আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ আফগানিস্তান থেকে এসে ভারতের যৌনপল্লীতে ঠাঁই নিয়েছিলেন কাদের খান৷
আফগানিস্তানে পুনরুত্থান ঘটেছে তালেবানের। মাত্র কয়েক সপ্তাহে দেশটির বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান বাহিনী।
সরকার গঠন এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আফগানিস্তানে তালেবানদের অকস্মাৎ পুনরুত্থান এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার প্রধান উপকরণ। সেখানে আটকেপড়া বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। নিরাপত্তার অযুহাত দেখিয়ে খোদ আফগানিদের কেউ কেউ অন্য দেশে চলে যেতে চাইছে।
বলিউডের কিংবদন্তি কমেডি ও খলঅভিনেতা কাদের খানও আফগানিস্তান ছেড়ে ভারতে এসেছিলেন।
আফগানিস্তানের চলমান পরিস্থিতিতে তার সেই ঘটনা ফের সামনে আনল ভারতীয় গণমাধ্যম।
ভারতীয় অভিনেতা কাদের খান মূলত পশতুন বংশোদ্ভুত আফগানিস্তানের নাগরিক।
১৯৩৭ সালে ২২ অক্টোবর কাবুলে জন্ম হয়েছিল তার। তার বাবা ছিলেন কান্দাহারের বাসিন্দা এবং মা ছিলেন পাকিস্তানের বাসিন্দা।
যে কারণে পশতুনের পাশাপাশি উর্দু-হিন্দিতেও দখল ছিল তার।
এক ভিডিওতে নিজের জীবনযুদ্ধ সম্পর্কে বলতে গিয়ে কাদের খান জানিয়েছিলেন, কাবুল থেকে পালিয়ে এসে তার পরিবারের ঠাঁই হয়েছিল ভারতের এক যৌনপল্লীতে।
পুরনো ওই সাক্ষাৎকারে প্রয়াত অভিনেতা জানিয়েছিলেন, আমার জন্মানোর পরেই আমার মা কাবুল থেকে বের হওয়ার সুযোগ খুঁজছিলেন। তিনি অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়েন। সেই সময় চরম দারিদ্রতার মধ্যে দিন কাটছিল আমাদের। কাবুলে নানা অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছিলাম আমার। মা তখন বলেছিলেন, সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত স্থান নয় এটা। কাবুল ছাড়ার ব্যাপারে মা নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। এরপরেই মিলিটারি কনভয়ের সঙ্গে আমারা ভারতে আসি।
আফগানিস্তান থেকে ভারতে এসেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে তা কিন্তু নয়। উল্টো আরো বিপদে পড়ে যায় কাদের খানের পরিবার।
তিনি অকপটেই জানিয়েছিলেন, ভারতে পা রাখার প্রতিনিয়ত লড়াই করে যেতে হয়েছে আমাদের। প্রথমে মুম্বাই আসি। ঠাঁই হয়েছিল মুম্বাইয়ের কামাঠিপুরা বস্তিতে। যা একটি যৌনপল্লী এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপরে বাধ্য হয়ে পুনরায় বিয়ে করেন মা। কিন্তু সৎ বাবার অত্যাচার দিন দিন বাড়তে শুরু করে।
কাদের খান জানিয়েছিলেন, এমন অভাবের মধ্যেও তা মা তাকে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে বলতেন। তিনি আমাকে বুঝিয়েছিলেন, ৪-৫ টাকা আয়ের জন্য আমাদের বাড়িতে খুশি বা খাবার আনবে না। যদি সত্যি তুমি আমাদের পরিবারে খুশি আনতে চাও সেক্ষেত্রে তুমি পড়াশোনা কর। অন্য কিছু না। এখানে লড়াই করার জন্য আমি আছি।
মায়ের উৎসাহে কাদের খান ইসমাইল ইউসুফ কলেজ থেকে স্নাতক হন এবং পরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন।
এর পরেই দিলীপ কুমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ তার জীবন পুরোপুরি বদলে দেয়। কাদের খান ১৯৭০ সাল থেকে একবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ৪৫০টির বেশি হিন্দি ও উর্দু সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ২৫০টির বেশি ভারতীয় সিনেমার সংলাপ লিখেছেন। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান টাইমস