বিদায় হিজরি ১৪৪২। স্বাগত ১৪৪৩ হিজরি। মুসলমানের জীবনে হিজরি সন বা চন্দ্রবর্ষের প্রভাব ব্যাপক। এ সনের গুরুত্বও অত্যধিক। বিশেষ করে মুসলমানের জন্য ঈমানের অন্যতম রোকন ও ইবাদত রোজা, ঈদ, হজ -কোরবানি ও জাকাত- এ হিজরি তারিখের ওপর নির্ভরশীল। চন্দ্র বছরের তারিখ ও গণনা করেই এ ইবাদতের সময় নির্ধারণ করা হয়।
শুধু তা-ই নয়, কোনো নারীর স্বামীর মৃত্যু হলে কিংবা কেউ তালাকপ্রাপ্ত হলে চাঁদের সময় হিসেব করেই তাদের ইদ্দত পালন করতে হয়। সন্তান-সন্তুতির জন্ম ও দুধ পানের হিসাবও চন্দ্র মাসের হিসাব অনুযায়ী ধরতে হয়। হিজরি তারিখ ব্যবহারের অনীহা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
আমরা জানি, হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের আসমানে গমনের পর থেকে খ্রিস্টাব্দ সাল গণনা করা হয়। আর শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের দিন অর্থাৎ ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে হিজরি সন গণনা করা হয়। হিজরি সন নবী করিম (সা.) এর সময় থেকে প্রচলিত ছিল না। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ান জীবন থেকে বিদায় নেওয়ার সাত বছর পর দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) এর শাসনামলে ১৭ হিজরি থেকে হিজরি সনের প্রচলন করা হয়।
হজরত ওমর (রা.) অর্ধ পৃথিবীর শাসনকর্তা ছিলেন। শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি, শাসনাধীন এলাকায় চিঠিপত্র প্রেরণসহ নানাক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতা এড়াতে তিনি সমসাময়িক সাহাবাদের পরামর্শক্রমে হিজরি সন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন।
মুসলিম মানসে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে হিজরি সন। কারণ, মুসলমানদের সব ইবাদত-বন্দেগির সঙ্গে হিজরি সনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাই বিশ্বের মুসলমানরা হিজরি সনকে অন্য সালের তুলনায় অনন্য মর্যাদায় সমাসীন করে থাকেন।
ইসলামি চিন্তাবিদরা মনে করেন, সত্যিকারের আত্মসংশোধন ও আত্মউন্নয়ন ছাড়া নববর্ষ উদযাপন, স্মরণ ও সম্মান প্রদর্শন সার্থক নয়। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও চিন্তার বটে। হিজরি সন মানবাত্মাকে পরিশীলিত ও সংস্কারের মহাসুযোগ সৃষ্টি করে দেয় । এই সুযোগ হলো- আল্লাহ তায়ালার স্মরণের মাধ্যমে হৃদয়কে সজীব করার সুযোগ। তাই এই সুযোগকে সর্বোচ্চমাত্রায় কাজে লাগানো উচিত।
হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। এ মাসে পৃথিবীর ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং হবে। বিশেষ করে মহররম মাসের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা, এ তারিখে- ই কেয়ামত সংঘটিত হবে।তাই মহররম মাসকে উপলক্ষ করে আল্লাহ তায়ালার সামনে মানুষের দাসত্ব ও বিনম্রতা প্রকাশ করা জরুরি।আমরা কায়মনোবাক্যে স্বাগত জানাই ১৪৪৩ হিজরি নববর্ষকে “খোশ আমদেদ -১৪৪৩ আরবি নতুন বছর। নতুন বছরের শুরুতে প্রার্থনা করি, মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে -বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস মুক্ত, নির্মল, আলোময় সুন্দর বিশ্ব দাও, দাও আমাদের দেশ ও সমাজকে করোনা মুক্ত করে। থাকুক সকলে সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে। সবাইকে আন্তরিক মোবারকবাদ এবং হিজরি ১৪৪৩ নববর্ষের শুভেচ্ছা।
গাজী মুহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, সাংবাদিক কলামিস্ট ও ধর্মীয় টিভি উপস্থাপক,কুমিল্লা।