কুড়িগ্রাম সংবাদদাতাঃ
কুড়িগ্রামে দূরপাল্লার কোচ কাউন্টার গুলোতে ঢাকাগামী যাত্রীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুন ভাড়া আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় কোরবানির ঈদ করে ঢাকায় ফেরা যাত্রীরা মহা বিপাকে পড়েছে। অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে ফিরতে সরকার নির্ধারিত ৮শ ৪০ টাকা ভাড়ার বিপরীতে ১১শ থেকে ১৬শ টাকা ভাড়া দিয়ে ঢাকার কর্মস্থলে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুরপাল্লার বাসভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক এসোসিয়েশন। এতে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দুরত্ব ৩শ ৫৩ কিলোমিটারে নন এসি কোচের ভাড়া আসে ৬শ ৩৫ টাকা। পাশাপাশি ব্রীজের টোলসহ ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৮শ ৪০ টাকা।
সরেজমিন জানা গেছে, কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় যাতায়াতকারী নাবিল পরিবহন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নন এসি’র প্রতিটি সিটের বিপরীতে ভাড়া আদায় করছে ১৬শ টাকা। নির্বিঘ্নে যাত্রীদের পকেট কাটা হলেও এখানে প্রশাসন নির্বিকার বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার টিকিট কাটা নাইট কোচ নাবিল পরিবহনের যাত্রী মনির হোসেন জানান, কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা কোচের নন এসির ভাড়া সরকারী ভাবে নির্ধারন করা হয়েছে ৮শ ৪০ টাকা। সেখানে ঈদ উপলক্ষে দুই থেকে ৪শ টাকা বেশি নিতে পারে। কিন্তু তাকে গত ১১ জুলাই নাবিল পরিবহনে ১৪ জুলাইয়ের রাতের যাত্রার জন্য কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দুটি টিকিট কাটতে গুনতে হয়েছে ৩ হাজার দুইশত টাকা।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের নাবিল পরিবহন কাউন্টারের ম্যানেজার আব্দুর রহিম জানান, আমরা ভাড়া বেশি নিচ্ছি না। সরকারী ভাবে নির্ধারিত ৮শ ৪০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে। নাবিল পরিবহনের যাত্রী মনির হোসেনের নিকট থেকে দুইটি টিকিটের বিপরীতে ৩২শ টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মনির হোসেনের নিকট যে টিকিট বিক্রি করা হয়েছিল সেটি নাবিল পরিবহনের রিজার্ভ বাস ছিল।
বিষয়টি আমি আমার উর্ধতন কতৃপক্ষকে জানিয়ে করেছি। পরে ওই যাত্রী প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করায় বাসটি বন্ধ করে দিয়ে টিকিট ফেরত নিয়ে টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে। যা পুরোপুরি যাত্রী হয়রানি শামিল বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।
যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদের আগে ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামে আসার সময়ও তাদেরকে দূরপাল্লার প্রতিটি সিটের বিপরীতে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে।
আবার কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা ফেরার পথেও পরিবহনের প্রতিটি সিটের বিপরীতে ১১শ টাকা থেকে ১৬শ টাকা গুনতে হচ্ছে। কোচ কাউন্টারগুলোতে লাগামহীন দুর্নীতি চললেও প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকায় যাত্রীরা অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে।
কুড়িগ্রামের এনা পরিবহনের ম্যানেজার মুকুল মিয়া জানান, আমরা যাত্রীদের নিকট থেকে নির্ধারিত ভাড়া নিয়েই টিকিট বিক্রি করছি।
কুড়িগ্রামের বাসিন্দা ঢাকার গার্মেন্টসকর্মী মহসিন আলী জানান, আমি ঢাকায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরী করি। ঈদ করতে বাড়ি এসেছিলাম। এখন ফিরে যাওয়ার জন্য বেশ কিছু কাউন্টারে গেছি। সকল কাউন্টার থেকেই প্রথমে বলা হচ্ছে টিকিট নেই। পরে অনুরোধ করলে বেশি ভাড়ার বিনিময়ে তারা টিকিট দিতে রাজি হচ্ছে। কোথাও ১১শ, কোথাও ১৩শ আবার কোথাও ১৬শ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এখনও টিকিট পাইনি। যেখানে কমে পাব সেই গাড়ীতে যাবো। প্রশাসনের তদারকি না থাকায় এরকম হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম থেকে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক দূরপাল্লার কোচ ঢাকা যাওয়া আসা করে। এসব কোচের প্রতিটি কাউন্টারেই বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বেশি ভাড়া নেয়ার বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলেই টিকিট শেষ হয়ে গেছে বলে যাত্রীদের ফেরত দেয়া হচ্ছে।এ অবস্থায় কোন উপায়ান্তর না পেয়ে যাত্রীরা বেশি ভাড়া দিয়েই কর্মস্থলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
এব্যাপারে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বেশি টাকায় টিকিট নেয়ার বিষয়ে এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজনের অভিযোগ পেয়েছি। সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পাশাপাশি যাতে যাত্রীরা প্রতারণার শিকার না হন সেজন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বুধবার বিকেলে কুড়িগ্রাম শহরের ঘোষপাড়া-দাদা মোড় সড়কে নাবিল পরিবহনের কাউন্টারে অভিযান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিলা তাসনিম।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিআরটি এ কুড়িগ্রাম সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক মো: মাহবুবার রহমান। অভিযানে পিংকি পরিবহনের কাউন্টারে ৫শ টাকা জরিমানা আদায়ের পর অন্যান্য যাত্রী পরিবহনের কাউন্টারগুলোকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়।