘনা ট্রেনে দায়িত্বরত চাঁদপুর রেলওয়ে থানার এএসআই দিনমনি বরুয়া সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ক বগিতে আসলে মৌখিকভাবে ওই যাত্রীকে পুলিশের হেফাজতে দেন শাহাদাত হোসেন। যাত্রীর বৈধ টিকেট থাকায় মৌখিক নির্দেশে যাত্রীকে পুলিশ হেফাজতে রাখতে না চাইলে শাহাদাতের নির্দেশে টি টি ই গোলাম সারোয়ার ১১৩ ধারায় পুলিশকে মেমো দেয়। সুত্র মতে বৈধ টিকেটধারী যাত্রীকে জরিমানা আদায়ের মেমো দিয়ে পুলিশি হেফাজতে দেওয়ার কোন বিধান নেই। ট্রেনের ভিতর যাত্রীকে মেরেও ক্ষান্ত হননি শাহাদাত। চাঁদপুর পর্যন্ত টিকেট কাটা যাত্রীকে তিনি ফেনীতে নামানোর আপ্রান চেষ্টা করেছেন। রেলওয়ে পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী ও অন্যান্য যাত্রীদের হস্তক্ষেপে উক্ত যাত্রীকে ফেনীতে নামাতে পারেননি শাহাদাত হোসেন। পরে তিনি ফেনীতে নেমে যান বলে সুত্র জানায়। যাত্রীর বাড়ি মনোহরগঞ্জ হওয়াতে তিনি লাকসাম নামলে যাত্রীকে লাকসাম জে আর আই অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। জে আর আই অফিসে পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম ও টি টি ই গোলাম সরোয়ার যাত্রীকে দুই ঘণ্টা বসিয়ে রেখে মামলা এবং জরিমানার ভয় দেখিয়ে নাজেহাল করেন বলে জানা গেছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে এসিও-২ শাহাদাত হোসেন বলেন, যাত্রী আমাকে ধাক্কা দিলে আমিও যাত্রীকে ধাক্কা মারি। যাত্রীর টিকেট থাকলেও আইডি কার্ড দেখাতে না পারায় তাকে মেমো দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। মারামারির বিষয়টি ছোটখাটো ঘটনা বলে সংবাদ প্রকাশ না করারও অনুরোধ করেন । যেহেতু সিভিল পোশাকে ছিলেন সেহেতু ডিউটিরত ছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি ক্ষেপে যান। মেঘনা এক্সপ্রেস এর ক্যান্টিন ম্যানেজার হাসেম বলেন, এসিও স্যারের নিকট পুলিশের ফোন নাম্বার না থাকায় তিনি আমাকে ফোন করেছেন পুলিশ পাঠানোর জন্য। আমি পুলিশকে বলার পর পুলিশ সেখানে গিয়েছে। চাঁদপুরে কর্মরত রেলওয়ে থানার এএসআই দিনমণি বড়ুয়া বলেন, খবর পেয়ে আমি ওই বগিতে গেলে এসিও সাহেব যাত্রীকে আমার হেফাজতে দেন । যেহেতু উক্ত যাত্রীর বৈধ টিকেট আছে সেহেতু মৌখিক নির্দেশে যাত্রীকে আমার হেফাজতে নিতে না চাইলে মেমো দেওয়া হয়। ওই মেমোর আলোকে আমি যাত্রীকে লাকসাম জে আর আই অফিসে সোপর্দ করি। যাত্রী রবিউল আলম বলেন, আমি নিয়মিত মেঘনা ট্রেনের যাত্রী। বৈধভাবে টিকিট কেটেই আমি নিয়মিত এই রুটে যাতায়াত করি । আমার টিকিট থাকার পরেও এসিও-২ আমাকে খুব মারধর করেছে। অন্যান্য যাত্রী ও পুলিশ না থাকলে আমাকে মেরেই ফেলতো। আমি অসহায় বলে হামলা মামলার ভয়ে কোন অভিযোগ করিনি। লাকসাম রেলওয়ে স্টেশনের জে আর আই আমিনুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন। ট্রেনের যাত্রী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আরিফুজ্জামান, আব্দুল মোতালেব ও মোহাম্মদ হিরা বলেন, যাত্রীটাকে অনেক মেরেছে। তার চোখে আঘাত করেছে। যাত্রী সহজ সরল মানুষ। পুলিশ এবং আমরা না থাকলে ওই যাত্রীর বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেত। টিকেটধারী যাত্রীকে এভাবে মারতে পারে না বলেও তারা মত প্রকাশ করেন এবং এর একটা বিহিত ব্যবস্থাও দাবি করেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.