নওগাঁয় অবৈধ জাল নিধনে যৌথ অভিযান

আব্দুল মজিদ মল্লিক, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: নওগাঁর সাপাহারে অবৈধ সুতি জাল নিধনে নওগাঁর পোরশায় বিজিবি ও মৎস অফিসের যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) জুবায়ের হোসেনের নেতৃত্বে মৎস কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান এবং ১৬বিজিবি নিতপুর কোম্পানির কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার মুনসেদ আলীসহ বিজিবি’র একটি টহলদল এই অভিযানে অংশ গ্রহণ করেন
এসময় ভারতীয় সীমান্তের মেইন পিলার ২৩০/৫৮আর এর নিকটস্থ পুনর্ভবা নদীতে অবৈধ সুতি জাল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে নদিতে ১ টি সুতি জাল পাওয়া যায়। পরে সুতি জালটি সকলের উপস্থিতিতে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। এ অভিযান অব্যহত থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।#




শাপলা চত্বরে নিহতদের তালিকা প্রকাশ

রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের ৫ এবং ৬ মে ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় সরকারি বাহিনীর হাতে নিহত ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার।

সোমবার (১৯ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অধিকারের পেজে তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে ৬১ জনের নাম-পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে হেফাজত সংশ্লিষ্টদের দাবি, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহতের সংখ্যা এর কয়েকগুণ বেশি। তাদের ভাষ্য, হেফাজতের ওই সমাবেশে যারা যোগ দিয়েছিল তাদের সবাই মাদরাসা ও এতিমখানার ছাত্র। আর এদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে এতিম। হত্যাকাণ্ডের পর সরকার সব লাশ গুম করে দেয়ায় ওই সব এতিম শিশুদের তথ্য অধিকারের পক্ষেও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য তাদের এ দাবির বিষয়ে অধিকারের কোনো বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশের পর সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা রাতে সেখানে অবস্থান করেন। সারাদিনে মিছিল-সমাবেশে ক্লান্ত মাদরাসাছাত্র ও শিক্ষকদে বড় অংশ মাঝরাতের দিকে প্রায় ঘুমিয়ে পড়েন। এমন সময় মতিঝিল ও আশপাশের এলাকার বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিকে অন্ধকারে নিরীহ শিশু-কিশোরদের উপর চারদিক থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ ও র‍্যাবের একাধিক টিম।

সংখ্যা যা-ই হোক, হেফাজতের সমাবেশে নিরাপত্তাবাহিনীর হামলায় যে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে, অধিকারের তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে সেটি প্রমাণিত হয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে পর্যন্ত তারা দাবি করে আসছিল, হেফাজতের সমাবেশে কোনো প্রাণহানি হয়নি।




খালেদা জিয়ার সকল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ১৭ বছর পর সচল

দীর্ঘ ১৭ বছর পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সব ব্যাংক হিসাব সচল করা হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা (সিআইসি) থেকে সোমবার (১৯ আগস্ট) খালেদা জিয়ার সব ব্যাংক হিসাব সচল করার বিষয়ে একটি চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর পাঠানো হয়েছে।

এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পরামর্শ করার পর এনবিআরের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজস্ব বোর্ডের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, বিএনপি বহু বছর ধরে এসব অ্যাকাউন্ট সচলের জন্য বলে আসছিল। তবে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এ ব্যাপারে অনুমতি না দেয়ায় কোনো পদক্ষেপ নেয়া যায়নি।

বিগত কয়েকদিন ধরে রাজস্ব বোর্ড খালেদা জিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সচলের জন্য কাজ করে আসছিল। তবে কয়টি অ্যাকাউন্ট সচল করা হয়েছে এবং অ্যাকাউন্ট কী পরিমাণ অর্থ আছে সে ব্যাপারে পরিষ্কার কিছু জানায়নি রাজস্ব বিভাগ।
২০০৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দেন। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে শেখ হাসিনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সচল হলেও এতদিন বন্ধ ছিল খালেদা জিয়ার অ্যাকাউন্ট।




বগুড়া শেরপুরের হাট-বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম এখনো ক্রেতাদের সহনীয় পর্যায়ে নেই

মিন্টু ইসলাম শেরপুর বগুড়া প্রতিনিধি: বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন চাল ও তরিতরকারির দাম এখনো ক্রেতাদের সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। অদ্য ১৯ আগস্ট সোমবার সরেজমিনে সকাল বাজার ও শেরপুর বারদুয়ারী হাটে গিয়ে দেখা যায় মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এখনো আগের মতোই রয়েছে। হাটখোলার ব্যবসায়ী আলামিন হোসেন বলেন কাঁচামালের দাম এখনো আগের মতোই আছে, কারণ পাইকারী বাজারে দাম কমেনি এখনো। আজকের হাট-বাজার অনুযায়ী খুচরা ব্যাবসায়ীদের তরিতরকারি দামগুলো হলো যেমন আলু ৫৫ টাকা কেজি,পিয়াজ ১০৫ টাকা কেজি, রসুন ২৪০ টাকা কেজি, কাঁচামরিচ ২৪০ টাকা কেজি, আদা ৩২০ টাকা কেজি, কচুর মুখি ৫০ টাকা কেজি, বেগুন ৮০ টাকা কেজি, করলা ৭৫ টাকা কেজি, ঢেড়স ৪০ টাকা কেজি, পটল ৪০ টাকা কেজি, মুলা ৫০ টাকা কেজি, কাকরোল ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শেরপুর হাটে চালের দাম পারিজাম চিকন চাল থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে, মোটা চাল আটাশ ৫২ টাকা কেজি ও উনত্তিশ চাল ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন চাল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম। জানা যায়, দুই একটি পন্যের দাম কমলেও বাকি পন্যগুলোর দাম আগের মতোই। তবে এই বাজার মুল্য অপরিবর্তিত থাকার কারণে বাজার মনিটরিং করতে ছাত্রসমাজ কাজ করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান এখনো শুরু হয়নি ফলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সময়ে দ্রব্যমূল্যের দাম কমাতে কাজ করছেনা বলে জানান হাটে আগত ক্রেতারা। এই পরিস্থিতিতে বগুড়া শেরপুরবাসী তথা দেশের আপামর জনসাধারণের চাওয়া দাম কমবেই।
কেননা গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার বিজয় অর্জন করলে জনসাধারণের মুখে হাসি দেখা যায়। এসময় থেকে নিম্ন মধ্যবিত্তদের আশা দ্রব্যের বাজার স্থিতিশীল হবে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সকল পন্যের দাম থাকবে। এজন্য প্রয়োজন সকলের প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশপ্রেমের টানে উজ্জীবিত হয়ে দ্রব্যমূল্যের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে একযোগে কাজ করা প্রশাসনসহ প্রকৃত ব্যবসায়ী ও নেতাদের। তাহলেই স্বস্তিতে এবং শান্তিতে থাকবে দেশের সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষ।




লাকসামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি পালিতঃ

দক্ষিণ কুমিল্লার জনপ্রিয় ব্যাতিক্রমধর্মী মানবিক, সামাজিক ও  সাংস্কৃতিক সংগঠন, বইপ্রেমী সংগঠনের উদ্যোগে দক্ষিণ কুমিল্লার সবচেয়ে বড় দুই বিদ্যাপিঠ, নওয়াব ফয়েজুন্নেছা সরকারি কলেজ ও দৌলতগঞ্জ গাজীমুড়া কামিল মাদ্রাসায় বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এর আগে গতকাল কর্মসূচির অংশ হিসেবে মনোহরগঞ্জ উপজেলায়ও বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি পালন করে বইপ্রেমী সংগঠন। 

সংগঠনের সভাপতি, লেখক ও একটিভিস্ট , মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ জানায় বই এবং বৃক্ষকে যত বেশি মানুষের মধ্যে ছড়ানো যাবে তত বেশি সভ্যতা সংস্কৃতির সুফল ভোগ করবে মানুষ। আমাদের সকলকে সমাজে বৃক্ষের গুরত্ব সম্পর্কে বুঝাতে হবে। শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন সমাজ গঠনের জন্য বইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। বইপ্রেমী সংগঠন এর আজকের বৃক্ষ রোপন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সমাজে বই এবং বৃক্ষের গুরুত্ব সম্পর্কে প্রচারণা চালান সংগঠনের সদস্যরা।

উক্ত কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, দৌলতগঞ্জ গাজীমুড়া কামিল মাদ্রাসার সম্মানিত প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল হান্না, ভাইস প্রিন্সিপাল ডঃ আমিনুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন,

নওয়াব ফয়েজুন্নেছা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক, ফখরুল ইসলাম লতিফ, লেকচারা, মোঃ জহির ও জাহিদুল ইসলাম প্রমূখ।

বৃক্ষ রোপন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বইপ্রেমী সংগঠন এর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,  সাধারণ সম্পাদক, কাউচার আহমেদ রাফি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, শাহিদা আক্তার ফাহিমা, প্রচার সম্পাদকঃ কবি, শরিফুল ইসলাম তানভীর। নারী ও শিশু বিষয়ক সহ সম্পাদকঃ জাকিয়া সুলতানা, সমাজ সেবা বিষয়ক সম্পাদকঃ ফাতেমা আক্তার সুজানা প্রমূখ। 




কলকাতায় নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যা: যা বললেন বাবা

“আমার একটা মেয়ে চলে গেছে, কিন্তু এখন তো কোটি কোটি ছেলে মেয়ে আমার। এই এই কোটি কোটি ছেলে মেয়েরাই তো আমার যে মেয়ে চলে গেছে, তার জন্য লড়াই করছে, তার হয়ে বিচার চাইছে।” কথাগুলো বিবিসি বাংলাকে বলেছেন কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণের শিকার ও খুন হওয়া তরুণী চিকিৎসকের বাবা।

১০ দিন আগে ওই তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ এবং হত্যার শিকার হন। এর প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা যখন নিহত তরুণীর পরিবারের সাথে কথা বলতে যান, কলকাতার উত্তর-শহরতলিতে একটা সরু গলিতে তিনতলা বাড়ির দরজার পাশে দেওয়ালে লাগানো সোনালী রঙের নাম-ফলকটা জ্বলজ্বল করছে। ইংরেজিতে ডাক্তারের নাম লেখা রয়েছে সেখানে।

তার হাতে লেখা একটা প্রেসক্রিপশন ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সাধারণত ডাক্তারদের হাতে লেখা প্রেসক্রিপশন বোঝা দায়, তবে ওই প্রেসক্রিপশনটি গোটা গোটা অক্ষরে লেখা, আবার বাংলায় লিখে বুঝিয়ে দেওয়া যে কোন ওষুধ কখন খেতে হবে।

“আমার বোনের জামাই ডাক্তার, কিন্তু দরকারে ওর সঙ্গেই কথা বলতাম,” জানাচ্ছিলেন ওই গলির উল্টোদিকের এক দোকানদার। পাড়ার একজন নারী বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “খুব ভাল ডায়াগনোসিস করত ও।”

আর ওর বাবা বলছিলেন, “কেমন ডাক্তার ছিল, সেটা তো ওর রোগীরা ভাল বলতে পারবে!”

গলির মুখে, গলির উল্টোদিকে, বাতি-স্তম্ভে কোথাও তার মুখঢাকা ছবির সামনে কিছু ফুল আর মোমবাতি, কোথাও টাঙ্গানো ব্যানার। সেখানে লেখা “আমরা আমাদের পাড়ার মেয়ের বিচার চাই।”

ওই গলি দিয়েই ৮ অগাস্ট সকাল আটটা ১০ মিনিটে হাসপাতালের ডিউটিতে বেরিয়েছিলেন ওই চিকিৎসক, শেষ বারের মতো। একটানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটিতে থাকার কথা ছিল। তার মধ্যেই তাকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয় হাসপাতালেই।

“বিকেলে একবার ওর মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল, রাত সওয়া ১১টা নাগাদ আরেকবার। সেটাই ওর সঙ্গে আমাদের শেষ কথা,” বলছিলেন ওই চিকিৎসকের বাবা।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বক্ষ-রোগ বিভাগ বা চেস্ট মেডিসিনে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি ছিলেন ওই চিকিৎসক। চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করছিলেন তিনি।

ওই চিকিৎসকের বাবার কথায়, “আগে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা ছিল না মেয়ের। ও চেয়েছিল ফিজিক্স নিয়ে পড়তে। তবে একটা সময়ে বলে যে ফিজিক্স নিয়ে পড়ার থেকে ডাক্তারিতে চান্স পাওয়া অনেক সোজা। আমরা বলেছিলাম তুই যেমন ভাল বুঝিস, সেটাই কর।”

উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে ডাক্তারি-র প্রবেশিকা জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিয়েছিলেন ওই চিকিৎসক। “মেডিক্যাল এন্ট্রান্স দিয়ে প্রথমবারে ও ডেন্টালে চান্স পেয়েছিল। পরের বার আবারও জয়েন্ট দিয়ে এমবিবিএস পড়ার সুযোগ পায় কল্যাণীতে,” জানাচ্ছিলেন ওই চিকিৎসকের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী।

এমবিবিএস পাশ করার পরে বেশ কয়েকটি হাসপাতালে কাজ করেন তিনি। “করোনার সময়ে ও (নিহত তরুণী) মধ্যমগ্রামের একটা হাসপাতালে কাজ করত। পুরো সময়টায় ও একদিনও ছুটি নেয়নি। ওখানকার ডাক্তারবাবুরা বলছিলেন সেই সময়ে ওর কাজের কথা মনে করে,” জানালেন ওই প্রতিবেশী।

তিনিই বলছিলেন, “করোনার সময়ে ও ওর মাকে বলেছিল আমার কাছে লাখ খানেক টাকা জমেছে। তোমাদের যদি কাউকে আর্থিক সাহায্য করার কথা মনে হয়, এটা দিয়ে দিও। ওর বাবার তো স্কুল-ড্রেস তৈরির ব্যবসা। সেখানকার কর্মীদের ওই অর্থ দিয়েছিল ওর মা।”

তারপর তিনি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন স্নাতকোত্তর পড়তে।

ধর্ষণের শিকার ও খুন হওয়া ওই চিকিৎসকের প্রতিবেশী বলছিলেন, “জানেন ওদের পুরো পরিবারটাই পড়াশোনা নিয়ে থাকতে ভালবাসে। ওর পড়ার ঘরে মোটা মোটা সব ডাক্তারির বই, নোটস পড়ে আছে।”

আর তার বাবা বলছিলেন, ছোটবেলা থেকেই খুব নিয়ম মেনে চলত আমার মেয়ে। চিরকাল বাংলা মাধ্যমের সরকারি স্কুলে পড়েছে। “নাইন-টেন থেকেই কখন কোন সাবজেক্ট পড়বে, কী পড়বে, সব আগে থেকে ছক কষা থাকত ওর। পড়াশোনা নিয়েই থাকত, আর বিশেষ কোনো আগ্রহ ছিল না,” বলছিলেন ওই চিকিৎসকের বাবা।

পড়াশোনা নিয়ে সময় কাটত তার, তবে গান গাইতেন তিনি একসময়ে। পরে ডাক্তারি পড়তে গিয়ে সময়ের চাপে আর সেভাবে গান গাওয়ার সময় পেতেন না বলে জানিয়েছেন তার প্রতিবেশী।

“ওর সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ এক বসন্ত উৎসবে,” বলছিলেন ওই তরুণী চিকিৎসকের দুটো বাড়ি পরেই থাকেন এমন একজন নারী। তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, “খুব ভাল গান গাইত, জানেন! ইনফ্যাক্ট এ পাড়ায় বিয়ে হয়ে আসার পরে ওকে আমি প্রথম দেখি বসন্ত উৎসবে একটা গান গাইতে। কী গান গেয়েছিল, সেটাও মনে আছে। অসমীয়া বিহুর গান ‘বিহুর এ লগন, মধুর এ লগন’ গানটা গেয়েছিল ও।”

তিনি এও বলছিলেন, “একটা সময়ে আমার হারমোনিয়ামটা কাছে ছিল না। তখন ও-ই একদিন বলল ‘বৌদি, তুমি আমার হারমোনিয়ামটা নিয়ে যাও। আমার তো সময় হয় না বিশেষ!”

আসছে নভেম্বর মাসে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল ওই তরুণী চিকিৎসকের।

তার মেয়ের ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চেয়ে যেভাবে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমেছে, তাতে মনের জোর পাচ্ছেন ওই চিকিৎসকের বাবা। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, “এখন কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। প্রথমদিকে প্রমাণ নষ্ট করার অনেক চেষ্টা হয়েছে, তার কিছু প্রুফ আমাদের কাছে আছে। ওইরকম একটা খবর পেয়ে আমরা কী তখন প্রমাণ রাখার চেষ্টা করব না কী মেয়ের কী অবস্থা সেদিকে মন দেব! কিন্তু বিচারাধীন বিষয় যেহেতু, তাই এর বেশি কিছু বলা যাবে না।”

তিনি অভিযোগ করেছেন, “তবে ওর ডিপার্টমেন্ট আমাদের সঙ্গে একদমই সহযোগিতা করেনি। কিন্তু এরকম যে একটা কিছু হতে যাচ্ছে, সেটা ও-ও আঁচ পায়নি, আমরাও কিছু বুঝিনি। হাসপাতালের ব্যাপারে বাড়িতে যেটুকু যা কথাবার্তা বলত, তাতে এরকম যে কিছু হতে পারে, সেটা বোঝাই যায়নি আগে,” জানাচ্ছিলেন ওই চিকিৎসকের বাবা।

কিন্তু এখন তার মেয়ের ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চেয়ে যেভাবে মানুষ পথে নেমেছেন, তাতে মনোবল বেড়েছে ওই চিকিৎসকের পরিবারের, পাড়া-প্রতিবেশীদের।

আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক ভুয়া কথাও ছড়ানো হচ্ছে, ছবি শেয়ার করা হচ্ছে, এগুলোও ব্যথিত করছে পরিবারকে, প্রতিবেশীদের। “এত প্রতিবাদ, বিচারের দাবিতে সারা পৃথিবীতে মিছিল, এসব দেখে এখন আমাদের মনে হচ্ছে যে লড়াইটা হয়তো জিতব আমরা,” জানাচ্ছিলেন ওই চিকিৎসকের এক প্রতিবেশী।

তার কথায়, “ওর বিচার হলে ভবিষ্যতে অন্য মেয়েদের সুরক্ষিত রাখতে পারব আমরা। আমাদের সেটাই পাওনা হবে।”




সাবেক এমপি বাহার ও কুসিক মেয়রসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে মাছুম মিয়া (২২) নামের এক যুবককে হত্যার ঘটনায় জেলার দক্ষিণ মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক এমপি আ ক ম বাহা উদ্দিন ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. তাহসীন বাহার সূচনাসহ ৬২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

রোববার (১৮ আগস্ট) গভীর রাতে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার দিশাবন্দ গ্রামের তাজুল ইসলামের পুত্র আবদুল হান্নান বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। নিহত মাসুম স্থানীয় একটি খাবার হোটেলের কর্মচারী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত হওয়ার বিষয়ে কুমিল্লা জেলায় এটাই প্রথম মামলা।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট বিকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জে সদর দক্ষিণ উপজেলার নন্দনপুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলে গুলি ও কুপিয়ে মাছুম নামের এক যুবক হত্যা করা হয়। নিহত মাছুম একই উপজেলার উত্তর রামপুর এলাকার শাহীন মিয়ার ছেলে। মামলায় সাবেক এমপি বাহার ও মেয়ে ডা. সূচনাকে (সিটি মেয়র) হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে থাকা অপর ৬০ আসামি হচ্ছেন, কুমিল্লা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক আবদুল্লাহ আল-মাহমুদ সহিদ, সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, কুমিল্লা সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আহম্মেদ নিয়াজ পাভেল, কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টু, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান পিয়াস, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হাবিবুর আল আমিন সাদী, ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর সাইফুল আলম রনি, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর সরকার মাহমুদ জাবেদ, কুমিল্লার বাগিচাগাঁওয়ের কাউসার জামান কায়েস, তালপুকুর পাড়ের সুজন দত্ত, কালিয়াজুড়ির মুরাদ মিয়া, কাউন্সিলর আজাদ হোসেন, কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন, কাউন্সিলর ইকরামুল হক, রেইসকোর্সের আবদুল কাইয়ূম, কাউন্সিলর আবুল হাসান , সাবেক কাউন্সিলর মাসুদুর রহমান মাসুদ, কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক শিহানুক, নগরের মধ্যম আশ্রাফপুরের নাজমুল ইসলাম শাওন, ছাত্রলীগ নেতা সালেহ আহম্মেদ রাসেল, অশোকতলার শাহ আলম খান, শাসনগাছার আবু হেনা, সাক্কু, ধর্মপুরের শহীদুল ইসলাম চপল, ফখরুল ইসলাম রুবেল, কাউন্সিলর গাজী গোলাম সরওয়ার শিপন, কুমিল্লার সদর দক্ষিনের শ্রীমন্তপুরের দুলাল হোসেন অপু, নেউয়ারার জাকির হোসেন, পাথুরিয়াপাড়ার প্রিতুল, শাকতলা মীর পুকুর পাড়ের রবিন, কালা মোস্তফা, অশোকতলার সাইফুল ইসলাম খোকন, শ্রীভল্লবপুরের মো. মেহেদী, পাঁচথুবির চেয়ারম্যান হাসান রাফি রাজু, শিমপুরের মনিরুজ্জামান মনির, ব্রাহ্মণপাড়ার ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান শরীফ, শিমপুরের নিতান্ত, শ্রীভল্লবপুরের আবদুল মালেক ভূঞা, খাইরুল হাসান, মো. হানিফ দুলাল, ঢুলিপাড়ার রাশেদুজ্জামান রাশেদ, শাসনগাছার জালাল, দক্ষিণ বিজয়পুরের মো. জাফর আহাম্মদ শিপন, মোস্তফাপুরের মুন্সীবাড়ির মো. হাসান, মনোহরপুরের মোখলেছুর রহমান, বাগিচাগাঁওয়ের শফিকুর রহমানের ছেলে বাপ্পি, দৌলতপুরের ছায়া বিতানের জালাল ওরফে পিচ্চি জালাল, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ সোহেল, দক্ষিণ চর্থার কাউসার আহমেদ খন্দকার ও আকাশ, মুন্সেফবাড়ির ফরহাদ উল্লাহ, লক্ষীনগরের কবির হোসেন, মো. জালাল, দিশাবন্দের গোলাম মোস্তফা, দুলাল মিয়া, জিয়াউর রহমান, সুজানগর চৌমুহনীর জালাল ও হানিফ।

এ মামলায় অজ্ঞাত ৪শ’ জনকে আসামি করা হয়। সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার কুমিল্লা-৬ (সদর) আসন থেকে ২০০৮ সাল থেকে নৌকার মনোনয়নে টানা ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার বড় মেয়ে ডা. সূচনা চলতি বছরের গত ৯ মার্চ কুসিক নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নগরীতে সাবেক এমপি বাহারের বাসভবন, তার মালিকানাধীন সোনালী স্কয়ার মার্কেট ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাংচুর, মালামাল লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করে। বর্তমানে সাবেক এমপি বাহার এবং তার কন্যা ডা. সূচনা ও দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে।




৪৯৩ উপজেলা চেয়ারম্যান অপসারণ

দেদেশের ৪৯৩ উপজেলা চেয়ারম্যানকে অপসারণ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। চেয়ারম্যানদের স্থলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) দায়িত্ব পালন করবেন।

রোববার (১৮ আগস্ট) স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে৷

উপসচিব মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের বলা হয়, অপসারণ করা চেয়ারম্যানদের স্থলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন।

এর আগে গত ১৬ আগস্ট সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে সরকার জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে।

একইভাবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণ করতে পারবে। একই সঙ্গে এগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।

এমন বিধান রেখে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ ’, ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ ’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’–এর খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।




৩২৩ পৌরসভার মেয়র অপসারণ

আওয়ামী সরকারের আমলে নির্বাচিত ৩২৩ পৌরসভার মেয়রকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। রোববার (১৮ আগস্ট) উপসচিব মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এর আগে ৪৯৫টি উপজেলার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ৫৩টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হয়। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের স্থলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের স্থলে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) দায়িত্ব পালন করবেন।

১৬ আগস্ট সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে সরকার জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে। একইভাবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণ করতে পারবে। একই সঙ্গে এগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।

এমন বিধান রেখে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ ’, ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ ’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’–এর খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

পরদিন ১৭ আগস্ট এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি।