মনপুরা প্রতিনিধিভোলার মনপুরা বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ চোখ উঠা বা কনজাংটিভাইটিস ভাইরাস রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমবেশি এ রোগটির প্রাদূর্ভাব দেখা দিলেও এবার মনপুরায় এই রোগটির প্রাদূর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জ্বর ও চোখ উঠা বা কনজাংটিভাটিস রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পরছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন হাসপাতালে শতাধিকের ওপরে জ্বরসহ চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাসেবা নেন। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত হাসপাতালের বাইরে গড়ে অর্ধশতাধিকের ওপরে রোগী চিকিৎসা সেবা নেন। এতে করে হাসপাতালে চোখের ড্রপের সংকট দেখা দিয়েছে।
সরজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা হাজিরহাট,দক্ষিণ সাকুচিয়া, উত্তর সাকুচিয়া, মনপুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এ রোগে বয়স্কদের চেয়ে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
এতে উদ্বিগ্ন অনেক অভিভাবক সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে তাদের সন্তানদের স্কুল মাদ্রাসা পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। শুধু শিশু নয়, সব বয়সের মানুষকেই এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। সংক্রমিতরা বেশিরভাগই বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে অনেকেই অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চোখ ওঠা রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুরুতে চোখে ময়লা পড়ার অনুভূতিতে চোখে হাল্কা চুলকানি শুরু হয়ে চোখ গোলাপি বা লাল হতে পারে। পরে চোখ ফুলে গিয়ে প্রচণ্ড রকম অস্বস্তি লাগতে থাকে। চোখ ব্যাথা হয়ে ঝাপসা দেখা, এমনকি চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরাসহ ময়লা বের হতে থাকে।
কনজাংটিভাইটিস ভাইরাস আক্রমণ বন কর্মকর্তা আব্বাস বলেন,‘ হঠাৎ চোখ লাল হয়ে গেছে, ভাবলাম চোখে বালি বা অন্য কিছু পড়েছে, তাই চোখে পানি দিলাম, কোন লাভ হলো না। পরের দিন দেখি এক চোখ পুরো লাল হয়ে আছে, তখন বাড়ির পাশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ডাক্তারকে দেখালাম তখন তিনি বললেন আমার চোখ ওঠেছে। কিছু নিয়ম মানতে হবে সঙ্গে ঔষুধ ও ড্রপ ব্যবহার করার জন্য বললেন। এখন আমার দুই চোখ লাল হয়ে আছে, ডাক্তারের দেওয়া ঔষুধ খাচ্ছি ও ড্রপ ব্যবহার করছি। দেখি কমে কি না।’তবে ডাক্তার এর দেওয়া এই ড্রপ মনপুরার বিভিন্ন বাজারে ফার্মেসি গুলোতে পাওয়া যায় না।এতে করে অনেক রোগী বিপাকে আছেন
চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, হঠাৎ করেই কনজাংটিভাইটিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে ভাইরাস সংক্রমণ।তারা বলছেন, কনজাংটিভাইটিস বা চোখ-ওঠা একটি মেডিকেল অবস্থা যেখানে চোখের স্বচ্ছ ঝিল্লিতে (কনজাংটিভা) প্রদাহ বা সংক্রমণ ঘটে। এটি সাধারণত ভাইরাজ সংক্রমণের কারণে ঘটে, যা অত্যন্ত সংক্রামক।তবে সুখবর হলো, এক সপ্তাহের মধ্যে বেশিরভাগ রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে চোখ ওঠা রোগের প্রকোপ দেখা দেওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন ঔষধের দোকানে চোখের ড্রপের চাহিদা বেড়েছে। এদিকে এই চাহিদাকে পুঁজি করে একশ্রেণির ওষুধ ব্যবসায়ী দ্বিগুণ দামে চোখের ড্রপ বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ আক্রান্ত রোগীসহ স্বজনদের।
মনপুরা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আশিকুর রহমান অনিক বলেন, চোখ উঠা রোগে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটি ভাইরাসজনিত রোগ এবং পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ নিরাময় হয়ে যায়। অহেতুক আক্রান্ত চোখ ঘষামাজা করা যাবে না। চোখকে বিশ্রাম দিতে হবে। চোখের কাজ যেমন পড়ালেখা, টিভি, মোবাইল ব্যবহার সীমিত করতে হবে। নিজের ও অন্যের চোখ ঝুঁকিমুক্ত রাখতে চোখে কালো সানগ্লাস ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.তৈয়বুর রহমান জানান,চোখ উঠা বা কনজাংটিভাইটিস ভাইরাস রোগের প্রাদুর্ভাব দেশের সকল প্রান্তে দেখা দিয়েছে। এতে আতংকিত হওয়ার কিছু নাই।ফার্মেসি চোখের ড্রপ বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,আমরা সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাইনি।তবে কোন অভিযোগ পেলে ওষুধ আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।