অনুমতি ছাড়াই হাশেম ফুডস কারখানায় কেমিকেল গুদাম: বিস্ফোরক পরিদপ্তর

আইন-অপরাধ ঢাকা পরিবেশ সারাদেশ
শেয়ার করুন...

অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু- ৫২ জন

রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। ছবি -ফোকাস বাংলা
রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। ছবি -ফোকাস বাংলা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকার হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ছয়তলা ভবনে কেমিকেল গুদাম ব্যবহারে কোনো লাইসেন্স দেওয়া হয়নি বলে প্রাথমিক পরিদর্শন শেষে জানিয়েছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর।
শুক্রবার বিস্ফোরক পরিদপ্তরের একটি দল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ দলে নেতৃত্ব দেন বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. আব্দুর রব।

আব্দুর রব সমকালকে জানান, তাদের পরিদর্শনের সময় ভবনে আগুন জ্বলতে থাকায় তদন্ত শেষ করতে পারেনি। আবারও পরিদর্শন করে টিমের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এর ভিত্তিতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ আগুনে হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় কর্মরত ৫২ জন শ্রমিক মারা গেছেন। শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ৪৯ জন হতভাগ্য শ্রমিকের মরদেহ আনা হয়েছে। তাদের শরীর এতটাই পুড়ে গেছে যে তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এ ঘটনায় এখনও অনেক শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) দেবাশীষ বর্ধন জানান,ভবনটিতে প্লাস্টিক, পেট্রোসিনথেটিক কেমিক্যাল পদার্থ, রেজিন, বিভিন্ন জুসের ফ্লেভার, রোল, ফয়েল প্যাকেট ও কার্টনসহ বিভিন্ন মালামালে গুদাম ভর্তি ছিল। প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন ভয়াবহ রূপ নেয় বলে তারা জানিয়েছেন। তাতে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে তাদের।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ সমকালকে বলেন, ‘বিস্ফোরক পরিদপ্তর থেকে এই প্রতিষ্ঠানকে কোনো লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। তারা ফুড কেমিকেল নিয়ে কাজ করার কারণে অন্য সংস্থার লাইসেন্স নিতে পারে। তবে বিস্ফোরক পদার্থের গোডাউন করলে অবশ্যই লাইসেন্স নিয়ে করতে হবে। তারা অনুমতি ছাড়া বিস্ফোরক পদার্থ নিজেদের মতো করে গোডাউনে রাখলে আইন অনুযায়ী শাস্তি হবে।’

তিনি জানান, কেমিক্যালের গোডাউন ব্যবহার করতে নকশাও অনুমোদন করে নেয়নি হাশেম ফুডস। তবে এ প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ফায়ার স্টিংগুইশার আমদানির অনুমতি নিয়েছিল।

কারখানার ব্যবস্থাপক কাজী রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘কারখানা ভবনটি কেন্দ্রীয় গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হত। ভবনে বিভিন্ন জুসের ফ্লেভার, রোল, ফয়েল প্যাকেটসহ বিভিন্ন মালামাল ছিল। এই আগুনের সূত্রপাত বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে। আগুন লাগার পর শ্রমিকরা আটকা পড়েন ‘

এফবিসিসিআই-এর কেমিক্যাল ও শিল্পবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘এই অগ্নিদুর্ঘটনার ভয়াবহ হয়েছে পেট্রোসিনথেটিক কেমিক্যাল পদার্থ ও রেজিনের কারণে। এ কারখানার মধ্যে অতিরিক্ত পেট বোতল ও পলি প্যাকেটসহ নানা প্লাস্টিক পণ্য ছিল। এমনকি শ্রমিকদের গায়ের পোশাক ছিল পলেস্টারের। এসব কারণে আগুনে ক্ষতি অনেক বেশি হয়েছে।’

তিনি জানান,এ ধরনের একটি কারখানায় যত জনের থাকার কথা তার তিন গুণের বেশি লোক ছিল। কারখানা ভবনে যে পরিমাণ মালামাল রাখার বিধান আছে, তার চেয়ে পাঁচ গুণ মালামাল মজুদ করা ছিল। কাঁচামাল থেকে শুরু করে তৈরি পণ্য সবই ওখানে মজুদ ছিল। কারখানা ভবনের মধ্যে গুদাম ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ কারখানা গুদাম ব্যবহার করায় বদ্ধ ছিল। এতে ভিতরে অনেক দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়েছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে জ্বলেছে।

কেমিক্যাল খাতের ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেন বলেন, এই কারখানা ভবনে নানা অনিয়মের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিএসটিআই ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে শিল্প ভবনের অনুমোদন নেওয়া হলেও শর্ত মেনে এই কারখানা পরিচালনা করা হয়নি। আইন না মানার কারণে অনেক বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। পরিকল্পিত কারখানা হলে এমন দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া যেত। সমকাল

image_pdfimage_print

শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.