বামনায় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল

বামনা( বরগুনা) প্রতিনিধিঃ
বামনায় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ওই সরকারের মন্ত্রী-সংসদ সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীদের বিচারের দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সারাদেশে ন্যায় বরগুনার বামনা উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন।

দুপুর ১২ টায় বামনা উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচি চলাকালীণ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বামনা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ রানা। অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন বামনা উপজেলা বিএনপির সিনিয়ার যুগ্ম আহবায়ক এনায়েত কবির হাওলাদার, বামনা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন হাওলাদারসহ বামনা উপজেলার বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বক্তারা বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের প্রেতাত্মারা এখন বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বিরাজমান, তারা যড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাদের এ যড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। এর আগে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন।




মেয়র-চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া যাবে

সরকার জনস্বার্থে ও বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে। একইভাবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণ করতে পারবে। এগুলোতে প্রশাসক নিয়োগও দিতে পারবে সরকার।

এমন বিধান রেখে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ ’, ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ ’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’–এর খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

শুক্রবার সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ তথ্য জানানো হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এসব তথ্য জানায় বলে তথ্য বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়।

প্রস্তাবিত ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ ’-এ দুটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই আইনের অন্যান্য বিধানে কিংবা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে। এ ছাড়া বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে কোনো সিটি করপোরেশনে নির্দিষ্ট মেয়াদ উল্লেখ করে অথবা পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে। প্রায় একই রকম বিধান যুক্ত করা হয়েছে প্রস্তাবিত ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, প্রস্তাবিত ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশে

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই আত্মগোপনে চলে গেছেন। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। পরে বিকল্প ব্যবস্থা করে সরকার। যেমন উপজেলা চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকলে দায়িত্ব পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।

সূত্রঃ বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি




যাচাই-বাছাই হবে, শাস্তি পাবেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে সুযোগ সুবিধা আদায়কারীদের রাষ্ট্রের সাথে প্রতারণার দায়ে শাস্তি পেতে হবে।

শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ফারুক-ই আজম বলেন, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নানান ভাবে নানান আঙ্গিকে হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে যাদেরকে সত্যিকার পাবো তারা থাকবে আর যাদেরকে পাবো না তারা থাকবে না, চলে যেতে হবে। রাষ্ট্রের সাথে প্রতারণার দায়ে তাদেরকে শাস্তিও পেতে হবে।

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় তা যাচাই-বাছাই করবে। এক দিনে বললে তো হবে না, এটা প্রক্রিয়াধীন।’

ব্রিফিং শেষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানা পরিদর্শন করেন। কথা বলেন পুলিশ সদস্যদের সাথেও।

এসময় ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে স্থানীয়দের সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।

এসময় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার ফখরুজ্জামানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।




পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনা-সেলিম ও তাপস সরাসরি জড়িত দাবি নিহতদের স্বজনদের

১৫ বছর আগে বিডিআর বিদ্রোহে রাজধানীর পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ সেলিম শেখ ফজলে নূর তাপসসহ অনেকে সরাসরি জড়িত ছিল বলে দাবি করেছেন নিহত মেজর শাকিলের ছেলে রাকিন আহমেদ।

শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার ৫০ দিনের মধ্যেই ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরদের একটি গ্রুপ দ্বারা বিদ্রোহ সংগঠিত হয়।

বিদ্রোহী বিডিআর সৈন্যরা পিলখানায় বিডিআর সদর দফতর দখল করে বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন অন্যান্য সেনা কর্মকর্তা ও ১৭ জন বেসামরিককে হত্যা করে। তারা বেসামরিক লোকদের ওপর গুলি চালিয়েছিল, তারা অনেক অফিসার এবং তাদের পরিবারকে জিম্মি করেছিল, স্থাপনা ও সম্পদ ভাঙচুর করেছিল এবং মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়েছিল। পরে সরকারের সঙ্গে একাধিক আলাপ-আলোচনার পরে বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণ করে এবং জিম্মিদের মুক্তি দেয়। অস্ত্র সমর্পণের মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে এই বিদ্রোহের অবসান ঘটে।

২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়; আরও ২৫ জন বিদ্রোহে জড়িত থাকার কারণে তিন থেকে দশ বছরের মধ্যে কারাদণ্ড পেয়েছিল। আদালত অভিযুক্ত ২৭৭ জনকেও খালাস দিয়েছিল।

১৫ বছর আগের ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ফজলে নূর তাপসসহ আরও অনেকে সরাসরি জড়িত ছিলে বলে রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ সেলিস
সংবাদ সম্মেলনে নিহত মেজর শাকিলের ছেলে রাকিন আহমেদ দাবি করেন, ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ডে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ফজলে নুর তাপস ও শেখ সেলিম সরাসরি জড়িত। এছাড়াও নেপথ্যে আরও রয়েছে। স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন হলে তাদের নামও আসবে।’

এ সময় নিহত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল শফিকের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিবুর বলেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম সেই সময় কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিটিতে ছিলেন। রিপোর্টটি প্রকাশ করেছেন সেটি তিন দফা সংশোধন করার পর মিডিয়ায় দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেই রিপোর্টের ‘র’ কপি প্রকাশের দাবি জানান।

এ সময় নিহতের পরিবাররা ২৫ ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর বিদ্রোহ না বলে বিডিআর হত্যাকাণ্ড বলার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেন।

নিহত পরিবারের সদস্যরা বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভারতের হাত রয়েছে। এছাড়া হত্যকাণ্ডের ঘটনায় ডাল-ভাত নিয়ে দ্বন্দ্বের যে কথা প্রচার করা হয় তা সত্য নয়। এ হত্যাকাণ্ডটিকে ভিন্নখাতে নিতেই এমন কথা প্রচার করা হয়েছিল




হাসিনা আমলে ‘সুবিধাভোগী’ বিএনপি নেতারাই সুরক্ষা কবচ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নানের

হাসিনা আমলে ‘সুবিধাভোগী’ বিএনপি নেতারাই সুরক্ষা কবচ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নানের
ছাত্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে স্বৈরাচার তকমা পাওয়া শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালানোর পর জায়গায় জায়গায় গণরোষে পড়েছেন তার সরকারের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে দলের নেতা, পাতি নেতারা। তবে সুনামগঞ্জ-৩ আসনের চার মেয়াদের এমপি (তিনবার বিতর্কিত ভোটে) ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের ওপর এই গণরোষের আঁচও লাগেনি। নির্বিঘ্নেই শান্তিগঞ্জের ‘হিজলবাড়িতে’ অবস্থান করেছেন তিনি।

জানা গেছে, ক্ষমতায় থাকাকালীন তার কাছ থেকে সুবিধা পাওয়া বিএনপির নেতারা এখন মান্নানের সুরক্ষা কবচ হয়ে আগলে রেখছেন। উল্টো সাবেক এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলায় নিজে দিলের কর্মী ও সাংবাদিককে মারধর করতেও দ্বিধা করেননি মান্নান আমলে ‘শান্তিতে’ থাকা বিএনপি নেতারা।

জানা যায়, বিএনপি একাংশের কাছে একইভাবে সুরক্ষা পাচ্ছেন মান্নানের ঘনিষ্ট সহযোগী দুই ভাই হাসনাত ও নূর হোসেন এবং তার ভাগ্নে জাবেদসহ অন্যরা। মন্ত্রীর মদদপুষ্ট হয়ে সুনামগঞ্জে দুর্নীতির বরপুত্র হয়ে ওঠা ভ্রাতৃদ্বয়কে ক্ষোভে সাধারণ মানুষ নাম দিয়েছিলেন ‘হাবিল-কাবিল’ হিসেবে। উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বখরা, টিআর-কাবিখা-কাবিটা ভাগ বসানো এবং হাওর বাঁধের ভাগবণ্টন সবখানেই হাত ছিল দুই সহোদরের। তাদের সহযোগী ছিলেন মন্ত্রীর ভাগ্না জাবেদ, ভাতিজা সুজন প্রমুখ।

বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দ্বিধাবিভক্ত। একাংশের নেতৃত্বে আছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ, অপর অংশের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনসার উদ্দিন। চলতি মেয়াদের আগের মেয়াদে উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন ফারুক। নির্বাচন করায় দল থেকে বহিষ্কার হলেও তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের ‘ফেভার’ পেয়ে পূর্ণ মেয়াদে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সে সময়ে সুবিধাভোগী বিএনপির সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ আমিনও রয়েছেন তার সুরক্ষায়।।

এর বিপরীতে শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির অপরাংশের নেতৃত্বে থাকা আনসার উদ্দিন ছিলেন মন্ত্রীর রোষানলে। সরকারবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রতিটি মামলায় আসামি করা হতো তাকে। কোমরে রশি বেঁধে নিয়ে যাওয়া হতো আদালতে।

সূত্র আরো জানায়, হাসিনার পদত্যাগের একদিন পর শান্তিগঞ্জে বিজয় মিছিলের আয়োজন করেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুকপন্থী বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করলেও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীর বাড়ির সম্মুখে বিএনপি নেতা জিলানীর নেতৃত্বে পাহারা বসান ছাত্রদলের নেতারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এই দৃশ্য দেখে বিক্ষুব্ধ এক ছাত্রদলকর্মী মান্নানের সমালোচনা করলে, উপস্থিত বিএনপি ও ছাত্রদল নেতারা তাকে মারধর শুরু করেন। এসময় ঘটনাস্থলের অদূরে থাকা সাংবাদিক শহীদনূর এগিয়ে গিয়ে মারধরের কারণ জানার পর বলেন, তিনি (মান্নান) তো আর ফেরেশতা ছিলেন না। এই মন্তব্য করতে না করতেই বিএনপির মিছিলে আসা মান্নানের শুভাকাঙ্ক্ষী ছাত্রদল-যুবদলের নেতারা তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

প্রসঙ্গত, শহীদনূর আহমেদ আরটিভি ও দৈনিক ‘সিলেটের ডাক’-এর সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি। ক্ষমতায় থাকাকালীন মান্নানের বিরুদ্ধে নানা ইস্যুতে সরব ছিলেন তিনি। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় সমর্থক ছিলেন।

পরে গুরুতর আহত শহীদনূরকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তির পর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নূরুলসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা হাসপাতালে তাকে দেখতে আসেন।

এ সময় নূরুল বলেন, দলীয় ব্যানার ব্যবহার করে কেউ স্বৈরাচারের দোসরদের রক্ষা করতে চাইলে তাদের চিহ্নিত করা হবে। আমরা সবার আমলনামা জানি। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বলেন, আমি মান্নান সাহেবের কোনো ফেবার পাইনি। যে অভিযোগ ওঠেছে সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বরং তিনি মন্ত্রী থাকাকালে তার লোকজনের কারণে দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়েছি।

জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনসার উদ্দিন বলেন, দলের ভেতরে কিছু মানুষ আছে যারা বিগত সরকারের কাছ থেকে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়েছে। এখন তাদের রক্ষা করে তার প্রতিদান দিচ্ছেন তারা। এটা দুঃখজনক।

মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের বক্তব্য এই প্রতিবেদনে সংযুক্ত করা সম্ভব হয়নি।




কিশোরগঞ্জে হারুনের শতকোটি টাকার ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়াসহ অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ উঠেছে। হারুন অর রশীদ কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে শত কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’ নামে অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল একটি প্রমোদাগার। হেলিপ্যাড ও অত্যাধুনিক সুইমিং পুলসহ কী নেই সেই রিসোর্টে। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও বিত্তশালীদের আনন্দ-ফুর্তির জন্য অত্যন্ত নিরাপদ স্থান হয়ে উঠেছিল হারুনের এই রিসোর্ট।

হারুনের নিজ গ্রামের ৪০ একরের বেশি আয়তনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের প্রিমিয়াম স্যুটের প্রতিদিনের ভাড়া ২০ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন ডিলাক্স রুমের ভাড়া প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা। রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তার ছোট ভাই ডা. শাহরিয়ার। ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রিসোর্টটি উদ্বোধন করা হয়।

প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে হারুনের পরিবারের মাত্র ৫ থেকে ৭ একর জমি থাকলে বাকি জমি নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দখল করেছেন তিনি। এ ছাড়া যেসব মালিক জমি বিক্রি করেছেন তারা প্রকৃত মূল্য পাননি। প্রকৃত মালিকদের কেউ ১০ লাখের মধ্যে ১ লাখ, কেউ ২০ লাখের মধ্যে ২ লাখ এই হারে টাকা পেয়েছেন। এখনও অন্তত ১০ থেকে ১২ জন দাম না পাওয়ায় তাদের জমি রেজিস্ট্রি করে দেননি।

হারুনের প্রতরণার শিকার হওয়া তাদের মধ্যের একজন মিঠামইন সদর ইউনিয়নের গিরীশপুর গ্রামের দিলীপ কুমার বণিক। তিনি বলেন, ‘হারুন রিসোর্টের কথা বলে তার এক একর ১০ শতাংশ জায়গা নিয়েছেন। জমির কোনো দরদামও নির্ধারণ করা হয়নি। আমাকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। অথচ জমির দাম হবে অন্তত ২০ লাখ টাকা। আমার মতো এমন অন্তত আরও ১২ জন রয়েছেন, যাদের নামমাত্র টাকা দিয়ে জমি নিয়ে গেছে হারুন।’

জনরোষে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলে সেদিন থেকেই হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে রিসোর্টে বুকিং চালু রয়েছে।

দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান হারুন ২০তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকরি পান। অথচ তার বাবা মো. হাসিদ ভূঁইয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় হারুন। দ্বিতীয় জিয়াউর রহমান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক। তৃতীয় জিল্লুর রহমান পুলিশের ইনস্টেকটর হিসাবে কর্মরত। এ ছাড়া হারুনের প্রতিষ্ঠিত বিলাসবহুল ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’-এর এমডি হিসাবে আছেন সবার ছোট শাহরিয়ার।

এমএইচ




সাবেক সচিবের বাসায় বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রা

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামালের বাসা থেকে ৩ কোটি ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৭২ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার মধ্যে ১০ লাখ ৩ হাজার ৩০৬ টাকার মূল্যমানের বিদেশি মুদ্রাও রয়েছে।

শুক্রবার দুপুরের পর থেকে কয়েক ঘণ্টা রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাবর রোডের এফ ব্লকের ২৯/২ ও ৩ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি টিম।

সন্ধ্যায় ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) ওবায়দুর রহমান এক ক্ষুদে বার্তায় এতথ্য জানান।

তিনি জানান, ২ ও ৫ টাকার নোট থেকে শুরু ১ হাজার টাকার নোট পাওয়া গেছে। সেখানে ৩ কোটি এক লাখ ১০ হাজার ১৬৬ টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা দামের ১০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং ১০ লাখ ৩ হাজার ৩০৬ টাকা মূল্যমানের বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে।

এরমধ্যে বিদেশি মুদ্রার মধ্যে ৩ হাজার ইউএস ডলার, ১৩২০ মালয়েশিয়ার রিঙ্গিত, ২৯৬৯ সৌদি রিয়াল, ৪১২২ সিঙ্গাপুর ডলার, ১৯১৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার, ৩৫ হাজার কোরিয়ান ইউয়ান ও ১৯৯ চায়না ইউয়ান পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৯ জুন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামালকে অবসরে পাঠায় সরকার।




ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের তথ্য জাতিসংঘের রিপোর্টে

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান

শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘অপ্রয়োজনীয়’ ও ‘মাত্রাতিরিক্ত’ বলপ্রয়োগ করেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) জেনেভা থেকে প্রকাশিত জাতিসংঘের ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও অস্থিরতা বিষয়ে প্রাথমিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা

প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এবং সহিংসতার ঘটনা মোকাবিলায় অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) ১০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন গতকাল শুক্রবার জেনেভা থেকে প্রকাশ করেছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। তিনি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে ৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত চলমান আন্দোলনে প্রায় ৪০০ জনের মৃত্যুর খবর এবং ৫ থেকে ৬ আগস্টের মধ্যে প্রায় ২৫০ জনের মৃত্যুর কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি মোকাবিলায় অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে বলে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অবৈধভাবে গ্রেপ্তার ও আটক, জোরপূর্বক গুম করা, নির্যাতন ও খারাপ আচরণ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গুরুতর বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঘটেছে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এ ঘটনায় আরও স্বাধীন তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং আরও প্রাণহানি, সহিংসতা ও প্রতিশোধমূলক কাজ বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।