মোঃ শাকিল আহমেদ, বামনা( বরগুনা) প্রতিনিধিঃ
এনসিটিএফ জাতীয় পর্যায়ের একটি শিশু সংগঠন যা শিশুদের দ্বারা গঠিত ও পরিচালিত। বাংলাদেশ সরকার এনসিটিএফ গঠনের প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করে ২০০৩ এর সেপ্টেম্বরে এবং এনসিটিএফ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয় ২০০৫ এর জানুয়ারিতে।
যদিও এনসিটিএফ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল যৌন নির্যাতন, বঞ্চনা ও পাচার বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি পরিবীক্ষণ (মনিটরিং) করার জন্য, কিন্তু পরবর্তীতে এনসিটিএফ-এর ভূমিকা পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানে সমগ্র দেশের শিশু অধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, মনিটরিং করা এবং পরবর্তীতে তা নিয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ্যাডভোকেসি করাই হচ্ছে এনসিটিএফ এর প্রধান কাজ।
এনসিটিএফ এর লক্ষ্য:
এনসিটিএফ এর লক্ষ্য হল,জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী বাংলাদেশের শিশুদের সকল অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং বাংলাদেশকে একটি শিশুবান্ধব দেশ হিসেবে গড়ে তোলা।
এনসিটিএফ এর উদ্দেশ্য:
১.শিশু অধিকার সনদ কতুটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং তার অগ্রগতি কী তা (তৃণমূল, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে) নিভীড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিং করা। ২.শিশু যৌন নিপীড়ন, শোষণ এবং শিশু পাচার-এর বিরুদ্ধে সরকারের গৃহীত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিং করা।
৩.সর্বস্তরে শিশুদের বৈষম্যহীন অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি ও শিশুদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বড়দের সাথে নানা কাজে শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং পলিসি পরিবর্তনে উদ্যোগ গ্রহণ করা
৪.শিশু অধিকার বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে দায়িত্বশীল ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গকে শিশু অধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে অবগত করা।
এনসিটিএফ এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীতা:
এনসিটিএফ শিশুদের অধিকার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। শিশুরা অধিকার সচেতন হলে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাদের উপর ক্ষতিকর আচরণ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে। এনসিটিএফ শিশুদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে। এনসিটিএফ তৃণমূল (ইউনিয়ন) পর্যায় থেকে শিশু নির্যাতন কমানোর চেষ্টা করে। তৃণমূল (ইউনিয়ন) পর্যায় থেকে শিশু অধিকার পরিস্থিতি জাতীয় পর্যায়ে তুলে আনায় শিশু নির্যাতন ধীরে ধীরে কমে আসবে। নির্যাতিত শিশুরা এনসিটিএফ সদস্যদের নিকট তাদের সমস্যার কথা এবং সাফল্যের কথা বলতে পারে এবং এনসিটিএফ সদস্যরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। জাতীয় পর্যায়ে শিশু নির্যাতন বন্ধ করার জন্য সরকারি, বেসরকারি ও দাতা সংস্থাসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই বিভিন্ন স্তরে কাজ করে, যে কাজের বাস্তবায়ন ও মনিটরিং জন্য এনসিটিএফ বিশেষ ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য পৃথক বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে। শিশুবান্ধব স্থানীয় সরকার গঠনে অবদান রাখতে পারবে।
এনসিটিএফ উপজেলা কমিটি:
২০০৯ সালের শুরু থেকে এনসিটিএফ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের এলাকায় কাজ করার সুবাদে এর কার্যক্রম সংক্ষিপ্তভাবে কিছু উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত হয়। এনসিটিএফ উপজেলা পর্যায়ের সদস্যগণ সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এনসিটিএফ এর গঠনতন্ত্র এবং নির্বাচন সংক্রান্ত নির্দেশনা মেনে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কার্যকরী কমিটি গঠন করবে। সিআরজি প্রকল্পের কার্যক্রম না থাকলে এবং সেভ দ্য চিলড্রেন এর অন্য কোন প্রকল্পের কার্যক্রম থাকলেও সেই প্রকল্পের শিশু সদস্যরা নিজ নিজ এলাকায় এনসিটিএফ এর গঠনতন্ত্র মেনে উপজেলা কমিটি গঠন করতে পারবে অথবা অন্য কোন সংস্থার পক্ষ থেকেও শিশুরা একত্রিত হয়ে উপজেলা কমিটি গঠন করতে পারবে। তবে সিআরজি প্রকল্পের কর্মএলাকা না হলে উপজেলা কমিটিকে অবশ্যই এনসিটিএফ নামে চলমান থাকার শুরুতেই সংশ্লিষ্ট জেলা কার্যনিবাহী কমিটির অনুমতি নিতে হবে এবং বিষয়টি অবশ্যই সংশ্লিষ্ট জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হবে। উপজেলার আওতাধীন আগ্রহী শিশুদের অবশ্যই এনসিটিএফ সদস্যফরম পূরণ করতে হবে এবং যতদ্রুত সম্ভব জেলা এনসিটিএফ কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদনের জন্য জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রেরণ করতে হবে।
চাইল্ড পার্লামেন্ট:
চাইল্ড পার্লামেন্ট সারাদেশের শিশুদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি শিশু সংগঠন। শুরুতে চাইল্ড পার্লামেন্ট একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম শিশু সংগঠন হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে ইহা এনসিটিএফ এর ভিতর অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। এটি এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে শিশুরা তাদের অধিকার ও চাহিদাগুলো জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা করে এবং বিষয়ভিত্তিক সুপারিশমালা সংশ্লিষ্ট মহলের নিকট তুলে ধরে। চাইল্ড পার্লামেন্টের উদ্দেশ্য হল একটি শিশু সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলা যেখানে শিশুরা নীতি-নির্ধারকদের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। প্রতিটি জেলায় শিশুদের দ্বারা নির্বাচিত ১৪ বছর থেকে শুরু করে ১৮ বছরের নিচের বয়সী চাইল্ড পার্লামেন্টের ১ জন মেয়ে এবং ১ জন ছেলে শিশু সাংসদ আছে। তাদের মধ্যে থেকে ১ জন শিশু সাংসদ চাইল্ড পার্লামেন্ট অধিবেশনে জেলা প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করে থাকে। একবার কোন শিশু সাংসদ পার্লামেন্টে অংশগ্রহণ করলে পরবর্তী সেশনে অবশ্যই অন্যজন অংশগ্রহণ করবে। এছাড়া ২০টি পিছিয়ে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে ৪০জন (২০জন ছেলে ও ২০জন মেয়ে) নির্বাচিত শিশু সাংসদ আছে। এদের মধ্য থেকে প্রতি চাইল্ড পার্লামেন্ট সেশনে ২০জন (১০জন ছেলে ও ১০ মেয়ে) অংশগ্রহণ করবে।বলা যাক বামনা উপজেলা এনসিটিএফ এর কথা। বামনার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে নানা রকম কাজ করে থাকে।
উপজেলা এনসিটিএফ টিম বিভিন্ন স্কুলে কমিটি দিয়ে থাকে।
বুকাবুনিয়া , আসমাতুন্নেসা,হলতা ডৌয়াতলাসব বেশ কয়েকটি স্কুলে কমিটি গঠন করছে ।
প্রতি তিন মাস পর এই স্কুল কমিটিদের নিয়ে ত্রৈমাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে ।
এবং এর পাশাপাশি তারা লটারি ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে।
পবিত্র মাহে রমজানে বামনা উপজেলা এনসিটিএফ পথশিশুদের জন্য ইফতার মাহফিল করে থাকে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে মেহেদী উৎসব করে থাকে
২১ ফেব্রুয়ারি ও ফুল অর্পন করে থাকে।
২৬ এ মার্চ ফুল অর্পন এবং রং তুলির ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। রং তুলি করার মাধ্যমে সবার নজর কেড়ে নেয় এনসিটিএফ সদস্যদের। বামনা এনসিটিএফ টিম বলেছে “ আমাদের মতো অন্য শিশু কিশোরদের অনুপ্রেরণা যোগাতে এই কাজের মূল উদ্দেশ্য।