জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাবিত সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোট নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আবারও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। কেউ এটিকে একটি সংকট নিরসনের পথ হিসেবে দেখলেও, কেউ কেউ মনে করছেন, এটি নির্বাচন বিলম্বিত করার কৌশল এবং নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে এই বিভাজন প্রকাশ্যে আসে। সেখানে বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি ‘কনস্টিটিউশন অর্ডার’ বা সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদের ২২ দফা বাস্তবায়ন করতে পারে। এই আদেশ সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হলেও, পরবর্তী নির্বাচনের দিন গণভোটের মাধ্যমে তা জনগণের অনুমোদন পেলে সেটি রেট্রোস্পেকটিভলি (পূর্বপ্রভাবসহ) বৈধতা পাবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া
এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি):
যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘আমরা সংবিধানের ১০৬ ধারা নয়, গণপরিষদ নির্বাচন চাই। সেই নির্বাচন এই সরকারের অধীনেই হতে হবে।’
এবি পার্টি:
সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের প্রস্তাব আমরা ইতিবাচকভাবে দেখি। তবে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতের সরকার তা বাস্তবায়ন করবে কি না, সন্দেহ থেকেই যাবে।’
এলডিপি:
মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ বলেন, ‘জুলাই সনদের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদ সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়নি। এ বিষয়ে নতুন কোনো আদেশ নয়, নির্বাচনই হোক আমাদের অগ্রাধিকার।’
গণঅধিকার পরিষদ:
সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘সরকার নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে দলগুলোর ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। এতে বিভাজন বাড়ছে। গণভোটে যদি জনগণ সনদের বিপক্ষে রায় দেয়, তখন কী হবে?’
গণসংহতি আন্দোলন:
প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘২২ ও ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদের মধ্যে সাংঘর্ষিকতা রয়েছে। সরকার ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধ্যাদেশ আনতে পারে, তবে যেন সেটি কর্তৃত্ববাদী না মনে হয়, তা দেখতে হবে।’
জেএসডি:
সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আইনি ভিত্তি ছাড়া বাস্তবায়ন কঠিন। ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। তবে যেকোনো সুরক্ষার উপায়কে আমরা সমর্থন করি।’
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম:
মহাসচিব মঞ্জুররুল ইসলাম আফেন্দি বলেন, ‘সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরবর্তী সংসদে পাস করাতে হবে। গণভোট বরং জটিলতা বাড়াবে।’
বাসদ (মার্কসবাদী):
সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, ‘গণভোট সংবিধানে নেই। আমরা সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে, তবে এমনভাবে করতে হবে যাতে আইনি চ্যালেঞ্জ না আসে।’
ভাসানী জনশক্তি পার্টি:
মহাসচিব আবু ইউসুফ সেলিম বলেন, ‘২২ ও ২৫ অনুচ্ছেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে পরবর্তী সংসদে কার্যকর করতে হবে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সেলিম চৌধুরী হীরা কর্তৃক সম্পাদিত৷ https://www.dhurbar.com, ০১৯৭১-১০১৪২৯
Copyright © 2025 . All rights reserved.