মৌকারা মাদ্রাসা কমপ্লেক্স সুপারের পদত্যাগের দাবীতে মানববন্ধন

আরো ইসলামিক কুমিল্লা চট্টগ্রাম পরিবেশ শিক্ষা সারাদেশ
শেয়ার করুন...

কুমিল্লা নাঙ্গলকোটের ঐতিহ্যবাহী মৌকারা মাদ্রাসার কমপ্লেক্স সুপার ও কামিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মাওলানা আনোয়ার হোসেনের পদ ত্যাগ চেয়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা গত ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার নাঙ্গলকোট পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়কে মিছিল ও বটতলা চত্বরে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করে স্বারক লিপি প্রধান করেন নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুরাইয়া আক্তার লাকীর নিকট। মানববন্ধনের সময় মাদ্রাসার কামিল, ফাজিল, আলিম দাখিল শ্রেণীর কয়েকশতাধীক ছাত্র অংশ নেন। সকলের পক্ষ থেকে স্মারক লিপিতে স্বাক্ষর করেন মাজহার ইসলাম।মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মাদ্রাসা ছাত্র আব্দুল আউয়াল ফয়সাল, জুবায়ের হোসেন, মাজহারুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম, মোঃ হাসান সহ প্রমুখ। স্মারক লিপিতে ছাত্ররা হেফজখানা ও মহিলা মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রীরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন বৈষম্য অনিয়ম ও নির্যাতনের শিকার হইয়া আসতেছি। এখানে আবাসিকে খাবার রান্নার জন্য প্রায়ই বাবুর্চি থাকেনা ফলে ছাত্রদেরকে দিয়ে বাধ্য করে রান্না করানো হয়। এবং সময় মত খাবার না দিয়ে পচাঁবাসী খাবার পরিবেশন করা হয় প্রায় সময়। ছাত্রদের কাছ থেকে মাসিক ২০০০ টাকা ধার্য করে খাবার বাবৎ নিয়ে থাকে। মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিং এর জন্য 

এতদাঞ্চলের সর্বসাধারণের অনুদান, টাকা, গরু, ছাগল সহ বিভিন্নভাবে প্রচুর সহায়তা আসে। তথাপিও আমাদেরকে মানসম্পন্ন খাবার পরিবেশন

করা হয় না। বৃষ্টির দিনে রুমে পানি ঢুকে বিছানা বই নষ্ট হয়ে যায়। আলিয়া (জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে পরিচালিত) অংশের ছাত্রাবাস ভবনে

কোন টয়লেট, ওজুখানার ব্যবস্থা না করায়  ফলশ্রুতিতে ছাত্ররা কঠিন মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত ভবন

থাকলেও সেখানে শিক্ষাপোযোগী কোন ক্লাশ রুম নাই। তাই ছাত্রদেরকে আজকে এই রুমে পরদিন অন্য রুমে ক্লাশ করতে হয়। অনার্স, ফাজিল

ও কামিল (স্নাতকোত্তর) স্তরে ক্লাসের অবস্থা আরো মারাত্মক। এইসব শ্রেনীর নির্ধারিত কোন শ্রেণীকক্ষ না থাকায় ছাত্রদের লাইব্রেরীতে বসিয়ে

কম্বাইন্ড ক্লাস দেওয়া হয়। ফলে তাদের নির্দিষ্ট সিলেবাসের আলোকে শ্রেণী কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। এব্যপারে ভাইস প্রিন্সিপাল হুজুর ও বিভাগীয় প্রধান

হুজুরের সাথে এই  যোগাযোগ করলে প্রতিষ্ঠানের অভাবের কথা বলে নছিহত করেন। অথচ এটা কমপ্লেক্সের পরিচালিত প্রতিষ্ঠান এখানে

অভাব থাকার কোন কথাই নাই। পরে প্রিন্সিপাল হুজুরের কাছে গেলে তিনি সমস্যাগুলো সমাধান করার ওয়াদা দিয়েছেন কিন্তু আশানুরূপ কোনো

পদক্ষেপ আমাদের চোখে পড়েনি। দ্বীনিয়া (জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে পরিচালিত প্রাইভেট শাখা) মাদ্রাসার ছাত্রদের কথা বলার কোন সুযোগ বা

অধিকার নাই। কথায় কথায় বহিষ্কারের হুমকি এবং লিল্লাহ বোর্ডিং এর আর্থিক সুবিধা গ্রহণের খোঁটা দেওয়া হয়। অথচ লিল্লাহ ফান্ডের টাকা

আসেই গরীব এতিম মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য। এ শাখায় একজন ভালো অংক ও ইংরেজীর শিক্ষক নাই। উপযুক্ত আরবী শিক্ষক নাই অথচ

আলিম/একাদশ শ্রেণী খুলে ছাত্রদের সার্টিফিকেট আটকিয়ে জোরপূর্বক ভর্তি করানো হচ্ছে। ছাত্রদেরকে ছোটখাট বিষয়ে কঠিন শারীরিক শাস্তি

দেয়া হয়। একাডেমিক ভবনের বারান্দায় নিয়ে কান ধরে উঠবস করানো এবং বেত দিয়ে শারিরীক নির্যাতন করা হয়। বেতন দিতে দেরি হলেও

সেইম নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়। শিক্ষকদের সাথে এইসব নিয়ে কথা বললে তারা বলেন উপরের নির্দেশ। আমাদের পড়া লেখা বাদ দিয়ে

রান্নাঘরে ও খানকার ডিউটি করতে বাধ্য করে যার কারণে পড়া লেখার ডিস্টার্ব হয়। এই ডিউটি করতে অস্বীকার করলে লিল্লাহ ফান্ড থেকে

সুবিধা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি এবং পূর্বের সকল টাকা ফেরত দিতে হবে বলে হুমকি দেয়। এখনো কামিল পাশ করে নাই অথবা কিতাব পড়ানোর

অনুপযুক্ত প্রিন্সিপালের ঘনিষ্ট এমন ব্যক্তিদের শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফলে মানসম্পন্ন শিক্ষা ছাত্ররা পাচ্ছে না। দ্বীনিয়ার প্রিন্সিপাল আলিয়া

মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ও কমপ্লেক্সের সুপার হওয়ার কারণে ছাত্র-শিক্ষক কেউ এসব নিয়ে কিছু বলার সাহস পায়না। কোনো শিক্ষক তার

বিপরীতে গেলে তিনি কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য ডাইরেক্টরদেরকে দিয়ে হয়রানি করেন। যে সকল ছাত্র অনিয়মের বিরোদ্ধে তাদেরকে দ্বীনিয়ার

প্রিন্সিপালের ছেলে ছানিম গ্যাং নিয়ে ছাত্রদের উপর বিভিন্ন সময় হামলা চালায় যা খুবই দুঃখজনক। মহিলা মাদ্রাসা সম্পূর্ণ শরয়ী পর্দা মত চালানোর

কথা থাকলেও এখানে যুবক পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অন্য প্রতিষ্ঠানের বর্তমান আলিম (একাদশ) ও ফাজিলের (ডিগ্রী) ছাত্রকেও শিক্ষক

হিসাবে রাখা হয়েছে। এরা ছাত্রীদের সাথে অশালীন ও ইংগিত মূলক কথা বলে এবং শারীরিক শাস্তি দেয় যা ইতোমধ্যে ব্যপকভাবে সমালোচনার

জন্ম দিয়েছে। এই বিষয়ে মাদ্রাসার সভাপতি জনাব সাইফুদ্দিন আলমগীর চেয়ারম্যানকে জানালেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। মহিলা শিক্ষক

কর্মচারী যারা নিয়োগ পেয়েছে তারা সবাই দ্বীনিয়ার প্রিন্সিপাল তথা কমপ্লেক্স সুপারের আত্মীয়। এদের কেউ কেউ রিডিং ও পড়ে ভুলভাল।

ছাত্রীদের জন্য উপযুক্ত টয়লেট ওজুখানা না থাকায় যে টয়লেট আছে সেখানে পুরুষ শিক্ষকরাও ব্যবহার করতে আসে। যা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য

লজ্জাজনক বিষয়। এমতাবস্থায় আমাদের পড়ালেখা ও ছাত্রাবাসে জীবন যাপন দুর্বিষহ হইয়া উঠেছে। এইসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে

কমপ্লেক্সের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ভাবে আমাদেরকে হয়রানি ও নির্যাতন করে। এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী নেতা

কমপ্লেক্সের ডাইরেক্টর হওয়ায় ছাত্রশিক্ষকরা মুখবুজে অধিকার বঞ্চিত থাকতে হয়। শারীরিক মানসিক নির্যাতন ভোগ করতে হয়। তাই আমাদের

পড়া লেখার সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ এবং অধিকার রক্ষা করতে আপনাদের হস্তক্ষেপ কামনা করতেছি। ছাত্রদের দাবিসমূহের মধ্যে প্রধান দাবি মাদ্রাসার ছাত্রশিক্ষকদের উপর অনৈতিক টর্চার ও পদক্ষেপগ্রহণকারী, পদ-যোগ্যতা-ক্ষমতার অনধিকার চর্চাকারী, চরম দুর্নীতিবাজ কমপ্লেক্স সুপার মাওঃ আনোয়ার হোসেনকে আলিয়া মাদরাসার সহকারী শিক্ষক পদসহ কমপ্লেক্সের সকল দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হবে।

অন্যান্য দাবি হচ্ছে সকল বৈষম্য ও অনৈতিকতায় সহযোগিতা ও বৈধতা দান, ছাত্র নির্যাতনের মৌনসমর্থন করার কারণে অধ্যক্ষ মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাহেবকে সার্বিক বিষয়ে নিজের অবস্থান খোলাসা করতে হবে। অন্যথায় আলিয়া সংক্রান্ত সকল দায় স্বীকার করত পদত্যাগ করতে হবে।গত ১৫ বছরে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও বিভিন্ন সরকারি অনুদান ব্যয়ের তদন্ত করে প্রকাশ করতে হবে।গত ১৫ বছরে লিল্লাহ বোর্ডিংসহ দরবারের সকল আয় ব্যয় নিরপেক্ষ অভিজ্ঞ নীরিক্ষক দিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে।

আলিয়ার ছাত্রাবাস ভবনের সংস্কার করতে হবে এবং টয়লেট ওজুখানার ব্যবস্থা করতে হবে  আলিয়া মাদ্রাসার লুটপাট বন্ধ করে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও শিক্ষার্থী বান্ধব ক্লাশ রুমের ব্যবস্থা করতে হবে। অনার্স ও কামিল ক্লাশের

জন্য নতুন সরকারী ভবনে নির্দিষ্ট একাডেমিক শ্রেণী কক্ষ, ফ্যান, লাইট ও ফার্নিচার ব্যবস্থা করতে হবে। এভাবে আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগ সহ ১৯ টি দাবি ছাত্ররা নির্বাহী অফিসারের নিকট দেন। ছাত্ররা তাদের বক্তব্য বলেন-

আমরা কেউই দরবার ও মাদরাসার বিরোধী নই। বরং আমরা দুর্নীতি ও অনৈতিকতার বিরোধী। আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি ও অনৈতিকতার ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত হোক এটাই ২০২৪ এর সংস্কার পন্থী ছাত্রদের প্রত্যাশা।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.