
লাকসাম প্রতিনিধি
এই রাস্তায় দুই যুগেও সরকারি ভাবে এক টুকরো মাটি পড়েনি, ইট-পাথর তো দূরের কথা। নির্বাচন এলে প্রার্থীরা রাস্তাটি পাকা করার প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচনের পর আর মনে থাকে না। এই রাস্তার জন্য কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন, কৃষিপণ্য নিতে পারছেন না। বাচ্চারা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। বর্ষায় রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি বর্ষায় মরার খাট পর্যন্ত নেওয়া যায় না।’
লাকসাম উপজেলার গোবিন্দপুর ইউপির ৬ নং ওয়ার্ডের ভাটবাড়িয়া – গজরাপাড়া এলাকার রাস্তাটির দুর্দশা নিয়ে এমন মন্তব্য করেন স্থানীয় হারুন (৪২)।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে সরেজমিনে ওই এলাকা পরিদর্শন করেন স্হানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা রাস্তাটির দুর্দশার কথা জানান।
তারা জানান, মাটির রাস্তাটি নিয়ে এই এলাকার মানুষের ভোগান্তি দীর্ঘদিনের।
প্রতিদিন গোবিন্দপুর ও মৈশাতুয়া ইউনিয়নের ইছাপুরা, সাতঘর,ভাটবাড়িয়া, গজরাপাড়া, নিশ্চিন্তপুর, ইসলামপুর, মৈশাতুয়া সহ অন্তত
সাত থেকে আটটি গ্রামের পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ চলাচল করেন। এ ছাড়া নীলকান্ত সরকারি ডিগ্রি কলেজ বিদ্যালয়, ইছাপুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অসংখ্য নুরানী মাদ্রাসাসহ শহরমুখী শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এ রাস্তা ব্যবহার করেন।
বছরের প্রায় সবসময় পানি জমে রাস্তাটি কর্দমাক্ত অবস্থায় থাকে। ফলে চলাচলের সময় মাঝেমধ্যে শিক্ষার্থীদের জামা-কাপড় ও বই-খাতা নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া কৃষিপণ্য, অসুস্থ রোগী ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে।
রিয়াদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে। অনেক স্থানে রাস্তার মাটি খালের মধ্যে পড়েছে। জোয়ারের পানি রাস্তার ওপর দিয়ে গড়িয়ে ফসলের মাঠে প্রবেশ করছে। টানা বৃষ্টিতে রাস্তায় হাঁটুপানি জমে।
হাফেজ রবিউল বলেন, জন্মের পর এই রাস্তায় সরকারি ভাবে মেরামত করতে দেখিনি। রাস্তাটি মেরামত, সংস্কার বা পাকা করা তো দূরের কথা। বিগত সরকারের আমলে মেম্বার-চেয়ারম্যানের বাড়ি এই এলাকায় না হওয়ায় তারা সড়কটি মেরামতের উদ্যোগ নেন নি। একটু বৃষ্টি হলেই পানি উঠে যায়, ৪ মাস পুর্বে গাড়ি উল্টো আমি আহত হয়ে এখন পঙ্গুত্ব ভাবে জিবন যাপন করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গজরাপাড়ার হিন্দু ভদ্রলোক জানান – সড়কটির বেহাল অবস্থার কারনে আমাদের সাথে কেউ আত্নীয়তা করতে চায়না, মেয়েদের বিয়ে দিতে কষ্ট হয়।
‘সড়কটি পাকা হলে লাকসাম – মনোহরগন্জ সদরের সঙ্গে স্থানীয়দের যাতায়াত সহজ হবে। সাধারণ মানুষ লাকসাম শহরমুখী হলে তাদের উপার্জন বাড়বে। পাশাপাশি জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে। কৃষিপণ্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে লাকসাম পৌর শহরে পৌঁছানো যাবে। সর্বোপরি রাস্তাটি পাকা হলে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ উপকৃত হবেন। তাই জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাটি পাকা করার জন্য দাবি জানাচ্ছি’- বলেন আনোয়ার হোসেন ।
২০২৪ সালে ঘটে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পরবর্তী সময়ে মাটির সড়কটি সংস্কার না করায় সামান্য বৃষ্টিতে গর্তে পানি জমে যায়। অনেক জায়গায় জমেছে ১ থেকে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত কাঁদা ও বালি। অন্তত ৭/৮টি স্থানে দেবে গেছে। এসব জায়গায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন ও একটি দ্রুত পাকা করনের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মেম্বার শহীদুল্লাহ, আলমগীর হোসেন, দুলাল মিয়া, আনোয়ার হোসেন, কাওসার আলম, আবু ইউসুফ, আনোয়ার হোসেন সহ শতাধিক এলাকাবাসী ।
