অনলাইন ডেস্কঃ বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার চিলাহাটি থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলার হলদিবাড়ি পর্যন্ত রেলপথ আবারও চালুর উদ্যোগ নিয়েছে দুই দেশ।
এর ফলে দীর্ঘ ৫৫ বছর পর আবারও চালু হতে যাচ্ছে এই রুটের রেল যোগাযোগ।
এই রেলপথ চালু হলে কলকাতা-শিলিগুড়ি যেতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় কম লাগবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন।
কারণ এই রেলপথ কলকাতা থেকে দর্শনা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের ঈশ্বরদী-পার্বতীপুর-সৈয়দপুর-নীলফামারী-ডোমার-চিলাহাটি হয়ে ভারতের হলদিবাড়ি এরপর সেখান থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাবে।
প্রাথমিকভাবে এই রুটে শুধুমাত্র পণ্য পরিবহনের জন্য মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। এজন্য বাংলাদেশের কয়েকটি পয়েন্টে পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আগামী ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই রেলপথ উদ্বোধন করবেন বলে কথা রয়েছে।
সামনের বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে যাত্রী পরিবহন শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রকল্প অনুযায়ী, বাংলাদেশের চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে ভারতের জিরো-পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার এবং এই জিরো পয়েন্ট থেকে ভারতের হলদিবাড়ি পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার, সব মিলিয়ে মোট ১০ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ ও লুপলাইনসহ আধুনিক মানসম্মত অন্যান্য অবকাঠামো নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, “যেকোনো ব্রডগেজ ট্রেন এই রুটে চলতে পারবে।”
” কেউ ট্রেনে করে শিলিগুড়ি যেতে চাইলে তারা ঢাকা থেকে সহজেই এই রুট ব্যবহার করে অল্প সময়ে যেতে পারবে। আর শিলিগুড়ি স্টেশন থেকে ভারতের সব কোনায় যাওয়ার ট্রেন রয়েছে।”
রেলওয়ে সূত্র মতে, ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান-ভারত বিভক্ত হবার পরও এ পথে যাত্রী ও মালবাহী রেল চলাচল করতো।
১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুটে ট্রেন চলাচল।
এতো বছর পরিত্যক্ত এই রেলপথকে পুনরুজ্জীবিত করতে গত বছর প্রায় ৮০ কোটি ১৭ লাখ টাকার একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ সরকার।
এই দুই দেশের মধ্যে আরও চারটি রুটে ট্রেন চলছে। সেখানে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলা হতো এই নতুন রুটের ক্ষেত্রে সেটাই প্রযোজ্য হবে বলে জানান রেলমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী ট্রেন সপ্তাহে পাঁচদিন যাতায়াত করে। খুলনা থেকে বন্ধন ট্রেন কলকাতা যাওয়া আসা করে। মোট ৪টি রুটে আমাদের যাত্রী ও মালামাল পরিবহন হচ্ছে। এটা হবে পঞ্চম রুট। আর এটার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগেরগুলোর মতোই মেইনটেইন করা হবে।”
এর অর্থ হলো, ট্রেনটি যখন বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মধ্যে থাকবে তখন বাংলাদেশি প্রশাসন ও আইনের আওতায় থাকবে এবং সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গেলে সেই দেশের আইন প্রযোজ্য হবে।
চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুটের পাশাপাশি দর্শনা, বেনাপোল, রহমানপুর, বিরল ও রাধিকাপুর রুট দিয়ে ভারতে ট্রেন চলাচলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী।
এর ফলে বাংলাদেশ ও দুই দেশের পর্যটন ও বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে জানিয়েছেন ভারতের উত্তর পূর্ব রেলপথ জনসংযোগ কর্মকর্তা শুভানন চন্দ্র।
এরিমধ্যে ভারতের অংশের সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি জানান।
গত ৮ই অক্টোবর ভারতের একটি রেল বিশেষজ্ঞ দল হলদিবাড়ি সীমান্ত রেলস্টেশন দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে একটি রেল ইঞ্জিন সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসে।
সেখানে ১০ মিনিট অবস্থানের পর ইঞ্জিনটি পুনরায় হলদিবাড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এখন তিনি অপেক্ষায় আছেন কবে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
মি চন্দ্র বলেন, “যাত্রাপথ কমে আসায় আর সময় কম লাগায় বন্দরে যোগাযোগ অনেক বেড়ে যাবে। এতে ব্যবসায় প্রসার হবে অনেক। তাছাড়া অবিভক্ত বাংলার যে সাংস্কৃতিক সংযোগ ও সৌহার্দ রয়েছে সেটাও অনেক শক্তিশালী হবে। আর যারা পর্যটক তারা খুব সহজে ভ্রমণ করতে পারবেন।” সূত্রঃ বিবিসি