অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী; লাকসাম আইসিটি কর্মকর্তা বহাল তবিয়তে

আইন-অপরাধ আরো কুমিল্লা চট্টগ্রাম তথ্য প্রযুক্তি পরিবেশ সারাদেশ
শেয়ার করুন...

সেলিম চৌধুরী হীরাঃ
লাকসাম উপজেলা আইসিটি দপ্তরের সহকারী প্রোগ্রামার কাজী আরফিনা ওয়াহিদের বিরুদ্ধে একের পর এক অফিসে অনুপস্থিতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরও, তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। দুই পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পর প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও, রহস্যজনকভাবে তিনি এখনো বহাল তবিয়তে আছেন।
জনসাধারণ ও দপ্তর সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলছেন—কোন অলৌকিক শক্তির বলে একজন কর্মকর্তা বছরের পর বছর অফিস না করেও সরকারি বেতন-ভাতা পেতে পারেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি!
গত সংবাদ প্রকাশের পর কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়েছিল। ওই তদন্তের, তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাউসার হামিদ গত ৭ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করেছেন বলে জানিয়েছেন৷ কিন্তু আড়াই মাস পার হয়ে গেলেও সেই তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি৷
আরফিনা ওয়াহিদের অনিয়মের ধারাবাহিকতাঃ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের লাকসাম উপজেলা কার্যালয়ে সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে ২ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে কাজী আরফিনা ওয়াহিদ যোগদান করে ১৮ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত কাগজপত্রে কর্মরত থাকলেও বাস্তবে তিনি অফিস করতেন না৷ (গত দুটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত উপস্থাপন করা হয়)৷
দ্বিতীয় মেয়াদে ২০২৪ সালের ১০ জুলাই যোগদানের পর থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত কাজী আরফিনা ওয়াহিদ পুরনো অভ্যাস অনুযায়ী অনিয়মিত থেকে গেছেন। আগের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৪ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাকে অফিসে একাধিকবার খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি দপ্তরগুলো তার অনুপস্থিতির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছিল।
জেলা প্রোগ্রামার মোহাম্মদ বশির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি জেনেছি তিনি নিয়মিত অফিস করেন। অথচ উপজেলার ইউএনও জানিয়ে দিয়েছেন, “গত ৮ মাসে (মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত) ৪-৫ দিনের বেশি তিনি তাকে দেখেননি। তার সহকারী আছে সেটাও জানতেন না।” দুই কর্মকর্তার বক্তব্যে বিপরীত অবস্থান স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠে জেলা কর্মকর্তা তাহলে কি চেষ্টা করছেন?
গত তিন মাস তিনি কিছুটা নিয়মিত হলেও পূর্বের ৮ মাসের বেতন ভাতা তিনি নিয়েছেন অফিস না করেই৷ এই বিষয়ে কোন ব্যবস্থা কি তাহলে নেওয়া হবে না?
দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট দপ্তর তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং তিনি এখনো স্বপদে বহাল আছেন এবং অফিসে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
এই প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে কুমিল্লা জেলা প্রোগ্রামার এবং আইসিটি অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আরফিনা ওয়াহিদের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদের কপি প্রেরণ করা হয়েছে। যদিও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আমরা ডিজি মহোদয়কে জানিয়েছি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার তার। তবে ডিজি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি।
স্থানীয় অনেকে মনে করছেন, তার স্বামী ঢাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন প্রোগ্রামার হওয়ায়, তিনি ঢাকার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন। সেই জোরেই হয়তো তদন্ত প্রতিবেদনের কার্যক্রম ‘আটকে আছে’৷
সরকারি খাতে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে, এমন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। শুধু কাগজে কলমে তদন্ত নয়—বাস্তবিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। নয়তো এই ধরণের “অলৌকিক” অফিস না করেও বেতন পাওয়া একপ্রকার সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়াবে। স্থানীয় সেবাগ্রহীতা, দপ্তরের কর্মকর্তা ও সচেতন মহল আরো মনে করেন, এ ধরনের কর্মকর্তা শুধু ব্যর্থতা নয়, প্রশাসনিক দুর্নীতির একটি প্রতিচ্ছবি। তড়িৎ ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আস্থার সংকট সৃষ্টি হবে।
সরকারি টাকার অপচয় বন্ধে, সরকারি কোষাগার রক্ষায়, সেবার মান রক্ষায় এবং আইসিটি সেবার উন্নয়নে, লাকসামের জনগণ আজ একটি জবাবদিহিমূলক প্রশাসনের অপেক্ষায়।
পাশাপাশি লাকসামের মানুষ শুধু একজন কর্মকর্তার জবাব নয়, পুরো প্রশাসনের নৈতিক দায় ও জবাবদিহি দেখতে চায়।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.