জাহিদ শান্ত, লাকসাম (কুমিল্লা)
১৫ই নভেম্বর ২০২৫, শনিবার, কুমিল্লা জেলাধীন লালমাই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শাকেরা রজব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণজুড়ে সেদিন তৈরি হয়েছিল এক আবেগঘন পরিবেশ। বিদ্যালয়ের দুই সম্মানিত সিনিয়র শিক্ষক—জনাব ইব্রাহিম খলিল ও জনাব পবিত্র কুমার সাহা—এর অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান যেন পরিণত হয়েছিল এক স্মৃতিছোঁয়া মিলনমেলায়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সহ সকলের চোখেমুখে ছিল শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও গভীর কৃতজ্ঞতার ছাপ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিদায়ী দুই শিক্ষককে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেয় বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষকদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকেই আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। তাদের কণ্ঠে শোনা গেছে আপনজন হারানোর ব্যথা, আবার গর্বও—কারণ তারা পেয়েছিলেন এমন দুই নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষককে।
উক্ত অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জনাব ছরওয়ারে আলম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী শিক্ষক জনাব ইব্রাহিম খলিল ও জনাব পবিত্র কুমার সাহা, সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক জনাব হুমায়ুন কবির, সাবেক ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মোতালেব, বর্তমান প্রধান শিক্ষক জনাব আহাম্মদ উল্যাহ'সহ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা, সাবেক ও বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানে কোরআন তিলাওয়াত করেন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসান এবং গীতাপাঠ করেন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রেমা। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাছপিয়া ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাদিম। শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব আহাম্মদ উল্যাহ, সহকারী প্রধান শিক্ষক জনাব আবুল হাসেম।
সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেন—এম ওয়াহিদ মজুমদার, মোঃ মিজানুর রহমান, মাইন উদ্দিন মহিন, মোঃ শফিকুর রহমান ও ইব্রাহিম খলিল ইমন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী শিক্ষক জনাব ইব্রাহিম খলিলের ভাতিজা, বাংলাভিশনের সংবাদ উপস্থাপক আলমগীর হোসেন, সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক জনাব হুমায়ুন কবির ও মাওলানা আব্দুল মোতালেব।
অনুষ্ঠানের একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক জনাব আহাম্মদ উল্যাহ'র উপস্থিতি। তিনি নিজেও এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। প্রিয় শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তিনি মূল মঞ্চে না বসে শিক্ষার্থীদের কাতারে বসেন—যা উপস্থিত সবার প্রশংসা কুড়ায়।
সভা শেষে বিদায়ী শিক্ষকদের হাতে ফুলের তোড়া, ক্রেস্ট, উপহার ও নগদ অর্থ তুলে দেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। এ যেন ছিল তাদের দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতীক।
সবশেষে বিদায়ী দুই শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি পর্যন্ত দুটি সুসজ্জিত প্রাইভেট কার ও শিক্ষার্থীদের বাইক শোডাউনের মাধ্যমে সম্মান জানিয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়। আর সেই মুহূর্তটিও ছিল অত্যন্ত আবেগময়—কারণ বক্তব্য প্রদানের সময় বিদ্যালয়প্রেমে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েছিলেন দুই শিক্ষকই। তাদের অশ্রু যেন প্রমাণ করে গেল, একটি বিদ্যালয় কেবল শিক্ষালয় নয়—এটি মানুষের হৃদয়ের সঙ্গে গেঁথে থাকা এক অনুভূতির জায়গা।
দিনের শেষে স্মরণীয় হয়ে রইল একটাই বার্তা—
ভালো শিক্ষক কখনো অবসর নেন না; তারা শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে চিরদিন বেঁচে থাকেন।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সেলিম চৌধুরী হীরা কর্তৃক সম্পাদিত৷ https://www.dhurbar.com, ০১৯৭১-১০১৪২৯
Copyright © 2025 . All rights reserved.