মোঃ সেলিম উদ্দিন, (কক্সবাজার)
কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন চৌফলদন্ডীর ৭ নাম্বর ওয়ার্ডের উত্তর পাড়ার একটি পরিবারকে প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন করছে। কয়েক দফায় বসতবাড়ি ভাঙচুর ও মারধরের পরও সুষ্ঠু বিচার থেকে বঞ্চিত পরিবারটি। ন্যায় বিচারের আশায় ভূক্তভোগী পরিবার থানা পুলিশ ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়েও কোন কিছুই হচ্ছে না।
প্রাপ্ত তথ্যে মতে উক্ত ইউনিয়নের আলী আকবরের পরিবারটি ছোটখাটো একটি পরিবার। স্ত্রী, পুত্র এবং কন্যা সন্তান নিয়ে এলাকায় দীর্ঘদিন বসবাস করছে তারা। তাদের বসতভিটার পার্শ্বে জমি ক্রয় করা তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বসত বাড়ির অপর পাশে যে জমিটা ক্রয় করেছে তা নিয়েও বিরোধ বাঁধছে প্রতিপক্ষরা।
আলী আকবরের স্ত্রী রাশেদা বেগম (৪৫) জানান, তার স্বামী তাদের বসত ভিটার লাগোয়া দক্ষিণ পার্শ্বে অল্প জমি ক্রয় করে। জমির মালিক জমি দখল বুঝিয়ে দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও প্রতিবেশী কয়েকজন তাদেরকে এ জমির দখল নিতে দিচ্ছে না। জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষরা গত ও চলতি মাসে দফায় দফায় বসতবাড়িতে ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে তিনি ও পুত্র মোহাম্মদ রাসেল উদ্দিন গুরুতর আহত হন। বিষয়টি তারা স্থানীয় চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মুজিবকে অবহিত করেন। নানা অজুহাতে চেয়ারম্যান সমাধান দিতে কালক্ষেপণ করেন বলেও অভিযোগ করেন রাশেদার কলেজ পড়ুয়া পুত্র মোঃ রাসেল উদ্দিন।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে তারা ৯৯৯ এ ফোন দিলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই বুলবুলকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তিনি সরেজমিন গিয়ে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার নির্দেশ দেন। পরে বসতবাড়িতে আবারো ভাংচুর করলে চেয়ারম্যানকে পুনরায় জানান। চেয়ারম্যান স্থানীয় চৌকিদার এরশাদকে ঘটনাস্থলে পাঠালেও তার ভূমিকা ছিল সম্পূর্ণ রহস্যজনক।
এমতাবস্থায় ভুক্তভোগীরা নিরুপায় হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তার প্রেক্ষিতে এসআই বুলবুল পুনরায় ঘটনাস্থলে যান। অভিযোগ পত্রে নুরুল কবির, নুরুচছফা ও নুরুল ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তরা একই এলাকার মৃত আনছুর আলীর পুত্র।
ভুক্তভোগীরা আরো জানান, প্রতিপক্ষরা গত এপ্রিল মাসের ১৯ ও ২৬ তারিখ এবং চলতি মাসের ৩ তারিখ তাদের বাসা বাড়িতে আক্রমণ চালায় এবং তারা প্রতিনিয়ত হুমকি ধামকির সম্মুখীন। এমতাবস্থায় নির্যাতিত পরিবারের সদস্যরা জীবন বাঁচাতে স্থানীয় ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
চেয়ারম্যান জানান, আলী আকবর পরিবারের সদস্যদের মারধর ও ঘরবাড়ী তালাবদ্ধ করার সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বৈঠকে বসারও আহ্বান জানাই। পরবর্তীতে আবারো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে আমি আবারো তাদেরকে নিভৃত রাখার চেষ্টা চালাই। উঠানের মধ্যে রাসেলরা আরসিসি পিলার স্থাপন করায় ঘটনাটি আরো জটিল হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে তারা আমার কাছে না এসে আদালতের আশ্রয় নেয়। এমতাবস্থায় আমার কিছু করার আছে বলে আমি মনে করিনা।
এসআই বুলবুল জানান, ৯৯৯ এর খবরের ভিত্তিতে আমরা তদন্তে গিয়েছি এবং উভয় পক্ষের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখি। পরবর্তীতে আলী আকবর বিরোধীয় জমিতে ১৪৪ ধারার আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে উভয় পক্ষকেই স্থিতাবস্থায় রাখার নির্দেশ দেন। বর্তমানে আমাদের এসআই শিপন বিষয়টি কার্যকরে কাজ চালাচ্ছেন।
গ্রাম পুলিশ এরশাদ জানান, বিবাদমান পক্ষগুলো এলাকায় অসামাজিক পরিবার হিসেবে পরিচিত। জমিজমা নিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনও তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দুপক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি। তারা ন্যূনতম সম্মান দেখাতেও ব্যর্থ হয়। তাদের পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপে আমি কয়েক ঘন্টা গৃহবন্দি হয়ে পড়ি। ঘটনায় উভয় পক্ষের দোষ রয়েছে। চাচা-ভাতিজার এ লড়াইয়ে বসতবাড়ি, গোয়ালঘর সহ পাল্টাপাল্টি মারধরের ঘটনা ঘটেছে। আগে আলী আকবর পক্ষ শক্তিশালী থাকলেও এখন অপর তিন ভাই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। চেয়ারম্যান বারবার কাগজপত্রসহ বসে সমাধা করে দেয়ার কথা বললেও কোনো পক্ষই তা কর্ণপাত করছে না।