আব্দুর রাজ্জাক বাপ্পী, ঠাকুরগাঁও থেকেঃ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের ভিডিও ধারণের মামলায় দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রবিবার ভোর রাতে সদরের রায়পুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে তাদের বাড়ি থেকে ঐ দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম।
এ ঘটনায় গত শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ওই ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামীরা হলেন- দুলাল (৩০), সাজু (৩২), মোহাম্মদ দুলাল (৩৫), আলমগীর হোসনে (৪০), হাফিজুর ইসলাম (৪৫) ও খকেন (৫০)।
গ্রেপ্তার হওয়া দুই যুবক হলেন- সদরের রায়পুর ইউনিয়নের ফুটানি বাজার এলাকার সোলেমান আলীর ছেলে দুলাল (৩০) ও একই ইউনিয়নের চুনিহারি গ্রামের ফয়জুল ইসলামের ছেলে মাসুদ ওরফে সাজু (৩২)।
এদিকে ঐ স্কুলছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষার করার জন্য ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন বাদির মেয়ে অষ্টমশ্রেণিতে পড়ুয়া স্কুলছাত্রী, প্রাইভেট ও বিদ্যালয়ে যাতায়াতের সময় প্রায় তার পথরোধ করে উত্ত্যক্ত করাসহ কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল দুলাল। দুলালের প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে ঐ স্কুলছাত্রী তার মত করে নিয়মিতভাবেই প্রাইভেট ও বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতো।
এদিকে গত সোমবার (১৬ মে) সকাল ১০টার দিকে ঐ স্কুলছাত্রী বিদ্যালয় থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথে দুলাল ও তার সহযোগি অটো চার্জার চালক সাজু ঐ স্কুলছাত্রীর পথরোধ করে। এরপর ঐ স্কুলছাত্রীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ভাবে অটো চার্জারে করে অপহরণ করে সদরের রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ট্রাক ট্যাংলরি অফিসে নিয়ে যায় তারা। এরপর সেখানে ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে দুলাল।
এসময় মুঠোফোনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে দুলারের সহযোগি মামলার ২ নম্বর আসামী সাজু, ৩ নম্বর আসামী মোহাম্মদ দুলাল ও ৪ নম্বর আসামী আলমগীর হোসেন। পরে তাঁরা ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা কারও কাছে প্রকাশ না করার জন্য বলে এবং প্রকাশ করলে ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেয়।
পরে স্কুলছাত্রীকে ওই ট্রাক ট্যাংলরী অফিসের বাহিরে ফেলে রেখে দুলাল ও তার সহযোগিরা পালিয়ে যায়। এসময় ঐ ছাত্রী কান্নাকাটি শুরু করলে আশপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে এবং ভেন যোগে স্কুলছাত্রীকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে স্কুলছাত্রী তার পরিবারের কাছে ধর্ষণের শিকার হওয়ায় ঘটনাটি জানায়।
মামলার বরাতে ওসি বলেন, এদিকে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে আপোষ-মিমাংশার চেষ্টা করছিল মামলার ৫ নম্বর আসামী হাফিজুর রহমান ও ৬ নম্বর আসামী খকেন। সেই সাথে মামলার আলামত নষ্টের চেষ্টা করছিল তারা।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, মামলা হওয়ার পরপরই আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে দুলাল ও তার এক সহযোগি সাজুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ধর্ষণের ভিডিও এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ধর্ষণের ভিডিও উদ্ধার ও বাকি আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে রবিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে গ্রেপ্তারকৃত দুলাল ও সাজুকে ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, তারা আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।