শহীদ পরিবার ৫ লাখ, আহতরা পাবে ১ লাখ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদদের প্রত্যেক পরিবারকে প্রাথমিকভাবে পাঁচ লাখ এবং আহতদের প্রত্যেককে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

আহতদের ক্ষতিপূরণের অর্থ যত দ্রুত সম্ভব প্রদান করা হবে এবং ঢাকায় অনুষ্ঠেয় স্মরণসভায় শহীদ পরিবারের হাতে চেক তুলে দেয়া হবে।

প্রধান উপদেষ্টা নেতৃত্বাধীন কমিটি সমাজের সব পর্যায়ের মানুষ, বিদেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতি জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে অনুদান প্রদানের আহ্বান জানায়।

কমিটি ফাউন্ডেশন পরিচালনার জন্য একটি অফিস স্পেস এবং স্বেচ্ছাসেবক খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এছাড়া সভায় জুলাই-আগস্ট গণজাগরণের সমস্ত ভিডিও, ছবি, মৌখিক ইতিহাস ও অন্যান্য নথি ও স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ ও আর্কাইভ করার সিদ্ধান্ত হয়।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস সভায় জানান, যেকোন পরিমাণ অনুদানের অর্থ নথিভুক্ত করা উচিত এবং দাতাদের তালিকা সংরক্ষণ করতে হবে। তিনি বলেন, সম্ভব হলে তাদের নাম ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা উচিত। এই ফাউন্ডেশন গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। একে সফল করতে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা আরো জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবে। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে যে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে তা সরকারের চিকিৎসা ব্যয়ের অতিরিক্ত হিসেবে দেয়া হবে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ এবং ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ কাজী ওয়াকার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।




রিমান্ডে যুবলীগ নেতা রুবেল ‘বাদাম বেঁচে খেলেও ভালো করতাম’

রাজনীতিতে জড়িয়ে অনুতপ্ত বলে জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে পুলিশকে জানিয়েছেন রাজশাহীর শীর্ষ সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা জহিরুল হক রুবেল। পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডে থাকা রুবেল জিজ্ঞাসাবাদের বলেন, ‘রাজনীতিতে জড়িয়ে ভুল করেছি। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থেকে বাদাম বেঁচে খেলেও ভালো করতাম। এখন এমন বিপদে পড়তে হতো না।’ এরপর রুবেল শুধু কান্নাকাটি করছেন।

তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত ৫ আগস্ট রাজশাহীতে যুবলীগ নেতা রুবেলকে ছাত্র জনতার মিছিলে দুইহাতে পিস্তল নিয়ে গুলিবর্ষণ করতে দেখা যায় ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওতে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ প্রায় অর্ধশত আহত হন। তাদের মধ্যে সেদিন আহত শিক্ষার্থী সাকিব আনজুম সবুজ ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলী রায়হান ৮ আগস্ট মারা যান।

এ বিষয়ে পৃথক মামলায় রুবেলকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়।

জানা গেছে, গত ১৩ আগস্ট রাতে কুমিল্লা থেকে রুবেলকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। রাজশাহী আনার পর তাকে আলী রায়হান হত্যা মামলায় ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রিমান্ডের চতুর্থ দিনে রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে হতাশা প্রকাশ করে রুবেল আরও বলেছেন, ‘রাজনীতি করে অনেকেই লাভবান হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজশাহীর শীর্ষ নেতারা কেউ এখনও গ্রেপ্তার হননি। তবে তিনি ফেঁসে গেছেন।’

রুবেল দুই হাতে দুই পিস্তল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মিছিলে গুলির কথা রিমান্ডের প্রথম দিনই স্বীকার করেছেন। আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতেও রুবেল প্রস্তুত আছেন বলে জানা গেছে।

রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আলী রায়হান হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) তাজউদ্দিন এবং সাকিব আনজুম হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শরীফুল ইসলাম উপস্থিত থেকে ছাত্র-জনতার উপর হামলার খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা করছেন।

এসআই তাজ উদ্দিন বলেন, ‘রুবেল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তবে অস্ত্র ও অর্থের উৎস এখনও জানা যায়নি। পুলিশের হাতে ধরা পড়লে সবাই অনুতপ্ত হয়। রুবেলও এখন অনুতপ্ত।’

সাকিব আনজুম হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘আলী রায়হান হত্যা মামলার রিমান্ড শেষে সন্ত্রাসী রুবেলকে আমিও রিমান্ডে চাইব।’

রাজশাহীর শীর্ষ সন্ত্রাসী রুবেলকে সবাই এক নামে চেনে। সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করা আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটোর বন্ধু তিনি। তার মাধ্যমে মেয়র লিটনের ‘ডানহাত’ হিসেবে কাজ করতেন রুবেল।

রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে রুবেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, জমি দখল, অস্ত্র লুট, মাদক পাচার ও বিস্ফোরক আইনে ছয়টি মামলা ছিল। ৫ আগস্টের পর দুটি হত্যাসহ তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়েছে। তিনি দুইবার রাসিকের ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন।

গত বছরের ২১ জুনের নির্বাচনে পরাজিত রুবেল কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়ে প্রস্রাব করার সিসিটিভি ফুটেজ তখন ফেসবুকে ভাইরাল হয়।