মিন্টু ইসলাম শেরপুর বগুড়া প্রতিনিধি:
বগুড়ার শেরপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিনামূল্যে সার বীজ বিতরণের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। রোপ আমনের (উফসী জাত) ফসলের আবাদ ও ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি প্রণোদনা কর্মসুচী বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রকৃত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের পরিবর্তে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে ভূয়া কৃষকের নাম ব্যবহার করে সরকারের কৃষি প্রণোদনার উপকরণ (সার ও বীজ) আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রণোদনা কর্মসুচীর আওতায় খরিপ/২০২৪-২৫ মৌসুমে রোপা আমন ধানের উফশী জাতের বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামুল্যে বিতরণের জন্য শেরপুর উপজেলায় ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৫ টাকার সার বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়। উপজেলায় ১০ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার সর্বমোট ১ হাজার ৯৭০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিঘাপ্রতি ৫ কেজি ধান বীজ, ১০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার বিনামুল্যে উপজেলা সদর থেকে বিতরণ করার জন্য নির্দেশণা দেয়া হয়। সে মোতাবেক উপজেলা কৃষি অফিস থেকেই কৃষকদের মাঝে এসব বিতরণ করতে দেখা যায়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিদের্শনা অনুযায়ী রোপা আমন (উফসী জাত) ফসল আবাদের সম্ভাবনার নিরিখে উপযুক্ততা ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বিভাজন অনুযায়ী উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাগণ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক নির্বাচন করে কৃষকের অগ্রাধিকার খসড়া তালিকা প্রস্তুত করবেন। উপজেলা কৃষি পুর্নবাসন বাস্তবায়ন কমিটি উক্ত খসড়া তালিকা অনুমোদন করে শতার্বলী অনুযায়ী উপকরণ বিতরণ করবেন। উপকরণ বিতরণে কৃষি কার্ডের উপকরণ সহায়তা অংশে উপকরণ বিতরণের পরিমাণ লিপিবদ্ধ করে যথারীতি মাষ্টাররোল সংরক্ষণ পুর্বক বিতরণ করবেন। মাষ্টাররোলে উপকরণ গ্রহণকারী কৃষকের স্বাক্ষর ও ষ্ট্যাম্প সাইজের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর যুক্ত করতে হবে।
অথচ শেরপুর উপজেলায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের এসব নিদের্শনার অধিকাংশই মানা হয়নি। কৃষি উপকরণ কার্ড ছাড়াই এবং প্রকৃত কৃষক ছাড়াও ( যারা আবাদের সঙ্গে জড়িত নয়) এমন ব্যক্তিদের নামে বিনামুল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
শেরপুর পৌরসভায় ৮০ জন কৃষকের নামে বিনামুল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। কারা এই কৃষক এই নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেননা, মাত্র কয়েক বিঘা আবাদী জমি থাকলেও উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী শেরপুর পৌরসভায় রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১০ হেক্টর।
অভিযোগ উঠেছে, শেরপুর কৃষি অফিসের ভেতরে ও বাইরের একটি চক্র ভূয়া কৃষকের নাম ব্যবহার করে সরকারি প্রনোদনার সার বীজ কালোবাজারে বিক্রি করে আত্মসাত করেছে। তাছাড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রণোদনার বিতরণকৃত তালিকা ডিএইর (কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর) এর জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার বিধান থাকলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তা করা হয়নি।
কৃষকের নামে কারা প্রণোদনার সার ও বীজ পেয়েছে এ তথ্য নিতে শেরপুর উপজেলা কৃষি অফিসে গেলে শেরপুর পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা জিএম মাছুদ জানান, বিভিন্ন জনের দেয়া তালিকা অনুযায়ী ৮০ জন কৃষকের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু কাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে সেই তালিকা দেখাতে কিংবা সার ও বীজ পাওয়া কৃষকের নাম বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কৃষকের তালিকা মাসুদ স্যারের কাছে আছে।
শেরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মাসুদ আলমের কাছে কৃষকের বিতরণকৃত তালিকা চাইলে তিনি তা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এই তালিকা ওয়েব সাইডে প্রকাশ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকাশ করা হবে।
শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার জানান, উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভার দেয়া তালিকা অনুযায়ী কৃষকের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। কোন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাইনি।