জহুরুল ইসলাম হালি, রাজবাড়ীঃ
বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত পাটের ৭শতাংশ পাট আবাদ হয় রাজবাড়ীতে। গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশী জমিতে পাটের আবাদ করেছে চাষিরা। তবে পাট কাটা ও পঁচানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরেছেন তারা। শ্রমিক সংকটে অতিরিক্ত মজুরি এবং ভরা বর্ষা মৌসুমেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিল, পুকুর ও ডোবা-নালায় পানির স্বল্পতা দেখা দেওয়ায় কাটা পাট পঁচাতে না পারাই দুশ্চিন্তার কারণ।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৪৯হাজার ১শ ২২হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১হাজার হেক্টর বেশী। ফলন ও ভালো হয়েছে। কৃষি বিভাগ আশা করছে রাজবাড়ীতে এবছর ১লাখ ২৫হাজার মেট্রিক টন পাট উৎপাদিত হবে।
সরেজমিন জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশীর ভাগ জমির পাট কাটা শুরু হয়নি, চাষিরা মূলত বৃষ্টির পানির জন্য অপেক্ষা করছেন। বৃষ্টির পানিতে মাঠে জলাবদ্ধতা শুরু হলে পুরোদমে পাট কাটা শুরু করবেন। এছাড়াও রয়েছে শ্রমিক সংকট। কিছু জমিতে অতিরিক্ত শ্রমিকের মূল্য দিয়ে যাওবা পাট কেটেছে তাও অনা বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ খাল-বিল, পুকুর ও ডোবা-নালায় পানির স্বল্পতা থাকায় চাষিরা পাট জমিতেই ফেলে রাখতে বাধ্য হচ্ছে। এতে অনেক পাট জমিতেই শুঁকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দু একটি খাল-বিলে পানি থাকলেও তার দুরত্ব জমি থেকে অনেক দুরে। যার কারণে কেউ কেউ ড্রাম ট্রাক, ঘোড়ার গাড়ি, ভ্যানে করে নিয়ে সেখানে পাট পঁচানোর চেষ্টা করছেন। আবার অনেকেই বাড়ি বা সড়কের পাশের ডোবা-নালায় শ্যালো মেশিন ও মোটরের পানি দিয়ে পাট পঁচানোর চেষ্টা করছেন। যার ফলে বাড়তি খরচও গুনতে হচ্ছে চাষিদের। এছাড়াও অনেক চাষি বাধ্য হয়েই খাল-বিল, পুকুর ও ডোবা-নালার স্বল্প পানিতেই পাট পঁচাচ্ছেন। স্বল্প পানিতে পাট পঁচানোর কারণে পাটের আঁশও কালো হয়ে যাচ্ছে। জমিতে পাটের ফলন ভালো, বাজারে দামও ভালো কিন্তু নানা সংকটে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার চিন্তায় চাষিরা।
গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নে রমজান মাতুব্বর পাড়ার কৃষক আমজাদ দেওয়ান বলেন, এ বছর ৬ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছি। ফলনও ভাল হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছি না। তাই ঘোড়ার গাড়িতে করে পাট এনে মরা পদ্মা নদীতে জাগ দিচ্ছি, খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। হাটে পাটের দাম ও চাহিদা রয়েছে। এ অবস্থা থাকলে হয়ত খরচের মূল টাকাটা উঠে আসবে।
অপর কৃষক মদন ফকির বলেন, ৪ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছি। ডোবায় পানি না থাকায় পাট কেটে মাঠে ফেলে রেখেছি। রোদে পাট পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে এবার শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছেনা। যাওবা পাচ্ছি তাদের মজুরিও আকাশ ছোঁয়া। পাট আবাদ ভালো হলেও এখন পাট কাটা ও জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদ ওয়াহাবপুর এলাকার কৃষক আলাউদ্দিন শেখ বলেন, পানির অভাব, অনাবৃষ্টির কারণে এখনো পাট কাটা পুরোপুরি শুরু হয়নি এর আগে পাট চাষের শুরুতে অতি বৃষ্টির কারনে ১০ বিঘা জমির পাটের মধ্যে ২বিঘা জমির পাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হই। এখন আবার টানা খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে পাট কেটে পঁচানো দুস্কর হয়ে পরেছে। পাশাপাশি শ্রমিক সংকটতো রয়েছেই। বাজারে পাটের দাম ভালো থাকলেও এ অবস্থায় শ্রমিকের অতিরিক্ত শ্রম মূল্য ও অনাবৃষ্টির কারণে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম সহীদ নুর আকবর বলেন, চলতি মৌসুমে চাহিদা সম্পন্ন বৃষ্টি না হওয়া এবং খাল-বিল, পুকুর ও ডোবা-নালায় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কৃষকদের রিবন রেটিং পদ্ধতিতে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে পাট পঁচানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই পদ্ধতি ব্যবহার করছেন না চাষিরা। তিনি আরো বলেন এ বিষয়ে গত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বিস্তর আলোচনা হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।