দূর্বার

আটা-ময়দার প্রভাব নারায়ণগঞ্জে বেকারি পন্যে

অর্থনীতি ঢাকা সারাদেশ
শেয়ার করুন...

মোহাম্মদ রায়হান বারি নারায়ণগঞ্জ থেকেঃ প্রায় প্রতিদিনই বেড়ে চলছে আটা-ময়দার দাম। সেই সাথে পামওয়েল ও ডালডার দামও বৃদ্ধি হচ্ছে। যা বেকারি বেকারি পণ্য তৈরির অন্যতম কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পাশাপাশি বেকারি পণ্যের অন্যান্য কাঁচামালের দামও বেড়ে চলছে। আর এভাবে কয়েকদিন পরপরই দাম বৃদ্ধির কারণে দিশাহীন হয়ে পড়েছে বেকারি মালিকরা।

এর আগে গত দুই বছর তাদেরকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। নিয়মিত বেকারি পণ্যে বেচাকেনা করতে পারেননি। অনেক বেকারি মালিক তাদের কারখানা বন্ধ রেখেও কর্মচারিদের বেতন দিয়েছেন। সবেমাত্র সেই করোনা পরিস্থিতি সামলিয়ে উঠতে শুরু করেছিলেন।

এরই মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে বেকারি পণ্যের কাঁচামালের দাম ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলছে। আর এই দাম বৃদ্ধিতে মালিকদের দেয়ালে পিঠ টেকে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে তাদের বেকারি ব্যবসা টিকিয়ে রাখাটা সম্ভব হবে না। তারা গভীর সংকটের দিকেই ধাবিত হচ্ছেন। এমনটাই বলছেন নারায়ণগঞ্জের বেকারী মালিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা সংশ্লিষ্টরা।

শহরের আদি ফুডল্যান্ডের ম্যানেজার মো. রকি বলেন, দিন দিন ময়দা, পাম অয়েল ও ডালডা সহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি করার কারণে আমাদেরও দাম বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। যথাসম্ভব চেষ্টা করে থাকি দাম বৃদ্ধি না করার জন্য। কিন্তু পারা যাচ্ছে না। যার কারণে আমাদের ক্রেতা সংখ্যাও প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ব্যবসা ধরে রাখা সম্ভব হবে না।

তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরে আমাদের তিনটি শাখা বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। তিনটি বিক্রয় ও কারখানায় মিলিয়ে প্রায় ৫০ জন লোক কাজ করে থাকে। তাদের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যাবে।

ফুডল্যা-ের ম্যানেজার উসমান গনি বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের প্রতিটি বেকারি পণ্যের ৫ থেকে ১০ টাকা করে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার কারণে ক্রেতার সংখ্যা আগের চেয়ে কমে গেছে। ফলে মালিকপক্ষের জন্য ব্যবসা টিকিয়ে রাখাটা কষ্টকর হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে শহরে আমাদের ৫ টি বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এখানে প্রায় ৫০ জন লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। তাদের কর্মসংস্থানও অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে।

সুগন্ধা বেকারীর একটি বিক্রয়কেন্দ্রের ম্যানেজার মো. মামুন বলেন, করোনার সময়ে আমাদেরকে বসিয়ে রেখে মালিকপক্ষ বেতন দিয়েছেন। তারপরেও মালিকপক্ষের চলে যাচ্ছিল। কিন্তু এখন বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি হচ্ছে। আমাদের বেচাকেনা বন্ধ। শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার জন্য চলছে কোনোরকম। এভাবে প্রতিদিনই পণ্যের দাম বৃদ্ধি হলে প্রতিষ্ঠান ধরে রাখাটা অসম্ভব হয়ে যাবে। আমাদের প্রতিদিনই কাস্টমারদের সাথে বাকবিত-া করতে হয়। আমাদের মালিকপক্ষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। জানি না আমাদের ভবিষ্যত কি? আমাদের বেকারিতে সবমিলিয়ে প্রায় আড়াইশতাধিক লোকবল রয়েছে। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারেও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে।

এদিকে শহরের শহরের প্রধান পাইকারি বাজার নিতাইগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে গম সংকট থাকায় গমের দাম বাড়ছে। ৯০০ টাকার গমের দাম বেড়ে এখন হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ। গম থেকেই আটা-ময়দা হয় সেজন্য আটা-ময়দার দামও বাড়ছে। মানভেদে প্রতি ৫০ কেজি আটার বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ১৫০ টাকায়। সেই সাথে ময়দা মানভেদে ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সুগন্ধা বেকারীর মালিক মো. নুরুল হক আফসারী বলেন, বিগত ২১ মাস করোনা সংক্রমণের কারণে আমাদেরকে অনেক বিধি নিষেধ মেনে চলতে হয়েছে। আর এই সময়ে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যও নিয়ম কানুন মেনে পরিচালনা করতে হয়েছে। অনেক সময় কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। আর এ সময়ে কর্মকর্তা কর্মকচারীদেরকে বসিয়ে রেখেও বেতন দিয়েছি। তাদেরকে কোনো রকম কষ্ট দেয়নি। এরপর আমরা সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলাম।

কিন্তু সেই পরিস্থিতি সামলিয়ে উঠার আগেই আবার ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি হচ্ছে। বিশেষ করে বেকারি তৈরি পণ্যের দাম বছরের মধ্যে কয়েক দফায় বৃদ্ধি হয়েছে। গত ৯ মাসে ময়দার দাম বস্তাপ্রতি ১৮০০ টাকা থেকে ৩২০০ টাকা বৃদ্ধি হয়েছে। পামওয়েল তেলের দাম মণ প্রতি ৪ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ৬ হাজার ৮৩০ টাকা হয়েছে। ডালডার দাম কার্টুন প্রতি ১ হাজার ৯২৫ টাকা থেকে ২ হাজার ৯৪৫ টাকা হয়েছে।

এভাবে প্রতিটি পণ্যে দাম বেড়েই চলছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো আগে বৃদ্ধি হলেও সেটার নিশ্চয়তা ছিল যে এতদিন চলবে। কিন্তু এখন ব্যবসায়ীরা কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। মাল দিয়ে বলছেন কালকে এটার দাম বৃদ্ধি হতে পারে। যার কারণে আমাদেরকে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। চেষ্টা করি কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি না করে সাধ্যের মধ্যে ব্যবসা করার জন্য। কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। পণ্যের বিভিন্ন দামের স্টিকার করতে গিয়ে আমার খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এভাবে কয়েকদিন দাম বৃদ্ধি হলে আমরা কোথায় যাবো?

তিনি বলেন, আশা করছি সরকার এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন। এমনিতেই সরকার অনেক চেষ্টা করছে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। এখনও বিশ্বের অন্যান্য দেশের দেশের আমাদের অবস্থা ভাল রয়েছে। এই দেশ আমাদের। আমাদেরকেও দেশ ও দেশের মানুষের কথা ভাবতে হবে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা রেস্তেরা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা বলেন, বলতে গেলে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেই সারাবিশ্বেই দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু আমরা সে অনুযায়ী দাম বাড়াতে পারি না। লাভ কম হলেও আমরা জনগণের সেবার কথা চিন্তা করে দাম বৃদ্ধি করি না। তবে এভাবে দাম বৃদ্ধি হতে থাকলে আমাদেরকে হয়তো চিন্তা করতে হবে।

সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এ বিষয়ে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এমনিতেই সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য। আমাদের জনসাধারণকেও এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.