মোহাম্মদ রায়হান বারিঃ নারায়ণগজ্ঞ থেকেঃ ভারত থেকে গম রফতানি বন্ধের ঘোষণায় একদিনের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জে বেড়েছে আটা-ময়দার দাম। খুচরা বাজারে আটার দাম কেজিতে আট থেকে ১০ টাকা এবং ময়দার দাম ছয় টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তা আটা-ময়দায় ২০০-২৫০ টাকা বেড়েছে। মিল মালিকদের অভিযোগ দেশে যথেষ্ট মজুত থাকলেও আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে গমের দাম বাড়িয়েছেন। এতে আটা-ময়দার বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিতাইগঞ্জের পাইকারি বাজারে একদিনের ব্যবধানে ৫০ কেজির বস্তার আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে ২০০-২৫০ টাকা। ভালোমানের ৫০ কেজির আটার বস্তা এখন ২২৫০ থেকে ২৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একদিন আগেও তা ১৯৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নি¤œমানের আটা এখন ২১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একদিন আগে যার দাম ছিল ১৯০০ টাকা। অন্যদিকে মান ভেদে ২৪৮০ থেকে ২৬০০ টাকায় বিক্রি হওয়া ময়দার বস্তা এখন ২৬০০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নিতাইগঞ্জের ‘মেসার্স নূর জাহান ট্রেডার্স’ নামে পাইকারি আটা-ময়দা দোকানের স্বত্ত্বাধিকারী শাহআলম হোসেন বলেন, প্রতিদিন আটা-ময়দার দাম বস্তাপ্রতি এক থেকে দেড়শ’ টাকা করে বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বেড়েছে। গম সংকটের কারণে দফায় দফায় দাম বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে।
আটা-ময়দার পাইকারি বিক্রেতা ওমর ফারুক বলেন, “আজ আটার বস্তা ২২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা একদিন আগেও ২০০০ টাকায় বিক্রি হতো। বস্তা প্রতি দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা বেড়েছে। একইভাবে ময়দার দামও বেড়েছে। এখন প্রতি বস্তা ময়দা ২৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।” গম সংকটের কারণে এ অবস্থা বলে দাবি করেন তিনি।
পাইকারি বাজারে আটা-ময়দার দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৮-১০ টাকা।
বন্দরের ছালেহনগর এলাকার মুদি দোকানি রাজু আহমেদ বলেন, ‘আজ ২২০০ টাকা দিয়ে এক বস্তা আটা কিনেছি। দাম অনেক চড়া। সে হিসেবে প্রতিকেজি আটার দাম পড়েছে ৪৪ টাকা। পরিবহন খরচ যোগ করে ৪৮-৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে হবে। প্রতি কেজিতে ৮-১০ টাকা বেড়েছে। আর ময়দার দাম কেজিপ্রতি ছয় টাকা বেড়েছে। এখন বস্তা কেনা পড়ে ২৮০০ টাকায়। খরচ যোগ করে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
বাগবাড়ি এলাকার মুদি দোকানি ফারুক হোসেন বলেন, গত বৃহস্পতিবার ১৭৬০ টাকায় আটার বস্তা কিনেছি। আজ দাম অনেক চড়া, ২২৫০ টাকা চাইছে। এ জন্য দোকানের জন্য আটা কিনিনি। আগের মাল থাকায় কম দামে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। নতুন মাল কিনলে দাম বাড়বে।
এদিকে আটা-ময়দার দাম বাড়ানোর বিষয়ে আমদানিকারকদের সিন্ডিকেটকে দোষারোপ করছেন ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা।
মেসার্স নিউ শীতল ফ্লাওয়ার মিলের স্বত্ত্বাধিকারী আমিনুর রহমান অপু বলেন, ‘রমাজন মাসে গমের দাম বাড়তে শরু করে। তখন ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। রমজানের শেষ সময়ে এসে দাম বেড়ে ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকা হয়েছে। ঈদের পরে সেই দাম আবার বেড়ে ১৩০০ থেকে ১৩৫০ টাকা হয়েছে। এভাবে দফায় দফায় দাম বেড়ে ২০০০ টাকায় ঠেকেছে।’ মাল সংকট থাকলে দাম আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
মেসার্স দিবা ফ্লাওয়ার মিলের স্বত্ত্বাধিকারী মো. দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, ‘গমের দাম বাড়ায় আটা-ময়দার দাম বেড়েছে। গম আমদানিকারকরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা ইচ্ছে করলেই বাজার স্বাভাবিক রাখতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, কানাডা ও ভারতের গম দিয়ে আমরা ময়দা তৈরি করে থাকি। ময়দার গম এখন ২১০০ টাকা মণ হয়েছে, যা কিছুদিন আগেও ১৯৫০ থেকে ২০০০ টাকা ছিল।
দাম বাড়ানোকে সিন্ডিকেটের কারসাজি দাবি করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মিল মালিক বলেন, ‘বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশ থেকে গম আমদানি করে। তারা কয়েক মাসের জন্য গম আমদানি করে মজুত করে রাখে। তাছাড়া আগের যেসব মালের এলসি সম্পন্ন হয়েছে সেসব পণ্য এখনও রফতানি করছে ভারত। এরপরও আমদানি বন্ধের অজুহাতে একদল অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। দেশে এখনও যথেষ্ট গম মজুত রয়েছে।’
নিতাইগঞ্জ খুচরা ও পাইকারী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদির বলেন, ‘আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এক দেড় মাসের গম একসঙ্গে কিনে। ভারত থেকে গম দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণায় দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই। অথচ আটার দাম বস্তা প্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে। গমের সংকট থাকলে দাম আরও বাড়বে।