দেশের বসতবাড়ির ৪৫ লাখ হেক্টর জমির প্রতি ইঞ্চি কাজে লাগাতে হবে :দূর্বারবিডি

অর্থনীতি কৃষি
শেয়ার করুন...

অনলাইন ডেস্কঃ এখনও মোট উৎপাদিত ফলের ৪৭ ভাগ আসে বসতবাড়ি ও তৎসংলগ্ন জমি থেকে। আর মোট ফলের ৫৩ ভাগ উৎপাদিত হয় বাণিজ্যিক বাগানে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি জানান, ফল সমৃদ্ধ দেশ গড়তে এই দুই জায়গাতেই জোর দিতে হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বরাতে তিনি বলেন, বিগত ৫ বছরে আমের বাণিজ্যিক বাগান ও উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। নিরাপদ ফল উৎপাদনে এখনও বসতবাড়িতে ফল চাষ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বসতবাড়িতে চাষাবাদের সুবিধা হচ্ছেÑবসতবাড়িতে পরিকল্পিত উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফলদ, মসলা, সবজি ও ঔষধি বাগান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পারিবারিক খাদ্য পুষ্টি ও আয় বাড়ানো, যাতে পরিবারের সব সদস্যের শ্রম বিশেষ করে মহিলাদের শ্রম উৎপাদনের কাজে লাগিয়ে স্ব-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং ক্ষমতায়ন বাড়ানো। এছাড়া সম্পদের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার করে পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা যায়। অল্প জমিতে বেশি পরিমাণে অনেক ধরনের সবজি ও ফল উৎপাদন করা যায়। সবজি আবাদে অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগে। একই জমিতে বছরে কয়েকবার সবজি চাষ করা সম্ভব। পুষ্টির দিক থেকে প্রায় সব শাকসবজি উন্নত মানের হয়ে থাকে। বছরব্যাপী উপযুক্ত পরিমাণ সবজি খেয়ে পুষ্টিহীনতা দূর করা ও রোগমুক্ত থাকা সম্ভব।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বসতবাড়িতে কৃষির জন্য অবস্থা, পরিসর, সম্পদ, পুঁজি, ক্ষমতা, সুযোগ ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে ৪টি গ্রুপের কৃষকদের জন্য ভাগ করে বাস্তবায়ন করলে সুফল বেশি পাওয়া যাবে। প্রথমটি ভূমিহীন ও প্রান্তিক, দ্বিতীয়টি ক্ষুদ্র ও ছোট এবং তৃতীয় মাঝারি কৃষকদের জন্য। এভাবে ক্যাটাগারি করে পরিকল্পণা মডেল তৈরি করলে সফলতা বেশি আসবে। বাড়ির চারপাশে অনেক জায়গা থাকে, এসব জায়গায় সারা বছরই ফসল ও ফলদ বৃক্ষ করা যায়। বাড়ির উত্তর পশ্চিম পাশে আম, কাঁঠাল, কামরাঙ্গা, আমড়া, বেল, আমলকী, নারকেল, সুপারিসহ বড় গাছ লাগানো যায়। উত্তর- পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিমে কলা, পেঁপে, আনারস, লেবু, পেয়ারা, কুল এসব লাগানো যাবে। বাড়ির সীমানায় কাঁচকলা, পেয়ারা, কুল, সজিনা, পেঁপে ইত্যাদি চাষ করলে ভালো হবে। খোলা জায়গায় সবধরনের সবজি চাষ করা যাবে। এর মধ্যে বাঁধাকপি, লালশাক, গিলাকলমি, পুঁইশাক, পালংশাক, বাটিশাক ও ডাঁটশাক লাগালে ভালো হবে।
এক বর্ষজীবী স্থায়ী মাচায় হয় কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, শিম, চালকুমড়া, পুঁইশাক, ধুন্দল, ঝিঙ্গা, শসা, লাউ, চিচিংগা, করলা ও লাতা জাতীয় শাক-সবজি। মাচার নীচেয় বা আংশিক ছায়াযুক্ত জায়গায় করা যায় আদা, হলুদ, কচু, মাসকচু, ওলকচু, আর স্যাঁতসেতে জায়গায় পানি কচু।
ডালের বাউনি বা সাধারণ গাছে-লতাজাতীয় সবজি হিসেবে লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, ঝিঙ্গা, ধুন্দল, সিম, গোল মরিচ, পান, গাছআলু, চিচিংগা এবং অন্যান্য ফসল চাষ করা যায়।
সৌন্দর্য বাড়োনোর জন্য তেজপাতা, দারুচিনি, সফেদা, ফলসা, ডালিম, গোলাপজাম এসব রাগানো যায়। ছায়া দেওয়ার জন্য বড় গাছের মধ্যে শরিফা, আতা, সুপারি, তেজপাতা, দারুচিনি খাটো জাতের কলম বেছে নিলে ভালো হয়।
ঘরের চালে ও সাদে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, শিম, চালকুমড়া, পুঁইশাক জাতীয় লতা সবজি। আর পাকা ঘরের ছাদে টবে পেয়ারা, কুল, মরিচ, আদা, হলুদ, পেঁপে, লেবু, ডালিম ইত্যাদী লাগানো যাবে। জ্বালানির জন্য বাড়ির বেড়ায় খেজুর, বকফুল, সজিনা, মান্দার, জিকা, বাবলা, ইপিল ইপিল, ইউক্যালিপটাস ইত্যাদি।
হেজে মজে যাওয়া পুকুর সংস্কার করে মাছ চাষের উপযোগী করতে হবে। এর পাশে হাস মুরগী পালন করতে হবে। পুকুর পাড় নিম গাছ লাগাতে হবে, যাতে পানি শোধন হয়। এর সঙ্গে নারকেল সুপারির গাছ থাকবে। পুকুরের মধ্যে পানি ফল লাগানো যেতে পারে। এতে মাছ ছায়া পাবে। এছাড়া মৌমাছি, কোয়েল, কবুতর এর পাশে চাষ করা যেতে পারে। পুকুর পাড়ে পেয়ারা, কলা, লেবু, ডালিম, লাউ, করলা, ঝিঙ্গা, সঙ্গে মিষ্টিকুমড়া বা অন্যান্য লতা জাতীয় সবজি, নেপিয়ার ঘাস ইত্যাদি চাষ করা যায়। বসতবাড়ির আঙ্গিনায় জৈব পদ্ধতিতে সারা বছর সবজি চাষ করা যায়।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.