গোকুল চন্দ্র রায় বীরগঞ্জ দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ সনাতনী পরম্পরা জাগরনে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম দিনাজপুরে একত্রে ২০ হাজার কণ্ঠে পবিত্র ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পাঠ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশ নেন দিনাজপুরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলা উপজেলার বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভক্ত ও পুণ্যার্থীবৃন্দ।
শনিবার (২৭ এপ্রিল ২০২৪) সকালে রংপুর বিভাগীয় পবিত্র বেদ ও শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শিক্ষাদান সংঘের আয়োজনে ঐতিহাসিক শ্রীশ্রী কান্তজীউ মন্দির চত্বরে ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পাঠ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভুমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি। উদ্বোধন ছিলেন সাবেক এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভুমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বলে কিছু নেই। এদেশ হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্মের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন করেছি। এই দেশে সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার রয়েছে। আমরা বাঙালি, আমরা নাগরিক দিক থেকে আমরা বাংলাদেশি। অতএব আমরা এখানে সংখ্যালঘু নই। তবে আমাদের যে সাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের ইতিহাস রয়েছে, সেই ইতিহাস আমাদের ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বাংলাদেশ শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনার। তবে কিছু ব্যক্তি তাদের ব্যক্তি স্বার্থে অথবা রাজনৈতিক স্বার্থে উস্কানি দিয়ে মানুষকে সামাজিক ভাবে বিভ্রান্ত করে। সুতরাং আমাদের দীর্ঘ দিনের সম্প্রীতি কেউ যদি ক্ষুন্ন করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
উদ্বোধক সাবেক এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, দিনাজপুরে একত্রে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ সমগ্র বাংলাদেশে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। পবিত্র গীতাকে অন্তরে ধারন করলে কাউকে দেশ ত্যাগ করতে হবে না। গীতা পূর্নাঙ্গ একটি জীবন দর্শন। গীতাকে অবলম্বন করলে সুন্দর একটি জীবন ধারন করা যায়। তিনি বলেন, সকল ধর্মের মানুষের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাই দেশের সকলের সমানভাবে বসবাসের অধিকার রয়েছে। তিনি বলেন, দেবোত্তর সম্পত্তি সুরক্ষা আইন পাশের বিষয়ে সকলকে এক সাথে অধিকার আদায়ের বিষয়ে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান।
দিনাজপুর শ্রীশ্রী গীতা সংঘের সভাপতি সুনীল চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য দ্রৌপদী দেবী আগরওয়ালা, ভারতের বিবেকানন্দ মিশন শান্তিনিকেতনের অধ্যক্ষ ড. শ্রী মানস ভট্টাচার্য, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী ও সাংবাদিক বীরমুক্তিযোদ্ধা ড. মনোরঞ্জন শীল ঘোষাল, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও রাজনীতিবিদ কালিপদ মজুমদার, দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর এস্টেট এর এজেন্ট রনজিৎ সিংহ, ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডিসি রায়, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ নূর এ আলম। সঞ্চালনায় ছিলেন রংপুর বিভাগীয় পবিত্র বেদ ও শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পাঠ আয়োজক কমিটির আহবায়ক তুষার রঞ্জন রায়।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এক সাগর রক্তের এই দেশকে স্বাধীন করেছিলাম। সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির পিতা ১৯৭২ সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা এনে সকল ধর্মের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। দুঃখের বিষয় ৭৫ এর ১৫ আগস্ট ৭১ এর পরাজিত শক্তিরা জাতির পিতাকে হত্যা করে আবারও সম্মুখ সাড়িতে আসে। কিন্তু পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে যেমন বাংলাদেশকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তেমনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করার জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, একত্রে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠের আয়োজন করে বাংলাদেশে ইতিহাস রচনা করেছেন আয়োজক কমিটি। এই ধরনের অনুষ্ঠান বাংলাদেশে প্রথম এবং এটি নিঃসন্দেহে সকলকে অনুপ্রানিত করবে। শ্রীশ্রী কান্তজীউ মন্দির দিনাজপুরের তথা বাংলাদেশের গৌরব।
এর আগে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন প্রধান অতিথি ও উদ্বোধকসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। আলোচনা শেষে শান্তি প্রার্থনা করান দিনাজপুর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী বিভাত্মানন্দ মহারাজ।